হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ

টেকনাফের একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষকের চরিত্র নিয়ে পরস্পর বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এমনকি প্রধান শিক্ষকের নৈতিক চরিত্র নিয়ে কথিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আতংকে ছাত্রীরা বিদ্যালয় ছাড়ছে বলে গুরুতর গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষককে কেন্দ্র করে। এব্যাপারে ভুক্তভোগী এক ছাত্রীর অভিভাবক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন। কথিত অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ইসমাইল অভিযোগ সম্পুর্ণ বানোয়াট এবং সাজানো বলে দাবি করেছেন।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইসমাইল প্রথম শ্রেনীর পাঠদানকালে এক ছাত্রীকে ডেকে গালে চুমু দেন ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে হাত দেন। এসময় শ্রেনীর অন্যান্য শিক্ষার্থীদের টেবিলে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ রাখতে বলেন তিনি।

২০ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকালে ওই ছাত্রীর দাদা সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পিতৃতুল্য শিক্ষক যদি এমন আচরণ করেন তাহলে এই ছোট ছোট বাচ্চাদের তাদের অভিভাবকরা কিভাবে লেখাপড়া করাবে। তিনি আরও জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর তার নাতিনকে (সংগত কারণে নাম গোপন রাখা হলে) যথাসময়ে বিদ্যালয়ে যেতে বললে সে বিদ্যালয়ে যেতে রাজি হচ্ছিলনা এবং কান্নাকাটি করছিল। তারপরও জোর করে তাকে বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। বিদ্যালয়ে গিয়েও সে ক্লাসে ঢুকতে ভয় পায় ও কান্নাকাটি করতে থাকে। এঘটনা দেখতে পেয়ে ৫ম শ্রেণীর কয়েকজন ছাত্রী কান্নার কারণ জানতে চাইলে সে প্রধান শিক্ষকের বিষয়টি খুলে বলে। পরে বিকালে বাড়ীতে ফিরতে দাদীর পুরো ঘটনা জানায়। এরপর বিষয়টি তার মা জানতে পারলে প্রথমে মৌখিকভাবে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিষয়টি জানান এবং ২০ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। অভিযোগে প্রবাসীর স্ত্রী উক্ত ছাত্রীর মা উল্লেখ করেন তিনি নিজে যখন এ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন তখনও ওই শিক্ষক তার সাথেও এধরনের আচরণ করেছিলেন।

মহেশখালীয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ হারুন জানান, যদিও মেয়েটি ছোট। তারপরও অভিযোগটি গুরুতর। তদন্তের জন্য কমিটির দুই সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আলী অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি আমিসহ পরিচালনা কমিটির অপর সদস্য আবদুল লতিফকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ইসমাইল বলেন ‘আমি বয়স্ক লোক। যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ধরণের কোন ঘটনা-ই ঘটেনি। সম্পুর্ণ সাজানো বিষয় নিয়ে আমার নৈতিক চরিত্র নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। যা তদন্তে প্রমাণিত হবে। তাছাড়া ছাত্রী অন্য স্কুলে চলে যাওয়ার কথাও সম্পুর্ণ মিথ্যা’।

টেকনাফ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ এমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন ‘এধরণের কোন অভিযোগ হাতে আসেনি। কয়েকদি আগেও আমি উক্ত স্কুল পরিদর্শন করেছি। আমার জানা মতে উক্ত স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের সাথে প্রধান শিক্ষকের দ্বন্ধ রয়েছে। শুনেছি কমিটির কাছে অভিযোগ দিয়েছে। তাঁদের তদন্তে প্রকৃত বিষয় বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছি’।