অনলাইন ডেস্ক :
হৃদরোগ বর্তমান সময়ে বেশ প্রকট আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় চট্টগ্রামে হৃদরোগীর সংখ্যা বেশি। এর প্রধান কারণ চর্বিযুক্ত গরুর মাংস খাওয়ার প্রবণতা বেশি। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানি মাংসও এক্ষেত্রে দায়ী। এএফসি হেলথ ফরটিস এসকর্টস হার্ট ইনস্টিটিউটের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সাংবাদিকদের বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) এসব কথা বলেন।
ডা. এএম শফিক, ইউনাইটেড হাসপাতালের সাবেক কনসালটেন্ট বর্তমানে ফরটিসের চিফ কনসালটেন্ট অ্যান্ড ক্যাথল্যাব ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, চট্টগ্রামের ট্রেন্ড খারাপ। তরুণরাই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিছু দিন আগে ৩৬ বছরের এক তরুণের প্রাইমারি পিসিআই করেছি। এর থেকে কম বয়সী রোগীও পাচ্ছি হার্টের রক্তনালিতে ব্লক। রিং লাগাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বয়স ও জেনেটিক কারণে, উচ্চ রক্তচাপ, মাদকাসক্তি, ডায়াবেটিস, চলাফেরা-কাজকর্ম কম করা, ধূমপান করা, কোলেস্টরেলযুক্ত খাবার বেশি খেলে, ফাস্টফুডে নির্ভরশীলতাসহ বিভিন্ন কারণে হৃদরোগ হচ্ছে। যখন ইউনাইটেডে ছিলাম তখন বেশিরভাগ রোগী ছিল চট্টগ্রামের। এখানে হার্টের রোগী বেশি। হার্ট অ্যাটাক কমানোর জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। বিশেষ করে পাবলিকলি বিফ কমানো দরকার।
ডা. এএম শফিক বলেন, চট্টগ্রামে গরুর মাংসে অনেক বেশি চর্বি না থাকলে জবাই হয় না। ঢাকায় সম্পূর্ণ বিপরীত। ঢাকায় আমাদের দাওয়াত দেন, ছোট গরু জবাই করা হয়, যাতে চর্বি কম। এখানে দাওয়াত দেন, বেশি চর্বিযুক্ত বড় গরু খাওয়ার জন্য। চট্টগ্রামে একটি ভালো হাসপাতাল হওয়া উচিত এটি আমরা ঢাকায় থাকতেই বলতাম। কারণ তখন হার্ট অ্যাটাকের রোগী ঢাকায় নিয়ে যেতে হতো। সেটি হতো, মরা গাছে পানি ঢালার জন্য স্ট্যান্ট লাগিয়ে দিতাম। রক্তনালি খুলে দিলে সামান্য হেলপ হতো। ড্যামেজ হওয়ার আগে যদি রক্তনালি খুলে দিতে পারতাম তবে বড় উপকার হতো। যা এখন ফরটিস এসকর্টসে ২৪ ঘণ্টা করছি।
হার্টের রিংসহ সব উপকরণের টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি হস্তক্ষেপে এমআরপি নির্ধারণ করে দেওয়ায় রোগীদের কিছু টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। তারপরও অনেক টাকার ব্যাপার। কিন্তু এসব রিং আমদানি করা হয়। তাই সব টাকা বিদেশে চলে যায়। এর চেয়ে ভালো হয় যদি আমরা হৃদরোগের ব্যাপারে সচেতন হই। হৃদরোগ বাসা তৈরির সুযোগ না দিই। গণমাধ্যম যদি একটু বলে ‘চিটাগাংয়ে হার্ট অ্যাটাক বেশি’ তাহলে মানুষ সচেতন হবে। গণমাধ্যম বললে মানুষ শুনে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামবাসীর খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে। গরুর মাংস টু ফ্যাটি। এটি বাদ দিতে হবে। লাইফস্টাইল চেঞ্জ করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হাঁটতে হবে। ডায়াবেটিস ও ব্লাডপ্রেসার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বিনা বাক্য ব্যয়ে সিগারেট ছাড়তে হবে। ইয়াবাসহ যেকোনো মাদক ছাড়তে হবে। ইয়াং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা জটিল। তারা মাদক ছাড়তে পারে না, ওষুধ ছেড়ে দেন। তারা দ্বিতীয়, তৃতীয় হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন। একপর্যায়ে মারা যান। রক্তে চর্বি থাকলে খাবার থেকে কমাতে হবে, ওষুধ খেতে হবে। ব্লক থাকলে হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে না। সম্পূর্ণ ব্লক হলেই হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। হার্ট অ্যাটাক ও ব্লক তৈরি প্রতিরোধ করতে হবে।
চিফ কার্ডিয়াক সার্জন ডা. মির্জা আবুল কালাম মহিউদ্দিন বলেন, ঢাকায় কার্ডিয়াক সার্জারির পর ওয়াকওয়েতে এক-দুই কিলোমিটার হাঁটতে পারে। রাস্তার দুপাশে ফুটপাত নাই। অফিস-বাসা দুই কিলোমিটার পথ। হেঁটে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। কিন্তু রাস্তাগুলো রিস্কি। ড্রেনে ঢাকনা নেই। মাঠ নেই। যা আছে তা-ও অনেক দূরে। কেউ হাঁটার ইচ্ছে সুযোগ বেশি নেই। আইডিয়াল সিটি না।
শিশুর হার্টে জন্মগত ছিদ্র সম্পর্কে তিনি বলেন, হার্টে জন্মগত ছিদ্র অনেক ধরনের হয়। কিছু অপারেশন ছাড়া নিরাময় সম্ভব। মাংসের মধ্যে ছিদ্র হলে জরুরি চিকিৎসা না করতে বলি। বড় হলে মাংস বাড়লে ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। যদি পর্দার মধ্যে ছিদ্র হয় তবে কোনো একসময় অপারেশন করতে হয়। ছিদ্র যদি খুব বেশি বড় হয় তবে জরুরি অপারেশন করতে হয়। কারণ ফুসফুসের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। আমরা চাই ১০ মাস বয়স, ১০ কেজি ওজন হলে, হিমোগ্লোবিন ১০ গ্রাম হলে অপারেশনের রেজাল্ট ভালো আসে।