কাফি আনোয়ার:
কক্সবাজার জেলার বৃহত্তম বাণিজ্যিক উপশহর ঈদগাঁওবাজার পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনী কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে অনিয়ম,স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ওই কার্যক্রমকে নিয়মবর্হিভতু,অগণতান্ত্রিক ও ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক বলে অভিযোগ করছে ।

এ নিয়ে ঈদগাঁওবাজারের ব্যবসায়ীমহল ও বাজারের উপর নির্ভরশীল বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের মাঝে বিরাজ করছে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ । সৃষ্টি হয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া।

জানা গেছে, ঈদগাঁওবাজার পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন সংক্রান্ত প্রচারপত্র, ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম,নির্বাচনী রুপরেখা প্রণয়ন, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ’সহ সবক্ষেত্রেই অদক্ষতা,স্বেচ্ছাচারিতা ও অগণতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে।

পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সাবেক সদস্যের মতে, ঈদগাঁওবাজার পরিচালনা পরিষদ নির্বাচনের এখতিয়ার ওই নামসর্বস্ব নির্বাচন কমিশনের নেই । এই নির্বাচন সম্পর্কে জেলা প্রশাসন কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কেউ জানে না। ঈদগাঁও বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীদেরও কোন প্রকার মতামত নেয়া হয়নি। কীসের অনুবলে ওই নির্বাচন এ প্রশ্ন সবার।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, যাদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে তাদের অনেকের নামেই রয়েছে একাধিক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ। অব্যবসায়ী, অবৈধ দখলদার ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও কেউ সদুত্তর দিতে পারছেনা ।

গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান জসীম উল্লাহ মিয়াজী ও অপর ৪ কমিশনার বজল আহমদ , রাজিবুল হক চৌধুরী রিকু ,শওকত আলম, তারেক আজিজ স্বাক্ষরিত ভোটার নিবন্ধন সংক্রান্ত প্রচারপত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের লোগো বা মনোগ্রাম (প্রতীক ) ব্যবহার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কপি রাইট আইন ২০০০ অনুসারে যা সম্পূর্ণ এখতিয়ার বর্হিভুত ও আইনগতভাবে দ-নীয় ফৌজদারী অপরাধ ।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য বজল আহমদ’কে প্রশ্ন করা হলে তিনি দৈনিক বাঁকখালী বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের লোগো ব্যবহার হয়েছে কিনা তার জানা নেই। যদি ওই অভিযোগ সত্য হলে তা পরবর্তী সভায় সংশোধন করা হবে। তিনি আরো বলেন , গঠিত নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদন রয়েছে।

বিশ্বস্তসুত্রমতে, ওই নির্বাচন কমিশনের অধিকাংশ সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ । তন্মধ্যে শওকত আলম ও বজল আহমদ বি এন পি ঘরনার রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকলেও এদের কোন ব্যবসায়ী পরিচয় বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নেই। অপর দুই সদস্য রাজিবুল হক চৌধুরী রিকু ও তারেক আজিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও রাজনৈতিক ও পেশাগত ব্যস্ততার কারণে কমিশনে অনেকটা নিশ্চিয়। অপর একজন সদস্য অবৈধভাবে সরকারী জমি দখল করে বহুতলভবণ নির্মাণের অভিযোগে তালিকাভুক্ত দখলদার।

সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দোকানে বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গিয়ে যাচাই বাছাই করে ভোটার করার বদলে অফিসে বসে ফরম বিক্রি করতেই বেশি মনোযোগী নির্বাচন কমিশন ।

জান গেছে, ভোটার নিবন্ধনের নামে নিয়ম বহির্ভুতভাবে ১’শ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে ইতোমধ্যে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। এ নিয়ে ব্যবসায়ীমহলে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, ভোটার হতে টাকা লাগে এটা দুনিয়ার কোন দেশেই নেই। ঈদগাঁও বাজার এখন মগের মুল্লুক । যার যেমন ইচ্ছা তেমন ভাবে চলছে। অনেকটা অন্ধের দেশে কানা রাজার মত অবস্থা ।

ঈদগাঁওবাজারের কয়েকজন স্বনামধন্য ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৪-২০১৪ সাল পর্যন্ত বৃহত্তম এই বাজারটি পরিচালনার জন্য কোন ব্যবস্থাপনা কমিটি বা পরিষদ ছিলনা। এসময়ে ঈদগাঁওবাজারের জনদুর্ভোগ, অব্যবস্থাপনা, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, যানজট’সহ নানাবিদ অনিয়ম ও অরাজকতার স্বর্গরাজ্য পরিণত হয়।

