ডেস্ক নিউজ:
জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেখতে আজ মঙ্গলবার উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সকালে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করার কথা রয়েছে তার। এ সময় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন। আর তাই রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রেহিঙ্গা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপেক্ষায় আছেন।
জেলা প্রশাসনের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার বেলা ১০টায় হেলিকপ্টারযোগে উখিয়ায় পৌঁছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সার্কিট হাউজে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর নামাজ ও মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে ৩টা ৫০ মিনিটে কক্সবাজার ত্যাগ করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
টানা দু’বারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি তার অষ্টমবারের মতো কক্সবাজার সফর। তবে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন। বিদেশি শরণার্থী শিবির হলেও নানা কারণে অপরাধ প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। তাই প্রধানমন্ত্রীর আগমনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে প্রশাসন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নতুন ও পুরাতন আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝেও আশার সঞ্চার হয়েছে। তাই ক্যাম্পের ভেতর রোহিঙ্গারে উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বক্তব্য দেয়ার ব্যবস্থা করছে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে ক্যাম্পের মাঝে খালি মাঠে তৈরি করা হচ্ছে একটি অস্থায়ী মঞ্চ।
এসব আয়োজন ও নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, পুলিশের আইজিপি শহিদুল হক, র্যাবের ডিজি বেনজির আহমদ, বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল আবুল হোসেন ও আনসার ডিজিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা সোমবার বিকেলে উখিয়ায় এসেছেন।
সোমবার সকালে এসে ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধরণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ কেন্দ্রীয় একাধিক নেতৃবৃন্দ।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি সদস্যরাও নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। একই সঙ্গে সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তৎপর রয়েছে। কয়েক হাজার নিরাপত্তাকর্মী ক্যাম্পের ভেতর ও বাইরে দায়িত্বপালন করছেন।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়। প্রধানমন্ত্রীর সফর সফল করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, টেকনাফ ও উখিয়ায় বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিচ্ছে সরকার। উখিয়ার কুতুপালংয়ে বন বিভাগের দুইশ একর জমিতে তিনশ শেড বানানোর কাজ সোমবার থেকে শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও পুরুষকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। পূর্ব থেকে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গাকে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিয়ে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি পার করলেও মানবিক কারণে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত ২৪ আগস্টের পর থেকে নতুন করে ৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। আসছে আরো রোহিঙ্গা। পুরাতন ও নতুন মিলিয়ে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থান করছেন।