বার্তা পরিবেশক:

মিয়ানমারের চলমান সহিংসতার সুযোগে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বানের ¯্রােতের মত আসছে রোহিঙ্গারা। সেই সুযোগে মিয়ানমারের প্রভাবশালী ইয়াবার এজেন্টরা ইয়াবার চালান নিয়ে পালিয়ে এসে এ দেশের ইয়াবা গডফাদারদের আশ্রয়ে এলাকায় অবস্থান নিচ্ছে। এসব আগত ইয়াবা গডফাদারেরা পরিবার পরিজন নিয়ে পালিয়ে আসার সময় তাদের পূর্ব পরিচিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে তারা আগে থেকে ইয়াবা ব্যবসা করত তাদের জন্য মোটা অংকের ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে বলে গোপন একটি বিশ্বস্থ সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, টেকনাফ সদরের মৌলভীপাড়ার বজল আহমদের পুত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী আবদুর রহমান ও একরাম দীর্ঘদিন চট্টগ্রামে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করলেও তারা এখন এলাকায় ফিরে এসে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা আগত রোহিঙ্গা ইয়াবা ব্যবসায়ীদেরও তাদের বাড়িতে আশ্রয় দিচ্ছে। বিশেষ করে টেকনাফ সদরের ৮নং ওয়ার্ডের মৌলভীপাড়ার একটি ইয়াবা গং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের সবার বিরুদ্ধে ইয়াবা মামলা রয়েছে। তারা স্থানীয় নুরু সোলতানের ছেলে রুকু আলম এর পা কেটে ফেলে। বর্তমানে রুকু আলম পঙ্গুত্ববরণ করে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে। একই এলাকার আমির হোসেনের পুত্র ফরিদ আলম এর বসতভিটা জবরদখল করে আগুন দিয়ে জালিয়ে দখল করে নেয়। বড় হাবিরপাড়ার জহির আহমদ এর মার্কেট জোরপূর্বক দখল করেন। মৌলভীপাড়ার ফজল আহমদ এর মেয়ে মুবিনার বাড়িতে জোর করে ইয়াবা রেখে হিসেব গরমিল হওয়ায় ভিটে বাড়ি কেড়ে নেয়। বর্তমানে মুবিনা পালিয়ে তার বাপের বাড়িতে থাকে বলে জানা গেছে।
ইয়াবা ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান চট্টগ্রামে বসে নিয়ন্ত্রন করে। এখন রোহিঙ্গা ¯্রােতের সাথে মিশে গিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার সেই আবদুর রহমান রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রানও বিতরণ করেছে। তার রয়েছে কোটি কোটি অবৈধ টাকা, ৪টি ফিশিং বোট, দুটি আলিশান বাড়ি, নিজ নামে অনেক জমি, সেই সুবাধে বসে বসে নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে দেশের সমস্ত জায়গায় ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্চে। তার ইশারায় মায়ানমার থেকে ২/১ দিন পরপর বস্তা বস্তা ইয়াবার চালান আসে। সেই ইয়াবা খালাস ও নিয়ন্ত্রন করে তৌকির, রিদুয়ান, বশির ও একরাম। তারা আবদুর রহমানের নিয়ন্ত্রনে দেশের আনাচে-কানাচে পাচার করে এসব ইয়াবা। সেখানে একরাম বিয়ে করেছে মিয়ানমার থেকে সেই সুবাধে অহরহ ইয়াবার চালান খালাস করছে দেদারছে। সেই একরামের শ্বশুড় গোষ্টি এখন তার বাড়িতে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
চিহ্নিত এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষকে জিম্মি করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার সেই ইয়াবা গডফাদার আবদুর রহমান টেকনাফের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সাথে সখ্যতা রেখে চলাফেরা করছে প্রকাশ্যে। এভাবেই উখিয়া-টেকনাফের দাগী ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এলাকায় ফিরে এসে চলাফেরা করছে। চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের সাথে ইয়াবা ব্যবসা। বিশেষ করে তৌকির রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রান ও তাদের ইয়াবা ব্যবসা পার্টনারদের দেখাশুনা করছে।
