সিবিএন:

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পুরোনো গৎবাঁধা ও প্রতিহিংসার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তব্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ঐক্যকে তাচ্ছিল্য ও উপহাস করেছেন। কারণ, যারা একদলীয় সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করতে চায়, যারা গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের কাছ থেকে এ ধরনের কথাই তো স্বাভাবিক।

রোববার সকালে কক্সবাজারে বিএনপির পক্ষে সংবাদ সম্মেলন এবং উখিয়ার কুতুপালং টিভি রিলে কেন্দ্র এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য টিউবওয়েল স্থাপন কার্যক্রম উদ্বোধনকালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এসব বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মাঝে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আমরা বিএনপির পক্ষে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। সাধ্যমতো সাহায্যও দিয়েছি। এখন রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের ঢল আসার শুরু থেকেই সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার কোনো গ্রাহ্য করেনি। রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়াও তাদের ইতিবাচক কোনো ভুমিকা ছিলনা। আসলে সরকার দুষ্কৃতিকারী মনোভাব নিয়ে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, এতকিছুর পরও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি অসহায় ও দু:স্থ রোহিঙ্গাদের প্রতি ছিল। বিশ্বের বিভিন্ন মাধ্যম ও সংস্থা কথা বলতে শুরু করেছে। ফলে বাংলাদেশ সরকারের কিছুটা টনক নড়েছে।
আজকে রোহিঙ্গাদের অবস্থা খুবই করুন। নারী-শিশুর লাশ পাওয়া যাচ্ছে। মহিলারা খালে-জঙ্গলে সন্তান প্রসব করছেন। তাদের কোনো আশ্রয় নেই। বিএনপির ২২ ট্রাক ত্রাণও সরকার বিতরণ করতে বাধা দিয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ ও বিভিন্ন সংস্থা তো ত্রাণ দিতে চায়।
রিজভী বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছি। এখন সরকার সেনা মোতায়েন করেছে। আশা করি সেনাবাহিনী পুর্ণ দায়িত্ব নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে এবং ত্রাণ বিতরণ সুচারুরুপে সম্পন্ন হবে। ত্রাণ বিতরণ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এবং রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত ও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে কূটনৈতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বিএনপি দাবি জানালেও ক্ষমতাসীন সরকার কখনোই জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া দেয়নি। অথচ দেশের জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য।

আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা গৎবাধ, পুরনো এবং ধাপ্পাবাজ। আসলে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী লীগ। বলেই তারা বিএনপির জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া দেয়নি।
মিয়ানমার সরকারকে ভারতের সমর্থন দেয়া প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ভারত কিভাবে মিয়ানমারকে গণহত্যার সমর্থন জানালো। তাহলে কি মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে পারেনা? তারা মরুক আর পচুক, সেটাই কি তারা চায়।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার যদি শুরু থেকেই দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতো তাহলে তাদের এতগুলো মানুষের প্রাণহাণী হতোনা। সরকারের প্রথম দিকে জোরালো ভুমিকা ছিলনা। আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির পক্ষে শুরু থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় ও সহযোগীতার জন্য।

কারণ বিএনপি জনগণের এবং গণতন্ত্রের পক্ষের দল। সবসময় অসহায় মানুষের পাশে ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাল্লাহ।
রুহুল কবির রিজভী কক্সবাজারের কুতুপালং, বালুখালি, পালংখালি, থ্যাইংখালি, হাকিমপাড়া, ঘুমধুম এবং পাহাড়ছাড়া এলাকার রোহিঙ্গাদের দুর্দশা ঘুরে ঘুরে দেখেন। বালুখালিতে ড্যাবের মেডিক্যাল ক্যাম্পও পরিদর্শন করেন তিনি।

মিয়ানমার থেকে প্রত্যাগত রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অনেকেই অসুস্থ। তারা ঠিকভাবে ত্রাণও পাচ্ছেনা। আর ক্ষমতাসীন সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকে বিতর্কিত করতে চাইছে।
তারা বলছে- প্রত্যাগত রোহিঙ্গাদের মাঝে জঙ্গি থাকতে পারে! আসলে সরকারের পক্ষে এধরণের কথা বলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকে বিতর্কিত করতে চাইছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। ধর্মীয় কারণে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। রোহিঙ্গারা মুসলমান হওয়ার কারণে এই অত্যাচার আরো বেশি হচ্ছে। তার মানে কি মুসলমানদের কোনো মানবাধিকার থাকতে পারেনা?

বিএনপির পক্ষে পর্যায়ক্রমে ১০ টি টিউবওয়েল এবং প্রয়োজনীয় স্যানিটেশন ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা (বিএনপি) শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের পাশে আছি এবং সরকারকে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ইতিবাচক ভুমিকা নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি ত্রাণ বিতরণের নামে কোনো রাজনীতি করেনা। যেটা আওয়ামী লীগ করে থাকে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার দুপুরে ঢাকা থেকে বিমানযোগে রিজভী কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বিএনপির পক্ষে ত্রাণ বিতরণ করেন।
আজ রোববার তিনি রোহিঙ্গাদের খাবার পানির জন্য ১০ টি টিউবওয়েল স্থাপনের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমানের উদ্যোগে উখিয়ার কুতুপালং টিভি রিলে কেন্দ্র এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য টিউবওয়েল স্থাপনের আয়োজন করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, চট্টগ্রাম বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশিদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো: ফিরোজ-উজ জামান মামুন মোল্লা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা মো: সিরাজুল ইসলাম খান, অস্ট্রেলীয়া বিএনপি নেতা সোহেল, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরোয়ার জাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নূরুল কবির চৌধুরী, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান প্রমুখ।

আলম গ্রুপের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ : এদিকে আজ রোববার সকালে উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন আলম গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড- ঢাকা এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: শরিফুল আলম ও মো: আব্দুল সাইয়ুম মিয়া। এসময় প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উখিয়ার থ্যাইংখালি ও হাকিমপাড়াস্থ প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গার মাঝে বিতরণ করা ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল- প্লাস্টিক, তাবু, প্লাস্টিক মগ, মেলামাইন প্লেট, ১ কেজি টোস্ট বিস্কুট ১ কেজি চিড়া, আধা কেজি মুড়ি ও খেজুর গুড়, ৫ প্যাকেট খাবার স্যালাইন, ২ টা গ্যাস লাইটার, ২ লিটার মিনারেল পানি ও ৩ কেজি আলু।