বিবিসি :
তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় নিহত ‘শহীদদের’ রক্তকে নিজের মাসিকের রক্তের সাথে তুলনা করে টুইট করায় এবছরের সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর মুকুট হারিয়েছেন মিস টার্কি।
টুইটটি তিনি করেছিলেন আগেই। কিন্তু সেই টুইট আবার প্রকাশ্যে আসার পর তার শিরোপা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই নারীর নাম ইতির এসেন। বয়স ১৮।
গত বছরের ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে ইঙ্গিত করে সোশাল মিডিয়াতে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি, যেখানে তিনি সেসময় নিহত ব্যক্তিদের রক্তকে নিজের পিরিয়ডের রক্তের সাথে তুলনা করেছেন।
এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজনকারীরা বলছেন, টুইটটি কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর একারণে প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার বিজয়ের মুকুট কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
তারপর ইন্সটাগ্রামে মিস এসেন বলেছেন, তার এই বক্তব্যের পেছনে রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য ছিলো না।

১৫ই জুলাই এর অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার এক বছর পূর্তিতে ওই টুইটটি পোস্ট করা হয়েছিলো। সেনাবাহিনীর একাংশের ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানে ২৫০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়।
তিনি লিখেছিলেন, “আজ সকাল থেকে আমার পিরিয়ড শুরু হয়েছে। ১৫ই জুলাই এর শহীদ দিবস উপলক্ষে এই মাসিক। এই রক্তক্ষরণের মধ্য দিয়ে আমি দিনটি পালন করছি। এই রক্ত আমাদের শহীদদের রক্তকে প্রতিনিধিত্ব করছে।”

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ওই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ঠেকাতে গিয়ে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদেরকে প্রায়শই ‘শহীদ’ বলে উল্লেখ করেন।
সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজনকারীরা বলছেন, টুইটটি তাদের আগে চোখে পড়েনি।
বিষয়টি যখন সবার নজরে আসে তখন তারা দীর্ঘ এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন এবং পোস্টটির সত্যতা যাচাই করেন।
তারপর মিস এসেনের মুকুট কেড়ে নেওয়া হয়। আয়োজনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এধরনের একটি টুইট তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
মিস এসেন সোশাল মিডিয়ায় তার জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “১৮ বছর বয়সী এক মেয়ে হিসেব আমি বলতে চাই এই পোস্ট শেয়ার করার পেছনে আমার রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য ছিলো না।”
“নিজের দেশ ও জাতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর শিক্ষা নিয়েই আমি বড় হয়েছি,” বলেন তিনি। তাকে কেউ ভুল বুঝে থাকলে তার জন্যেও তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এর ফলে এই প্রতিযোগিতায় যিনি রানার আপ হয়েছেন সেই আসলি সুমেন মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন।
তুরস্কে এর আগেও আরো একজন মিস টার্কি রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
২০১৬ সালের বিজয়ী সুন্দরীও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে ব্যাঙ্গ কবিতার মাধ্যমে অপমান করেছেন এই অভিযোগে ১৪ মাসের সাজা দেওয়া হয়েছিলো।
ওই কবিতাটি শেয়ার করা হয়েছিলো সোশাল মিডিয়ায়।
তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তার সরকারের বিরোধীদের উপর দমন-পীড়ন অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, জাতীয় স্বার্থেই সেটা করা হচ্ছে।
ওই অভ্যুত্থান চেষ্টার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দেড় লাখের মতো সরকারি চাকুরীজীবীকে বরখাস্ত এবং ৫০ হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে।