জসিম মাহমুদ, টেকনাফ:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থেকে ছোট ছোট নৌকায় করে রাতের আধাঁরে নাফনদী অতিক্রম করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে এখন পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা।
শাহ পরীর দ্বীপ বাসিন্দা মাষ্টার জাহেদ হোসেন বলেন হঠাৎ করে এখন রাতের আধাঁরে ছোট ছোট নৌকায় করে মিয়ানমারের মংডু শহরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে নারী, পুরুষ ও শিশুরা পালিয়ে আসছেন। এখন যারা আসছেন তারা কোন না কোন মালামালও সঙ্গে করে নিয়ে আসছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গারা সঙ্গে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে আসছে।
শাহপরীর দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, রোহিঙ্গারা প্রথম দিকে দিনের বেলায় ছিল। কিন্তু এখন রাতের আধাঁরে নাফনদী অতিক্রম করে রোহিঙ্গারা আসছে। ছোট ছোট নৌকায় করে সন্ধ্যার পর পর রোহিঙ্গা আসার হিড়িক পড়েছে।
সরেজমিনে সোমবার দিবাগত রাত সাতটা ৪১মিনিটে শাহপরীর দ্বীপ জেটির পূর্ব পাশে একটি ছোট নৌকায় করে ২১জন নারী,পুরুষ ও শিশু নিয়ে কাঠের তৈরী নৌকা কূলে ভিড়ানো হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন নারী ও শিশুর কান্না দূর থেকে ভেসে আসে। তখন চারজন বিজিবির সদস্য ও দুইজন সাংবাদিক একটু সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভয়ে কাঁপছে শিশু ও নারীরা। এরমধ্যে নৌকা আরও সাতটি নৌকা এসে হাজির হয়। ওই নৌকাগুলোকে ৩০-৫০জন রোহিঙ্গা রয়েছে। এভাবে রাত ১১টা পর্যন্ত ৪৭ টি নৌকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। ওই সময় দেশের বিভিন্ন স্থান আসা কিছু লোকজন তাদের নৌকা থেকে নামিয়ে আনতে দেখা যায়। পরে তাদের বেড়িবাঁধের উপর জড়ো করা হয়। পরে সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় শাহপরীর দ্বীপ দারুল উলুম মাদ্রাসায়। সেখানে বিভিন্ন কক্ষে তাদের নারী ও পুরুষকে ভাগ করে রাখা হয়। একটি গরু জবাই করা হয় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য। পরে রাতভর চলে রান্নার কাজ। সকালে রোহিঙ্গাদের প্যাকেট করে প্রতিজনের হাতে দেওয়া হয় খাবার। এসময় কিছু লোক রোহিঙ্গাদের হাতে টাকা দিতে দেখা যায়। রোহিঙ্গারা টেকনাফে উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার জন্য দলে দলে ছুঁটছে।
নৌকার মাঝি রহমত উল্লাহ জানান, তার বাড়ি মিয়ানমার রোংপুল এলাকায়। তিনি প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের নৌকা করে নাফনদী পারাপার করেন। মিয়ানমার পুলিশ (বিজিপি) তাদেরকে কিছু করেনা । প্রয়োজনে তারা প্রতি টিপে ৫০ হাজার কিয়েট দিয়ে থাকে। তাদের ওপার থেকে এপারে আসতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে।
তিনি আরও বলেন, মংডু থেকে বুচিডংয়ের দহৃরত্ব ২০ কিলোমিটারের মতো। সেখানে ৩২০টির মতো গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাস। আগ¯েদ্বর শেষের দিক থেকে রোহিঙ্গাদের চলে আসা শুরু হলেও টিকে থাকার চেষ্টা করেছিল যারা তাদেরও এখন চলে আসতে হচ্ছে। কেননা গত এক মাস ধরে এলাকার লোকজনকে চলাফেলা করতে দিচ্ছে না। ফলে সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
মিয়ানমারের মংডুর কলিজা ভাঙ্গা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নবী হোসেন, আজিজুল রহমান ও আহমদ আলী বলেন, আমাদের মারবেন না। জীবন বাচাঁতে এখানে পালিয়ে এসেছি। সেনাবাহিনী আমাদের বাড়িঘর পুঁড়িয়ে দিয়েছে। গ্রামে কোন রোহিঙ্গাদের থাকাতে দিচ্ছে না। ভালো কাঠের তৈরি ঘরগুলো দখল করে নিচ্ছে। দিনের বেলায় প্যারাবনে পাশে নৌকার মাঝিদের ঘরে অবস্থান নিতে হচ্ছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা ধান খেতে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যার পর নৌকায় করে নাফনদী পাড়ি দিতে হচ্ছে রাতের আধাঁরে। এমন সময় নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটলে প্রচুর লোক মারা যাবে।
তারা আরও বলেন, সেনা সদস্যরা মুসলিমদের ঘরবাড়ি দখল করছে। এসব থেকে রক্ষা পেতে অনেক ব্যবসায়ী বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। পালিয়ে আসা ব্যবসায়ীদের গরু-শুটকি,আচারসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বাড়ি রক্ষা করতে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে ১৩ কোটি কিয়েট দিতে হয়েছে। এরপর কি হবে আর জানি না।
সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোররাত পর্যন্ত নাফনদী অতিক্রম করে প্রায় সাড়ে চার হাজারের মতো রোহিঙ্গা এসেছে।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা ছোট ছোট দলে নৌকায় করে রাতের আধাঁরে নাফনদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।