আবদুল আজিজ, বাংলাট্রিবিউন, কক্সবাজার:
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের পথ পরিবর্তন করেছে রোহিঙ্গারা। এখন আসছে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে। নৌকায় করে প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা শাহপরীর দ্বীপে আসছে। গত চার দিনে প্রায় সাড়ে ৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ ও শিশু এসেছে বাংলাদেশে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়াখালী ও মাথাভাঙ্গা এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নৌপথে হাজার হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ করছে। মিয়ানমার থেকে নৌকায় করে শাহপরীর দ্বীপ জেটি হয়ে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গরা। এরপর তারা ফের নৌকায় করে টেকনাফে যাচ্ছে। টেকনাফের প্রবেশদ্বার মাথাভাঙ্গা এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসব রোহিঙ্গাদের তথ্য নিচ্ছে। এরপর তাদের হারিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জড়ো করছে সেনাবাহিনী। পরে তাদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে ট্রাকে করে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে।
মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু উপজেলার সিকদার পাড়া থেকে এসেছেন দোস মোহাম্মদ (৩৫)। ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নৌকায় করে ২৫ জনের সঙ্গে শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছান। নৌকায় আসতে ভাড়া গুনতে হয়েছে ১০ হাজার টাকা।’
হারিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ত্রাণের জন্য অপেক্ষামাণ মরিয়ম বেগম জানান,রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন এখনও চলছে। দুইদিন আগেও কয়েকটি বাড়ি ঘরে আগুন দিয়েছে। তিনিসহ পরিবারের ছয় সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। এখানে আসার পরপরই ত্রাণ পেয়ে তিনি খুবই খুশি।
রাখাইনের হিতিলিয়া ঘোনাপাড়া এলাকা থেকে এসেছেন আব্দুল্লাহ। বাবা-মা ও ভাই বোনদের ফেলে দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে নাফ নদী পাড়ি দিয়েছেন। তিনি জানান,গত এক সপ্তাহ হচ্ছে সেনাবাহিনী তাদের কোথাও পালিয়ে না যাওয়ার কথা বলেছে। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল গণহারে গ্রেফতার করে হত্যা শুরু করেছে। তরুণীদের ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হচ্ছে। বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হচ্ছে। তাই তারা পালিয়ে এসেছেন।
হারিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া স্বজন হারানো রোহিঙ্গাদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও ভয়ের চাপ। অনাহারে অর্ধহারে জল-জঙ্গল পেরিয়ে আসা এসব মানুষের একটাই প্রশ্ন-তাদের ফেলে আসা জন্মভূমি ফিরে পাবে কি?
গত ২৪ আগস্ট আরাকান রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সে দেশের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ। এতে ১২ পুলিশ সদস্য বহু রোহিঙ্গা হতাহত হয়। এরপর রাখাইনে অভিযানের নামে সাধারণ মানুষ ওপর হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুনসহ নানা নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন। এরপর থেকেই রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে,এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।