বার্তা পরিবেশক:

টেকনাফের ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত হয়েছে মুরগির ফার্ম থেকে বায়ূ গ্যাস প্লান্ট। বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার কোন টেকনিক্যাল সুযোগ না থাকায় নিরুপায় হয়ে কাজে লাগানো ছাড়াই জ্বালিয়ে ফেলতে হচ্ছে। এ গ্যাস ব্যবহার উপযোগী করা, ভু-গর্ভস্থ লাইন টানা, ফিলিং স্টেশন তৈরী, সংযোগ সড়ক উন্নয়ন, প্রেসার যন্ত্র স্থাপন ইত্যাদি এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। কিছুতেই আমি পিছপা হবনা। সফল আমি হবই ইনশাআল্লাহ। এখানে উৎপাদিত গ্যাস গাড়ি, রান্না, বোতলজাত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কারখানায় ব্যবহারের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের অপার সুযোগ সৃষ্টি হবে। টেকনাফ তথা দেশবাসীর জন্য উপকারী কিছু করতে পেরে সত্যি আমি গর্বিত, আমি চরমভাবে খুশী। বাহবা কুড়ানোর জন্য বা পুরস্কার লাভের আশায় আমি এ কাজ করিনি। সরকারী-বেসরকারী কোন উৎসাহ-উদ্দীপনা ছাড়াই দেশের মানুষের উপকার করার আশা নিয়ে এবং কর্মসংস্থার সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশাল এ কাজ বাস্তবায়নে নেমেছি। সরকারী-বেসরকারী সহযোগিতা পেলে এগিয়ে যাবে অনেকদূর। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান, দূরহবে বেকারত্ব। অনেক কিছুরই প্রয়োজন, তবে আমি চাইব সর্বমহলের আন্তরিক সহযোগিতা’।

উদ্যোক্তা কবির আহমদের দাবি এটি দেশের সর্ববৃহৎ বায়ূ গ্যাস প্লান্ট। টেকনাফে এটাই সর্বপ্রথম মুরগির বিষ্ঠা থেকে বায়ু গ্যাস প্লান্ট এবং সারা দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ। এমনকি পাশ্ববর্তী অন্য কোন দেশেও এত বড় মুরগির ফার্ম থেকে বায়ূ গ্যাস প্লান্ট নেই। ব্যতিক্রমধর্মী এ প্লান্ট স্থাপনে এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। এতে প্রতিদিনই তৈরী হচ্ছে ৫ হাজার ঘনমিটার বায়ু গ্যাস। কিন্ত দুঃখের বিষয় হলো বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার কোন টেকনিক্যাল সুযোগ না থাকায় নিরুপায় হয়ে কাজে লাগানো ছাড়াই জ্বালিয়ে ফেলতে হচ্ছে।

জানা গেছে, সরকারী পৃষ্টপোষকতা, সরকারী আর্থিক যোগান ও ভুমিকা নেই। ব্যাংক ঋণ বা কর্জ নয়, বিনিয়োগের পুরো টাকাই ‘সাগর পোল্ট্রি ফার্ম’ নামে নিজস্ব ফার্ম থেকে উপার্জিত। রীতিমত তাক লাগানোর মতো ব্যাপার হলেও প্রচার বিমুখ কবির আহমদ (৪৬) নীরবে-নিভৃত্তেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি এ দীর্ঘ সময়ে কোন মিডিয়াকর্মীর মুখোমুখীও হননি। প্রশাসনও জানেনা। তাঁর নিজ ভাষায় সফলকামও হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেছেন। গত কয়েকদিন আগে পরিক্ষামুলক মুরগির ফার্ম থেকে উৎপাদিত বায়ূ গ্যাস প্লান্টটি চালু করে আতœবিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। এখন ৪ ইঞ্চি ডায়া বিশিষ্ট পাইপ দিয়ে সারা রাত পুরো এলাকা আলোকিত করে প্রকট শব্দে গ্যাস জ্বলে। বিশাল আকৃতির আগুনের কুন্ডলির লেলিহান শিখার প্রজ্জলণ আশেপাশের মানুষ মুগ্ধ নয়নে দেখে। টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার কোন সুযোগ না থাকায় নিরুপায় হয়ে জ্বালিয়ে ফেলতে হচ্ছে। সরকারী সহযোগিতা এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট পেলে এ প্লান্টে উৎপাদিত গ্যাস গাড়ি, রান্না, বোতলজাত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কারখানায় ব্যবহারের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উদ্যোক্তা কবির আহমদ।

