হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:
রোহিঙ্গা ও ত্রাণের ঢলে হাবুডুবু খাচ্ছে উখিয়া-টেকনাফের মানুষ। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই বিরুপ প্রভাব পড়েছে। স্বাভাবিক জীবন যাত্রা বিপর্যস্থ হয়ে উঠছে। কিছু মানুষ সাময়িকের জন্য উপকৃত হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের আগের মতো স্বাভাবিক নিয়মে জীবন যাপনের সময়-সুযোগ তিরোধান হয়েছে। চাকুরী এবং পেশাজীবিদেরও একই অবস্থা।
জানা যায়, ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে মিয়ানমারের আরকানে (রাখাইন স্টেট) বিজিপি পোস্টে হামলার পরদির ২৫ আগস্ট থেকেই শুরু হয় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। তা এখনও চলমান।
২ সেপ্টেম্বর ছিল ঈদুল আজহা। উখিয়া-টেকনাফের মানুষ এবং স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, আইন শৃংখলা বাহিনী কিভাবে এ ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন তা স্বচক্ষে না দেখলে বুঝানো সম্ভব নয়। উখিয়া-টেকনাফে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যাঁরা কুরবানির পুরো মাংস এবং ফ্রিজে রাখা মাংস রান্না করে হাসি মুখে রোহিঙ্গা মুসলমানদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে অত্যধিক সওয়াব অর্জন করেছেন।
দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সাথে সাথে শুরু হয় ত্রাণের ঢল। দেশী-বিদেশী দানশীল ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা ট্রাকে ট্রাকে ত্রাণ নিয়ে আসছেন। ক্ষুধার্থ, পিপাসিত, নিঃস্ব, অসহায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের মাঝে নিজ হাতে ইচ্ছা মত সামর্থ অনুযায়ী সাহার্য তুলে দিয়ে প্রশান্তি লাভ করেছেন। এখনও দিয়ে যাচ্ছেন।
বিনা তোরণে এসেছেন মন্ত্রী, সাবেক রাস্ট্রপতি, এমপি, পদস্থ আমলা, বিভিন্ন বাহিনী প্রধান, রাস্ট্রদূত, বক্তা, ভিআইপি, ভিভিআইপি, জাতীয় পর্যায়ের অসংখ্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। যাঁদের আনতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতে হত, তোরণ দিতে হত, বিমানের টিকেট কেটে দিতে হত, তাঁরাই বিনা আমন্ত্রণে মানবতার সেবায় স্বেচ্ছায় দোরগোড়ায় হাজির। একদিকে লক্ষ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সামাল দেয়া, নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা, অন্যদিকে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি দুরদুরান্ত থেকে আগত অতিথিদের নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। স্থানীয় সিভিল প্রশাসন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মিডিয়াকর্মী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান প্রধান, আইন শৃংখলা বাহিনীর অবস্থা তো আরও কাহিল। সরকারী দপ্তর সমুহের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অসহায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবতার সেবায় ব্যস্ত।
