আতিকুর রহমান মানিক :

অনিশ্চিত জীবন ছেড়ে নিজদেশে ফিরে যেতে চায় অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা। বাড়ীঘর, সহায়-সম্পদ ও জন্মভূমি ছেড়ে পরদেশে সাহায্য নির্ভর মানবেতর জীবন যাপন করার চেয়ে নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে নিজদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য বিশ্ববাসীর কাছে আকুতি জানিয়েছেন তারা। “রোহিঙ্গা অধিকার প্রতিষ্ঠা কমিটি” নামে রোহিঙ্গাদের একটি সংগঠন সম্প্রতি উপরোক্ত লক্ষ্যে ২১ দফা দাবী সম্বলিত পিভিসি সাইনবোর্ড লাগিয়েছে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেয়া বিভিন্ন পয়েন্টে।
উখিয়া উপজেলার কুতুপালং, বালুখালী, জামতলী, থাইনখালী ও টেকনাফ উপজেলার লেদা পয়েন্টে রোহিঙ্গা ক্যাম্প অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় স্হাপিত শতাধিক এরকম পিভিসি সাইনবোর্ডে বাংলা ও ইংরেজীতে ২১ দফা দাবী উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায় ও মায়ানমার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে এতে উল্লেখিত বিষয়গুলো হল,
রোহিঙ্গা জনগণকে বাধ্যতামূলক নাগরিক অধিকার প্রদান ও মায়ানমার সরকার কর্তৃক কোন শর্ত না দিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আগে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, রোহিঙ্গাদের যে সব বসতবাড়ী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ মিয়ানমারকর্তৃক সরকারীভাবে দেয়া, রোহিঙ্গাদের সকল শিক্ষার অধিকার দেয়া, রোহিঙ্গাদের বাড়ি ঘরের জমি জমা কোন শর্ত ছাড়া কাগজে কলমে ফেরত দেয়া, রোহিঙ্গাদের আবাসভূমির পুরনো নাম আরাকান এস্টেট করা, মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে ব্যবসা বানিজ্যের অধিকার এবং ব্যবসা বাণিজ্যের মালামালের নিরাপত্তা প্রদান, আরাকান প্রদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা বিচার ব্যবস্থা ও রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে বিচারক নিয়োগ প্রদান, মায়ানমারে কারাবন্দী রোহিঙ্গাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও এবং আরকান প্রদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা কারাগার স্হাপন, রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা মুসলিম মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, যে কোন এনজিও এবং দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদেরকে আরাকানে প্রবেশ করার অধিকার দেওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব টিভি চ্যানেল সম্প্রচারে কোন বাধা না দেয়া, আরাকান প্রদেশের অস্ত্রধারী বৌদ্ধদের নিরস্ত্রীকরন, রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও যুবকদের উপর সংঘঠিত গণহত্যা ও ধর্ষণেরর বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে করা, রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি থানায় থানায় ও আই সি’র পর্যবেক্ষন কেন্দ্র ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের সেনা
মোতায়েন, রোহিঙ্গাদের মসজিদ মাদ্রাসা, মকতব ও তাবলীগের মরকজ সহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্টানে নিরাপত্তা দেয়া,
রোহিঙ্গাদের সকল সরকারী চাকরী দেয়া, পুরো আরাকানে ও বার্মার যে কোন জায়গায় রোহিঙ্গাদের চলাফেরা করার অধিকার দেয়া, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পাসপোর্ট প্রদান ও বিদেশ গমনের সুযোগ দেয়া, কোন মামলা ছাড়া সেনা, পুলিশ সহ কোন বাহিনী অনর্থক রোহিঙ্গাদের বাড়ি ঘরে চেকের নামে না ঢোকা, রোহিঙ্গা আলেম-ওলামাদেরকে পাঞ্জাবী পায়জামা টুপি পরনে বাধা না দেওয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় কাজে বাধা না দেয়া ও গবাদী পশু, হাস মুরগী পালনে কোন ক্ষতিপূরণ না নেয়া।
বিগত কয়েকদিন ধরে উপরোক্ত দাবী দাওয়া সম্বলিত সাইনবোর্ড বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা যাচ্ছে। কুতুপালং এলাকায় অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা আবদুল আমীন বলেন, নিজদেশে মায়ানমারের বুচিঢং এলাকায় বেশ সচ্ছলভাবে জীবন যাপন করতেন তারা। সকালে গিয়ে নিজস্ব দোকানে বসতেন, ব্যবসা করতেন। আর এখন সকালে উঠে ত্রানের জন্য লাইন ধরতে হচ্ছে। মায়ানমারের টমবাজার এলাকা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা তৈয়ুব বলেন, বাপ দাদার বসত ভিটা ও বিশাল বাড়ী ছেড়ে এখানে এসে পলিথিনের ছাউনিতে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। অপর দুই রোহিঙ্গা নজির হোসেন ও জামাল বলেন,আত্নীয় স্বজন ও সহায় সম্পদ হারালেও তারা নিজদেশে ফিরে গিয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চান। তবে উপরোক্ত “রোহিঙ্গা অধিকার প্রতিষ্টা কমিটি”র অফিস ও নেতৃবৃন্দের খোঁজ দিতে পারেননি কেউ।