শহরে বা নগরীতে ও ধনী-ঋণী হলে কথা ছিল, টেকনাফের মতো অনগ্রসর অঁজ-পাড়া-গাঁয়ে তাও আবার প্রাতিষ্টানিক স্বল্প শিক্ষিত কায়িক পরিশ্রমী ব্যক্তির কাছে এমন অসাধ্য সাধন বিরল ঘটনা।

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের একটি গ্রাম মহেশখালীয়াপাড়া। উপজেলা প্রাণকেন্দ্র থেকে ‘সাগর পোল্ট্রি ফার্ম’ পৌঁছতে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল। খুইল্যা মিয়া ও ধলা বানুর ৫ ছেলে ৪ মেয়ের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী এ প্লান্ট এর উদ্যোক্তা কবির আহমদ ২য় সন্তান। খবর পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে কবির আহমদ বলেন, ‘ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ১৯৯৫ সালে সউদি আরব গিয়ে ১০ বছর বিদেশ কাটিয়ে ২০০৫ সালে দেশে চলে আসি। বিদেশে অবস্থান কালেও ব্যতিক্রমধর্মী কিছু একটা করার পরিকল্পনা মাথায় ঘুরপাক খেত। দেশে এসে বিয়ে করার পর ২০০৭ সালে নিজস্ব জমিতে স্বল্প পরিসরে মাত্র ২০ লক্ষ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে ২ হাজার লেয়ার এবং ১০ হাজার ব্রয়লার মুরগি নিয়ে ফার্ম শুরু করি। ক্রমান্বয়ে তা বাড়িয়ে প্রায় ৮ একর নিজস্ব জমিতে বর্তমানে ১০টি বিশালাকার ফার্মে ৪৫ হাজার শুধু লেয়ার মুরগি রয়েছে। লেয়ার মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি জৈব সারে পরিণত হয়না। কোথাও ব্যবহার করা যায়না। দুর্গন্ধও বেশী। প্রতিদিনই জমা হচ্ছিল টন টন বিষ্ঠা। মুরগির বিষ্ঠা ফেলার জন্য বড় আকারের আলাদা জমি বরাদ্দ করতে হয়েছিল। এই বিষ্ঠা দিয়ে উপকারী কিছু করা যায় কিনা তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলতে থাকে। মাথায় আসে বায়ু গ্যাস প্লান্টের কথা। কয়েকজন বন্ধুর সাথে এনিয়ে পরামর্শ করে ২০১৩ সালে খোঁজ নিয়ে রাজশাহী, ফেণী, বান্দরবান, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর করে বায়ু গ্যাসের প্লান্টসমুহ পরিদর্শন ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করি। পাশাপাশি রাজশাহীর মাসুম এবং ফেণীর জসিম উদ্দিন নামে ২জন ইঞ্জিনিয়ারের সাথে আলাপ, প্রাক্কলন তৈরী ও বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বিদেশে ও দেশে লব্ধ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকে বায়ু গ্যাস প্লান্টের কাজ শুরু করি। রামু এবং চট্রগ্রামের ২জন মিস্ত্রি এবং নিয়মিত ২০ জন শ্রমিক দিয়ে একাধারে ৩বছর আনুষাঙ্গিক যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে আজকের অবস্থানে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছি। ৬০ ফুট গভীরতা এবং ৬০ ফুট ডায়া বিশিষ্ট বায়ু গ্যাস প্লান্টটির গ্যাস চেম্বার ১২ ফুট। ইঞ্জিনিয়ারের হিসাব মতে এতে প্রতিদিনই উৎপাদিত হচ্ছে ৫ হাজার ঘনমিটার বায়ু গ্যাস।