হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :

রোহিঙ্গা পল্লী গুলোতে স্যানিটেশন পরিস্থিতির ভয়াবহ অবস্থা চলছে। ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কাজে বিঘœ সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারী-বেসরকারী উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে রাত-দিন কাজ করেও লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা পরিবার গুলোকে সামাল দেয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গারা বিশেষতঃ নারীরা লেট্রিন সমস্যায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আগে থেকেই টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া-মুচনী নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প, লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প, উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। তাছাড়া টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের সৈকতে ২০ হাজারের মতো অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ছিল। কিন্ত গত বছর তাদেরকে সৈকত থেকে উচ্ছেদ করায় বন ভুমি এবং লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। সব মিলে শুধু টেকনাফ উপজেলায় ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আগে থেকেই ছিল।

বর্তমানে টেকনাফের ৩টি ক্যাম্প ছাড়াও পুরো উপজেলায় রোহিঙ্গা গিজ গিজ করছে। সংখ্যায় কত, তা এখনও পর্যন্ত নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। নতুন করে নিত্য নতুন দলে দলে আসছে। পুর্ব পরিচিত বা আতœীয়-স্বজনের আশ্রয়ে থাকছে। অন্যদিকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী থেকে কুতুপালং পর্যন্ত ও একই অবস্থা। রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা।

মাসিক জমি ভাড়া নিয়ে রোহিঙ্গারা এতদিন মাথা গোঁজার তাকিদে নিজ উদ্যোগে ঝুপড়ি করতে পারলেও স্যানিটেশন ব্যবস্থা করতে পারেনি। ব্যক্তি উদ্যোগে, সংগঠন-সংস্থা প্রচুর ত্রাণ বিতরণ করেছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। অনেক ব্যক্তি, সংগঠন-সংস্থা রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুদর্শায় অস্থায়ী স্যানেটারী লেট্রিন তৈরী করে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্ত জমি সংক্রান্ত আইনী জঠিলতায় তা সম্ভব হচ্ছেনা।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গারা বলেন ‘খাবার না পেলে অনাহারে থাকা সম্ভব, পানি না পেলে কষ্ট হলেও তৃষার্থ থাকা সম্ভব, উপরে ছাউনি না থাকলে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভেজা সম্ভব, কিন্ত পেশাব-পায়খানা না করে থাকা মোটেও সম্ভব নয়। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের জন্য এত অল্প সময়ের মধ্যে পানি ও লেট্রিনের ব্যবস্থা করাও কঠিন ব্যাপার’। লেট্রিনের অভাবে খোলা স্থানে, ঝোঁপ-ঝাড়ে এবং নিরুপায় হয়ে প্রকাশ্যে সকলের সামনেই মলমুত্র ত্যাগ করছে, করতে বাধ্য হচ্ছেন সর্ববয়সী রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু। যা চরম দৃষ্টিকটু হলেও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাতœক হুমকি হয়ে উঠছে।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে জানা যায়, চট্রগ্রাম অঞ্চলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল হক ভুঁইয়া ও কক্সবাজার জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী (জনস্বাস্থ্য) মুছলেহ উদ্দিন ১১৬ জন কর্মকর্তা নিয়ে রাতদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমুহে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। উখিয়া ও টেকনাফ ২ উপজেলায় এ পর্যন্ত লেট্রিনের বরাদ্দ এসেছে ১ হাজার ২০০টি। তম্মধ্যে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৮১টি লেট্রিন স্থাপন করা সম্পন্ন হয়েছে। নলকুপ বরাদ্দ এসেছে ১ হাজার ২০০টি। তম্মধ্যে ৪৮৯টি স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া ১৪টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট এবং ৩ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৬টি ওয়াটার কেরিয়ার দিয়ে প্রতিদিন ৭৫ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। পানির উৎস এবং সুবিধাহীন ৮টি পয়েন্টে ১ হাজার লিটার করে পানি মজুদ রাখা হয়েছে। এছাড়াও ৫০ কেজি করে ২৭ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার ছিটানো এবং ৪ লক্ষ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি বিতরণ করা হয়েছে। যা চলমান রয়েছে এবং বরাদ্দ আরও আসবে। ##