ধারণা করা হয় ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ চেকপোস্টে আতা উল্লাহ’র নির্দেশেই হামলা চালিয়েছিল আরসা। এরপর সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষ।
গত বছরের অক্টোবরে এক ভিডিও বার্তায় রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন হিসেবে আরসা ও নেতা হিসেবে নিজেকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন আতা উল্লাহ। ওই সময়ে মিয়ানমার সীমান্তে একটি হামলা চালিয়েছিল তারা।
আরসা নেতার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ৩০ বছর বয়সেই সে একটি বিদ্রোহী সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। শুরুতে এই সংগঠনের অল্প কয়েকটি বন্দুক ছিল, বেশিরভাগ সময় লাঠি ও ছুরি হাতেই হামলা চালাত তারা।
ওই সময় প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন মুখোশধারী ব্যক্তি তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর আতা উল্লাহ মিয়ানমারের সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের বর্ণনা দিচ্ছে।
সৌদি আরবে বিলাসবহুল জীবন
রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারাও স্বচ্ছলতার মুখ দেখেনি। তবে পাকিস্তানের করাচিতে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ও বেড়ে উঠা আতা উল্লাহ’র।
এক আত্মীয়ের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, তার বাবা করাচিতে দারুল উলুম মাদ্রাসায় পড়াশোনার পর পরিবারসহ সৌদি আরব পাড়ি দেয়। সেখানে শিক্ষকতা শুরু করে তার বাবা। এরপর এক বিত্তশালী পরিবারের নজরে আসে আতাউল্লাহ। সেই পরিবারের সন্তানদের পড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় তাকে। খুব তাড়তাড়িই তাদের কাছের মানুষ হয়ে যায় আতা উল্লাহ।
আতা উল্লা’র সৌদি জীবন সম্পর্কে জ্ঞাত অপর এক আত্মীয় জানায়, ওই পরিবার তাকে (আতা) খুবই ভালোবাসত এবং একেবারে আপন মনে করত। কিন্তু ২০১২ সালে রাখাইনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ার ঘটনা নাড়া দেয় তাকে। এরপরই সৌদি আরবের বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে রোহিঙ্গাদের সমর্থনে লড়াইয়ে নামে সে।
ইসলামি জঙ্গিদের সঙ্গে বিরোধ
শুরুতে সৌদি আরব থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পাকিস্তানে ফিরে যায় আতা উল্লাহ। এই টাকা শীর্ষ জিহাদিদের কাছ থেকে সে অস্ত্র, যোদ্ধা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে চেয়েছিল বলে করাচিতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এক জঙ্গি জানিয়েছে। ওই জঙ্গির মতে, সে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের তালেবান এবং জম্মু-কাশ্মিরের বিচ্ছন্নতাপন্থী লস্কর-ই-তৈয়বার কাছ থেকে বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে সহযোগিতা চায়।
২০১২ সালে তার সঙ্গে কাজ করা এক সহযোগীর মতে, ‘প্রকাশ্যে এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বললেও রাখাইনে তাদের হয়ে যুদ্ধ করতে রাজি হয়নি। বেশিরভাগ পাকিস্তানি জঙ্গিই তার অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে অনেকে অস্ত্র কেনার দেওয়া অর্থ ফেরত দেয়নি। আতা উল্লাহ অস্ত্রও পায়নি, ফিরে পায়নি টাকাও।’
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল তালাত মাসুদ বলেন, ‘বার্মায় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর জিহাদের ডাক আসলে মুসলিমদের সহানুভূতি অর্জনের জন্য প্রচারণা ছাড়া কিছুই নয়।’
২০১২ সালে পাকিস্তানে আতাউল্লাহকে কাছ থেকে দেখা কয়েকজন জঙ্গি জানায়, সে পাকিস্তান ছেড়ে যাওয়ার সময় একজন জাতীয়তাবাদীতে পরিণত হয়। জঙ্গিবাদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। কারণ যাদেরকে সে অর্থ দিয়েছিল তারা কোনও সহযোগিতা করেনি। অনেকে নাকি তার অর্থ চুরিও করেছে।
আতা উল্লাহ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের মতো (আরএসও) রাখাইনের অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করে।
সংকটের শুরু
আরসার নেতার সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন সূত্র জানায়, রাখাইনের নতুন সহিংসতা পর অনেক জঙ্গি গোষ্ঠীই আতা উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিতে চাইছে। তবে আতা উল্লাহ তাদের সহযোগিতা নিতে রাজি হয়নি। যদিও অস্ত্র ও চিকিৎসার খুব প্রয়োজন ছিলো তাদের। কয়েকজন সহযোগী সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিলেও সে রাজি হয়নি।
আতা উল্লাহ’র আশঙ্কা, এতে করে তাদের মুক্তিকামী আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর মাঝে হারিয়ে যেতে পারে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
আরএসও’র পাকিস্তানি প্রতিনিধি নুর হুসেন বার্মি জানায়, তাদের উগ্রতার কারণে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা বেড়েছে। সে আর কাউকে কাজ করতে দেয় না কারণ এতে করে অবস্থান হারানোর ভয় রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হর্সির ভাষায়, আতা উল্লাহর বিদ্রোহ রোহিঙ্গাদের হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরসা রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে লড়াই করছে, এমন দাবি গ্রহণযোগ্যভাবে প্রতিষ্ঠা করা খুব কঠিন। সূত্র: টুডে অনলাইন।