২০১৪ সালের জুলাই মাসে রামু-কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সওয়ার কমলের ব্যক্তি উদ্যোগে গঠিত প্রেসক্রিপশন কমিটিকে ঈদগাঁওবাজার পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হলেও দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অভাবে সেই উদ্যোগও বুমেরাং হয়েছে ।

অভিযোগ আছে ওই প্রেসক্রিপশন কমিটিতে রাজনৈতিক মিশ্রন, গোষ্ঠীগত মিশ্রন,অঞ্চলভিত্তিক মিশ্রণে সৎ , দক্ষ ও প্রকৃত ব্যবসায়ীরা অবহেলার শিকার হন। যেকারণে ওই জগাখিচুড়ীমার্কা কমিটি খয়ের খাঁ হয়ে পার করেছে গত ৩ বছর।

ফলে ঈদগাঁওবাজারের উন্নয়ন তো দুরের কথা , বিরাজমান সমস্যা ও সংকটগুলিই ক্রমাগতভাবে ঘণীভূত হয়েছে ।

সেই ব্যর্থতা ঢাকতে নিয়মতান্ত্রিকতা বা গঠনতান্ত্রিকতার তোয়াক্কা না করে , সাধারণ ব্যবসায়ীদের সাথে কোন প্রকার সংলাপ বা সাধারণসভা না করেই গোপন বৈঠকের মাধ্যমে নিজেদের মত করে তড়িগড়ি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আর এই কমিশন দায়িত্ব নিয়েই একের পর এক বির্তক সৃষ্টি করছে।

ঈদগাঁওবাজার পরিচালনা পরিষদ কীভাবে চলে বা এর কোন গঠনতন্ত্র বা প্রবিধান আছে কিনা এমন এক প্রশ্নে কমিটির সাবেক সভাপতি সিরাজুল হক জানান, ঈদগাঁওবাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদের কোন গঠনতন্ত্র বা সংবিধান নেই। নির্বাচন কমিশন যা করছে সবই তাদের ইচ্ছা মাফিক। ভোটার হওয়ার জন্য দুনিয়ার কোথাও কোন টাকা নেয়ার নজির না থাকলেও এক্ষেত্রে কেন নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করতে বলেন ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদগাঁওবাজার পরিচালনা পরিষদের নির্বাচন সম্পর্কে তার কোন কিছু জানা নেই । এ বিষয়ে কেউ তাকে কোন কিছু অবহিতও করেনি ।

ঈদগাঁও বাজার পার্শ্ববর্তী ৩টি স্থানীয় সরকার পরিষদের আওতাভুক্ত হলেও নির্বাচন সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের কোন চেয়ারম্যান এ সম্পর্কে কিছু জানেন না।

গত ২৩ মে ঈদগাহ পৌরসভা বাস্তবায়ন আন্দোলনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ঈদগাঁওবাজার বিরাজমান সমস্যা ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বাজারের নির্বাচন বিষয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং কার্যকর বাজার পরিচালনা কমিটি গঠনে ব্যবসায়ীদের সক্রিয় ও স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জরুরী বলে মত দেন। ওই নির্বাচনে ৪ দফা দাবী বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন । তন্মধ্যে রয়েছে ১) পুরো বাজার এলাকাকে ৯ (নয়)টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করে ওয়ার্ডভিত্তিক ১জন করে প্রতিনিধি নির্বাচন করা ২) প্রত্যক্ষ ভোটে বাজার পরিচালনা বোর্ডের ১জন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা ৩) কোন দুর্নীতিবাজ, দখলবাজ , হু-ি ব্যবসায়ী, অব্যবসায়ী, ফৌজদারী মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী,রাষ্ট্রদ্রোহী, মাদক ব্যবসায়ী , মানবপাচারকারী, ঋণখেলাপী, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী , অবৈধ ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, এবং ঈদগাঁওবাজার এলাকা থেকে ৩ কিলোমিটারের বেশি দুরত্বে বসবাসকারীদের নির্বাচনে কিংবা নেতৃত্ব প্রদানে অযোগ্য ঘোষনা করা ।

৪) তথাকথিত নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধিকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশনার পুনর্গঠন করা এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে সম্পৃক্ত করা।

৫) ঈদগাঁওবাজার পরিচালনা বোর্ড এর গঠনতন্ত্র বা প্রবিধানমালা প্রণয়ন করে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা।

অবিলম্বে বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম বন্ধ করে সুষ্ঠু, পরিকল্পিত ও কার্যকর ঈদগাঁওবাজার পরিচালনা বোর্ড গঠনে গ্রহনযোগ্য ও সমন্বিত নির্বাচনী রূপরেখা প্রণয়নের দাবী সর্বমহলের ।