বিগত ২৩ আগষ্ট শুরু হওয়া মিয়ানমারের প্রশাসন ও উগ্রপন্থি রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়ে সেদেশের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্টি এ দেশে পালিয়ে আসার সময় সীমান্ত প্রশাসন বিজিবি মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখে অনেক সময় অনুপ্রবেশ রত সীমান্ত চৌকি গুলোতে তেমন একটা তল্লাশি চালায় না। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের বাংলাদেশে ইয়াবা সরবরাহকারী গডফাদারেরা পালিয়ে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দিয়ে বিভিন্ন কলা-কৌশলে ইয়াবার চালান পাঠায় বলে জানা গেছে। এপারের রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ইয়াবাচালান পাঠিয়ে ওপারের গডফাদারেরা ফোনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক সুত্রে পূর্ব পরিচিত এপারের ইয়াবা গডফাদারদের বলে যে, অমুক এলাকা বা ঘাট দিয়ে আমার কিছু লোক যাচ্ছে তাদের মাধ্যমে মাল পাঠিয়েছি, এগুলো তালাশ করে নাও এবং তাদেরকে একটু দেখাশুনা কর। এইভাবে প্রতিদিনের চলমান রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘাট সংশ্লিষ্ট এলাকা গুলো গত কয়েকদিন ধরে সরেজমিনে পরিদর্শন করে এপারের চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়িদের এক রকম সরব পদচারণা লক্ষ করা গেছে। অনেক সময় দেখা যাই আগত রোহিঙ্গাদের অনেককে আত্বীয় পরিচয়ে এদেশের ইয়াবা গডফাদারেরা ভাগিয়ে ও নেতাদের আত্বীয় ও নিজ বাসা বাড়িতে স্থান দিচ্ছে বলে সচেতন এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছে।
অনুসন্ধ্যানে আরো জানা গেছে, রোহিঙ্গা ¯্রােতের সাথে সাথে একাকার হয়ে গেছে টেকনাফের শত শত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। রোহিঙ্গাদের মানবিক দৃষ্টিকোন দেখিয়ে কোন তল্লাশী না করার সুযোগে পালিয়ে থাকা অধিকাংশ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এলাকায় ফিরে এসেছে। বিশেষ করে টেকনাফ সদরের মৌলভীপাড়ার আবদুর রহমান সিন্ডিকেট সুযোগে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
কিছুদিন আগেও এই এলাকার ইয়াবা গডফাদার আবদুর রহমানের কাছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ২০ লক্ষ ইয়াবার চালান এসেছে।
উক্ত চালান সাথে করে নিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তার বাসাবাড়িতে আশ্রয় দিয়ে নিজের স্বার্থে ফায়দা লুটছে। এইভাবে সীমান্তের বড় বড় রাঘব বোয়াল ইয়াবা গডফাদারেরা মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন ইয়াবা বহনকারীদের মাধ্যমে ইয়াবা নিয়ে এসে তাদের নিজ ভিটে বাড়ীতে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং ইয়াবাগুলো দেশের নানা প্রান্তে পাচার করছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠছে। যা তদন্ত করলে বাস্তব চিত্র পাওয়া যাবে বলে সচেতন এলাকাবাসীর ধারনা। এসব কারণে আগত রোহিঙ্গাদের গণণা ও শুমারী করে সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্তপ্রাপ্ত এনজিও এবং সরকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থা গুলোকে। এ দিকে চলমান রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলোর ব্যস্ততম সময়ের কারনে ইয়াবা বিরোধী অভিযান কিছুটা শীতিল হওয়ায় এপারের তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদারদের অপতৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। তারা লেটেষ্ট মডেলের মটরসাইকেল, নোহা, মাইক্রোবাস, ইত্যাদি যান নিয়ে এলোপাতারী ঘুরাঘুরির কারনে এলাকার সাধারণ মানুষের আরামের ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব চিহ্নিত ইয়াবা গডফাদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে এলাকার পরিবেশ আরো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এলাকাবাসীর জোর দাবী জানিয়েছেন।
টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ সম্প্রতি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ইস্যুতে টেকনাফের কারো বাড়ীতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও ইয়াবার চালান রাখার প্রমান পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেও গডফাদারেরা এসবের তোয়াক্কা না করে নিজেদের স্বার্থের জন্য রোহিঙ্গাদের বাসাবাড়িতে আশ্রয় দিচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করছে।