হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে আইন শৃংখলা বাহিনীর নমনীয়তার সুযোগে কক্সবাজার টেকনাফ সীমান্তের আত্মগোপনে থাকা ইয়াবা চোরাকারাবারীরা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। সেই সাথে রমরমা বাণিজ্য চলছে রোহিঙ্গাদের গবাদিপশু নিয়ে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন ৪ জন মেম্বার। ত্রাণের নামে এসব ইয়াবা চোরাচালানী সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের সাথে মিশে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গা নারীদের দিয়ে তারা ইয়াবা আমদানী এবং রেখে আসা গরু, মহিষ ও ছাগল কৌশলে এপারে নিয়ে আসছেন। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পশু রাতের আঁধারে অবৈধ পথে এনে বেছাবিক্রি করে ইয়াবা সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা অল্পদিনে কোটি টাকা আয় করেছেন। চোরাই গবাদিপশু ব্যবসা বেশী লাভজনক হওয়ায় সীমান্তের ইয়াবা সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা এবার মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের গরু মহিষ লুটে নিচ্ছেন। অবাধে অনুপ্রবেশের সুযোগে রোহিঙ্গাদের দিয়ে চোরাচালানী সিন্ডিকেট কৌশলে ইয়াবার চালানও নিয়ে আসছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের রিসিভ করতে মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের তোড়জোড় লক্ষ্য করা গেছে।
মিয়ানমারে সংঘটিত ঘটনা পরবর্তী সে দেশের সেনাবাহিনী এবং পুলিশের অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সহায় সম্বল রেখেই প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা দিগ্বিদিক দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসছেন। বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অগণিত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন। আরও কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা সীমান্তের ওপারে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।
মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা দালাল এবং সেখানকার মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সাথে যোগসাজশ করে নিশী রাতে অবৈধ পথে নিয়ে আসছে শত শত গরু-ছাগল এবং মহিষ। রোহিঙ্গারা ওপারে যেমনি নির্যাতিত হচ্ছেন এপারে এসে ইয়াবা চোরাচালানী সিন্ডিকেটের হাতে পশু বেছাবিক্রিতে আর বেশী নির্যাতিত হচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা এসব চোরাই পশু স্থানীয় ইজারাদারদের সহায়তায় ভূয়া কাগজ বানিয়ে অবাধে বেছা বিক্রি করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনাফ হ্নীলার ফুলের ডেইল, কাষ্টমসঘাট, ওয়াব্রাং, মৌলভীবাজার, নাটমুরাপাড়া, হোয়াইক্যংয়ের খারাংখালী, নয়াবাজার, ঝিমংখালী, নয়াপাড়া, কাঞ্জরপাড়া, উনছিপ্রাং, লম্বাবিল, তুলাতুলী ও উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মিয়ানমারের চোরাই পশু আমদানী করা হচ্ছে। হ্নীলা হোয়াইক্যংয়ের ইয়াবা সংশ্লিষ্ট চার ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে নির্যাতিত বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের রেখে আসা গরু মহিষ ও ছাগল আনা হচ্ছে। এই চার ইউপি সদস্য গত দুই সপ্তাহে অন্তত কোটি টাকার উপরে আয় করেছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। সীমান্ত পাড়ের এই চার জনপ্রতিনিধি আবার তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীও। সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ম্যানেজ করে চোরাই পশু চোরাই পথে নিয়ে আসছেন এসব জনপ্রতিনিধি।
১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ভোর রাতে হ্নীলার ফুলের ডেইল সীমান্ত দিয়ে জনৈক জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে মিয়ানমারের বেশ কিছু চোরাই পশু নিয়ে আসার পথে বিজিবি ১৯টি মহিষ আটক করতে সক্ষম হলেও অনেক মহিষ তড়িঘড়ি করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিয়ে ছটকে পড়ে। পরে আটক মহিষগুলি হ্নীলা শুল্ক গোদামে জমা দিয়েছে বিজিবি। এদিকে ওপারে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা দেশে রেখে আসা পশু এপারের লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষায় সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গরু মহিষ এবং ছাগল যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বৈধভাবে নিয়ে আসতে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা সহযোগীতা কামনা করেন।
মিয়ানমার নাকপুরা এলাকার বশির আহমদ ও নুরুল কবির জানান, আমাদের ৪টি পরিবারের ৫২টি মহিষ হ্নীলা এলাকার এক মেম্বার জনৈক রাখাইনকে দিয়ে চুরি করে নিয়ে আসার পথে বিজিবি ১৯টি আটক করে ফেলে। বাকী মহিষ তারা লুটপাট করেছেন। টেকনাফ শুল্ক কর্মকর্ত এ কে এম মোশারফ হোসেন বলেন, মিয়ানমারে সংঘটিত ঘটনার পর থেকে সীমান্ত দিয়ে এক শ্রেনীর লোক অবৈধভাবে চোরাই পশু নিয়ে আসছেন। তিনি এ পর্যন্ত প্রশাসনের হাতে আটক ৪৩টি গরু মহিষ কাষ্টমসে জমা দেওয়ার কথা জানান।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন খাঁন জানান, রোহিঙ্গাদের গরু মহিষ চুরি করে হোক আর যেভাবে হোক অবৈধপথে নিয়ে আসার কোন সুযোগ নেই। রেহিঙ্গাদের সহায়তা এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রাণী করার অপরাধে এ পর্যন্ত ১৪০ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেওয়া হয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।