সিবিএন:
উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নারকীয় তাণ্ডব, নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের বর্ণনা শুনে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা এক শিশু প্রধানমন্ত্রীকে তার পরিবারের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কথা জানান। শিশুটি জানায়, তাদের জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আগুন দেয়া হয়। তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিষ্ঠুর নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশুটিও। তার নাকে আঘাত করে থেঁতলে দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় অশ্রুসিক্ত নয়নে ওই শিশুকে বুকে জড়িয়ে নেন। তাকে সান্ত্বনা দেন।
নির্যাতিত নারী ও শিশুদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী তাদের সবধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেন।
মঙ্গলবার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে প্রথমে কক্সবাজার এবং সেখান থেকে সড়কপথে উখিয়া পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা দুর্ভাগা নারী, পুরুষ, শিশুদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা, পুত্রবধূ আইওএম কর্মকর্তা পেপ্পি সিদ্দিকও এ সময় উপস্থিত আছেন।
পরে দেয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে যা ঘটছে, সেটি ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’। প্রধানমন্ত্রী বাকরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘এ ঘটনা দেখে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। মানুষ মানুষের মতো বাঁচবে। মানুষের কেন এত কষ্ট!’
‘তারা (মিয়ানমার) আইন পরিবর্তন করে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করছে। আইন পরিবর্তন করে কেন এই ঘটনার সৃষ্টি করা হল?’- প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা নিরীহ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। দৃঢ় কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যারা প্রকৃত দোষী তাদের খুঁজে বের করুন। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে যা যা সাহায্য করা দরকার, আমরা তা করব।’
‘মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দিলেও এ দেশের ভূমি ব্যবহার করে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানো হলে তা বরদাশত করা হবে না’- হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শেখ হাসিনা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ ইকবালুর রহিম, মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, আবদুর রহমান বদি, সাইমুম সরওয়ার কমল, আবু রেজা মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন নদভী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ও রেপিড একশন ব্যাটালিয়ন মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।