রোহিঙ্গা আর্ন্তজাতিক ইস্যু হওয়ায় মিডিয়াকর্মীগণও শান্তিতে নেই। ইমেইলের বদৌলতে বেশী জরুরী না হলে সর্বোচ্চ রাত ১০টার মধ্যে স্ব-স্ব পত্রিকা বা মিডিয়ায় সংবাদ প্রেরণ করে বাসায় ফিরতে পারতেন। এখন তা হচ্ছেনা। উদয়াস্ত সংবাদ সংগ্রহে ছুটে চলা তো আছেই, রোহিঙ্গাদের আগমণে দায়িত্ব বেড়ে গেছে বহু গুণে। কখন কি ঘটে, কোথায় রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ডুবি, লাশ ভেসে আসা, দালালদের তৎপরতা, মোবাইল কোর্ট, ত্রাণ তৎপরতা ইত্যাদি নিয়ে সারাক্ষণ টেনশনে থাকতে হয়। উপরন্ত বিদেশী মিডিয়া ও চ্যানেল থেকে আসা এবং ঢাকা থেকে জাতীয় পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গ দেয়া তো আছেই। সীমান্ত এলাকা জুড়ে চলছে দেশী-বিদেশী মিডিয়াকর্মীদের পদচারনা। অতি উৎসাহী কেউ কেউ আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে মিয়ানমারে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছেন। কয়েকজন ঢুকেছেন বলেও দাবি করেছেন।
সবচেয়ে মারাতœকভাবে বিরুপ প্রভাব পড়েছে যানবাহন ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর উপর। ৫ টাকার ভাড়া ২০ টাকা দিলেও পাওয়া যাচ্ছেনা। আর নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর দাম কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে এই দ্রব্য মুল্য। প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছা মত দাম বাড়াচ্ছে। সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি স্থানে বসবাসকারী মানুষের দৈনন্দিন জীবন আরও করুন। খেতে বসেছেন, উঠানে এসে হাজির অভুক্ত রোহিঙ্গা মুসলমান পরিবার। রাতে হয়ত যৎসামান্য একটু ঘুমিয়েছেন, ভোরে উঠে দেখা গেল বাড়ির বাইরে-উঠানে রোহিঙ্গা।
এবারের ঈদে বেড়ানো হয়নি। কোথাও যাবার সুযোগ ছিলনা। কয়েক গুণ বেশী ভাড়ায় গাড়ি সবই রোহিঙ্গা পরিবহনে ব্যস্ত। বহু মিনতির পর গাড়ি পেলেও ভাড়া কয়েক গুণ বেশী।
পতিত জমি, মাথা খিলা জমি, টিলা জমি, সংরক্ষিত ও রক্ষিত বাগানহীন জমি, লীজ নেয়া জমি, মাঠ, ঘাট, পুকুর পাড় সর্বত্র এখন রোহিঙ্গা ঘিজ ঘিজ করছে। এসব জমিতে মৌসুমী শাকসব্জি চাষাবাদ করা হত। এখন সে সুযোগও নেই।
হয়ত আর কিছু দিন গড়ালে রোহিঙ্গারা মাথা গোজার ঠাঁই হলে শুরু হবে ‘নাক ফুল’ বিয়ে। বিয়ে একটা ধর্মীয় বিষয়। বিধাতার অমোঘ নিয়ম। সৌভাগ্যক্রমে পালিয়ে আসতে পারা অবিবাহিত যুবতী, তরুণী, কিশোরী এবং অধিক সংখ্যক স্বামী হারা নিঃসন্তান ও দু’য়েক সন্তানে জননী পুর্ণ যৌবনা রোহিঙ্গা নারীরা জীবন-জীবিকার তাকিদে এবং প্রাকৃতিক জৈবিক চাহিদার তাকিদে নাক ফুল বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন। এটাই স্বাভাবিক। মোহরানা হল ১টি স্বর্ণের নাক ফুল এবং ১ জোড়া কাপড়। এরা বলে থাকেন ‘নাক ফুল বিয়ে’।
লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ স্থানীয় বিবাহ যোগ্য নারীদের উপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এভাবে সৌভাগ্যক্রমে পালিয়ে আসতে পারা অবিবাহিত যুবতী, তরুণী, কিশোরী এবং অধিক সংখ্যক স্বামী হারা নিঃসন্তান ও দু’য়েক সন্তানে জননী পুর্ণ যৌবনা রোহিঙ্গা নারীরা। সস্তায় হাতের নাগালে পাবার কারণে বহুগামী বিশেষতঃ বিয়ে পাগল যুবক-বৃদ্ধরা ধাবিত হবে। এতে স্থানীয় বিবাহ যোগ্য নারীরা আতংকিত বোধ করছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় সচেতন মহলের অভিমত, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের এক স্থানে নিয়ে গতিবিধি কঠোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলে সমস্যা বহু অংশে কমে যাবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।