নিউজ ডেস্ক:
অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ইস্যুটিকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল টার্গেট দুটি। প্রথমত, রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করা। দ্বিতীয়ত, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ও তাদের সম্মানের সঙ্গে বসবাস নিশ্চিত করা। এই দুটি লক্ষ্য স্থির করেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকটই হবে তার ফোকাস পয়েন্ট।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান আপাতত মানবিক। তাই বাংলাদেশে তাদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মূল লক্ষ্য হলো– রোহিঙ্গারা তাদের নিজ আবাসভূমে ফিরে যাবে, সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে। এজন্য যা করণীয়, তার সবই করবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।
সূত্রমতে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেশ কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নিন্দা ও প্রতিবাদ শেখ হাসিনার সরকারকে বলীয়ান করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক নিন্দার বার্তা অব্যাহত থাকবে বলেও প্রত্যাশা সরকারের। পাশাপাশি রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ ও তাদের মিয়ানমারে ফেরত নিতে বিশ্ব জনমত ও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আরও জানান, শেখ হাসিনার এই দুই কৌশল চূড়ান্ত রূপ নেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনের পর। এই অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতেই সোচ্চার থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। এবার এটিই তার ফোকাস পয়েন্ট। পাশাপাশি বিশ্ব নেতাদেরও সোচ্চার করতে এ সময় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন তিনি। সেখান থেকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে ফল আসবে– এমনই প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সূত্র জানায়, জাতিসংঘেই রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সমর্থ্য হবেন বলে ঘনিষ্ঠদের কাছে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গেছেন সেখানকার প্রকৃত চিত্র নিজ চোখে দেখে আসতে, যা তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তুলে ধরবেন। সেখান থেকে বিভিন্ন তথ্য উপাত্তও সংগ্রহ করেছেন তিনি। শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বেশকিছু স্থিরচিত্র জাতিসংঘে নিয়ে যাবেন বলেও জানা গেছে। বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে এগুলো তুলে ধরবেন তিনি।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিত চিঠি বিনিময় করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে। পাশাপাশি ইস্যুটি নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে যোগাযোগও অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র সরাসরি দেখাতে আগামীকাল বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে নিযুক্ত বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের কক্সবাজারে নিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ স্থাপন করেছেন। এখন তার টার্গেট মিয়ানমারেই রোহিঙ্গাদের আবাস নিশ্চিত করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যা বলেন, তা করেন। এই সমস্যারও সমাধান তার হাত দিয়েই হবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সাময়িক। বাংলাদেশে তাদের স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দেওয়া হবে না। রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করে তাদের নিজ আবাস ভূমি রাখাইনে বসবাস, অধিকার ও স্বীকৃতি আদায় করে দেওয়াই হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য। এজন্য কূটনীতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। মিয়ানমারের ওপর চাপও রয়েছে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।