ডেস্ক নিউজ:
মিয়ানমার ছেড়ে মুসলিম রোহিঙ্গারা কেন চলে যাচ্ছে সেটি খুঁজে বের করার জন্য তাদের সঙ্গে কথা বলতে চান দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। মঙ্গলবার তার দেয়া এমন বক্তব্য মিথ্যা দাবি করেছেন বাংলাদেশ আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা।
কক্সবাজারের কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের তত্ত্বাবধানে থাকা ‘পুরাতন রোহিঙ্গারা’ জাগো নিউজের কাছে সু চি’র বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
গতকাল মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় জাগো নিউজ’র সঙ্গে কথা হয় ‘পুরাতন রোহিঙ্গাদের’। ১৯৯১ সাল থেকে তারা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন। বর্তমানে তারা ক্যাম্পের নতুন রোহিঙ্গাদের তত্ত্বাবধানে আছেন। সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ বিতরণে বিভিন্ন সংস্থায় কাজও করছেন তারা।
টেলিভিশনে সু চি’র বক্তব্য শুনেছেন ক্যাম্প তত্ত্বাবধায়ক ও পুরাতন রোহিঙ্গা খান জাহান আলী। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘তার (অং সান সু চি) কথা শুনে মনে হলো তিনি অন্ধ। তিনি চোখে কিছুই দেখেন না। গত ৪-৫ দিন আগেও যারা মিয়ানমার থেকে এখানে এসেছে, তাদের প্রায় সবার শরীরে গুলি আর যখমের চিহ্ন ছিল। এগুলো কীভাবে হয়েছে? সু চি মিথ্যা কেন বলছেন , যা সবাই খালি চোখে দেখছেন, কেন তিনি এসব অস্বীকার করছেন ? ’
কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের সমন্বয়ক মো. আইয়ুব বলেন, ‘তার (অং সান সু চি) ভাষণ শুনে খুব অবাক হয়েছি। তার কথার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই । যারা মারা গেছে তারা তো গেছেই, যারা বেঁচে ফিরেছেন তারাও আধ-মরা। এরপরও তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এরপরও তার হাস্যকর বক্তব্য!’
ক্যাম্পের তত্ত্বাবধানে থাকা অন্য রোহিঙ্গারা বলেন, গত ২৭ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমান ও হিন্দুদের উপর নির্যাতনের কারণে অনেকে মিয়ানমার ছেড়েছেন। আরও অনেকে ছাড়বেন। তাদের পুনর্বাসনের চিন্তা না করে সু চি ‘উন্মাদের’ মতো বক্তব্য দিচ্ছেন।
‘৫ সেপ্টেম্বর থেকে সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধ হয়েছে’ বলে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি ডাহা মিথ্যা। সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বরও মিয়ানমার থেকে গুলিবিদ্ধ ও আহত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে সু চি বলেন, ‘অধিকাংশ মুসলমান রাখাইন থেকে পালাননি এবং সেখানে সহিংসতাও শেষ হয়ে গেছে। আমরা সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বেআইনি সহিংসতার নিন্দা জানাই । আমরা আমাদের দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং আইনের শাসন পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে তেমন কিছুই বলেননি তিনি। সু চিবলেন, ‘সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ থেকে কোনো ধরনের সশস্ত্র সংঘর্ষ বা জাতিগত নিধনের মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অধিকাংশ মুসলমান রাখাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মানে এটাই নির্দেশ করে যে পরিস্থিতি ততটা তীব্র নয়।’
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, অং সান সু চি ও তার সরকার রাখাইন রাজ্যের ভয়াবহ পরিস্থিতির বিষয়ে বালিতে তাদের মাথা গুঁজে রেখেছেন।
তবে জাতির উদ্দেশ্যে সু চি’র দেয়া বক্তব্য সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না নতুন রোহিঙ্গারা। আপাতত তারা মিয়ানমারে ফেরার বিষয়েও কিছু ভাবছেন না।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ সদস্যসহ বহু রোহিঙ্গা হতাহত হন। ওই ঘটনার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’র নামে রাখাইন রাজ্যে নিরীহ মানুষের ওপর বর্বর নির্যাতন শুরু করেছে। অভিযানে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুনসহ নানা নির্যাতনের ভয়ে এখন পর্যন্ত চার লাখেও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।