ইমাম খাইর, সিবিএন:
মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দিন যাচ্ছে। থাকার রসদপাতি, খাবার ওষুধপত্র এবং চরম স্যানিটেশন সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে বেশ কিছু জায়গায় টিউবওয়েল বসানো হলেও পর্যাপ্ত নয়। রোহিঙ্গাদের আনুপাতিক হারে স্বাস্থ্যসেবা মিলছেনা। যে কারণে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রথম দিকে কাপড়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলেও এখন আর কাপড়ের দরকার নেই। প্রয়োজন তাদের থাকার রসদ, স্যানিটেশন ও ওষুধপত্র। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে দুজন এইডস আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েছে।
এদিকে প্রতিদিনই ট্রাক ভরে ত্রাণ আনছেন দেশি-বিদেশি অনেক সংস্থা। এদের মধ্যে অধিকাংশই চিড়া, মুড়ি, খই ও গুড়ভর্তি বস্তা বিতরণ করছেন। তবে এগুলোর অনেক কিছুই খেতে পারছেন না রোহিঙ্গারা। ৪-৫ দিন হেঁটে তারা যে পরিমাণ দুর্বল হয়েছেন এবং যে মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে তারা বাংলাদেশে এসেছেন তা থেকে মুক্তির জন্য তাদের প্রয়োজন ভাত-মাছের মতো ভারী খাবার এবং ওরস্যালাইন। ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে চাল প্রয়োজন তাদের।
রোহিঙ্গাদের নেতা নবী হোসাইন জানান, পর্যাপ্ত সামিয়ানার অভাবে অনেকে বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাচ্ছেন। অনেকে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ত্রাণদাতাদের সামিয়ানা আনার জন্য অনুরোধ করেন।
রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মোহাম্মদ আইয়ুব জানান, তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল, ডাল ও তেল দরকার। গত ৭ থেকে ১০ দিন ধরে রোহিঙ্গারা যে পরিশ্রম করছেন তাদের তিনবেলা ভারী খাবার না দিলে দুর্বল হয়ে পড়বে। এছাড়াও তাদের জন্য জরুরিভাবে বিশুদ্ধ খাবার পানি, প্যারাসিটামল ও খাবার স্যালাইন প্রয়োজন। টিউবওয়েল এবং ল্যাট্রিন প্রয়োজন।
সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা পাঁচ বছরের নিচের শিশুরা সবচেয়ে বেশি অপুষ্টিতে ভুগছে। টানাবৃষ্টি ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে সর্দি, কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, পাতলা পায়খানাসহ ক্যাম্পগুলোতে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
সরেজমিনে কক্সবাজারের কুতুপালং এবং বালুখালি ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি এনজিও অস্থায়ী ল্যাট্রিন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। খাবারের জন্য ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করছে রোহিঙ্গারা। যারা হুড়োহুড়ি করে নিতে পারছেন তারাই কেবল শুকনো খাবার পাচ্ছে। যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল তারা বসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছেন।
আর এসব নারী, শিশু রোহিঙ্গাদের খোঁজ খবর নিতে ছুটে যাচ্ছেন মানবতাবাদীরা। প্রতিদিনই যাচ্ছে দলে দলে। সাহায্য সহযোগিতা দিচ্ছেন সাধ্য মতো। বিশেষ করে কক্সবাজার এর নারী নেত্রী শাহেনা আকতার পাখি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মাঝে দলের পাশাপাশি নিজের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ কে চলেছেন। শারীরিক খোঁজ রাখছেন রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিহাসের সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি হলো রোহিঙ্গা। তাদের পাশে দাঁড়ানো সবার দায়িত্ব। যেসব জায়গায় রোহিঙ্গারা থাকছে সেসব এলাকার করুন দশা। খাবার পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জোরদার করা দরকার। অন্যথায় মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, মানবিক কারণে আমরা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। স্থায়ী কোন একটা সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাদের পাশে থাকতে হবে।
ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৯৫৬ জনের পুষ্টি সহায়তা প্রয়োজন। এর মধ্যে পাঁচ বছরের নিচে শিশুর সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজার। এছাড়া, পুষ্টি সহায়তা দরকার এমন ৯১ হাজার ৫৫৬ জন কিশোরী ও রোহিঙ্গা নারীর মধ্যে ৫৪ হাজার ৬৩৩ জন অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদায়ী মা রয়েছেন।
সাম্প্রতিক সহিংসতায় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। কক্সবাজারের নিবন্ধিত ক্যাম্পগুলোতে জায়গা না পেয়ে অনেকে খোলা মাঠে, কেউ ধানক্ষেতে কেউবা আবার রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন ত্রাণ আর দু-বেলা খাবারের আশায়। সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে ত্রাণ নিয়ে আসলেও সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। অনেক ত্রাণ সামগ্রী অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তত্ত্বাবধায়করা।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্যাতনে এখন পর্যন্ত সাড়ে চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখন অব্যাহত রয়েছে দেশটি থেকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্রোত।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।