জসিম উদ্দিন টিপু, টেকনাফ:
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে স্বয়ং আজ কক্সবাজার আসছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের সরকার প্রধান যখন নিজেই রোহিঙ্গাদের দু:খ-কষ্ট এবং এখানকার মানুষের সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে আসছেন। সে হিসেবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আশাবাদী পুরো কক্সবাজারবাসী। দীর্ঘ বছর ধরে ঝুলে থাকা এ সমস্যা, দূরদর্শী নেত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করছেন এখানকার আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। বিষয়টি অনেকটা কঠিন বলেও মনে করছেন রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টরা। তবে আন্তজার্তিকভাবে যথাযথ চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। জানা যায়, ২৪ আগষ্ট পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে সেনা ও পুলিশ ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন কর্তৃক সহিংস হামলার জের ধরে সে দেশের সেনা বাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথ অভিযানের নামে দমন পীড়ন ও নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে গত দুই সপ্তাহে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রায় তিন লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন। তারা টেকনাফ-উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশে পাশের এলাকায় অবস্থান করছেন। কিছু রোহিঙ্গা আবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছেন। এছাড়া আরো অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে গত শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মায়ার নেতৃত্বে সরকারের একটি বিশেষ টীম রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন। এ সময় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নতুন সব রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে আপাতত উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় আড়াই হাজার একর জমিতে রাখার কথা জানান। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিয়ে আন্তজার্তিকভাবে আলাপ আলোচনা চলছে। সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে দ্রুত রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন। বিজ্ঞজনেরা মনে করছেন, আসলেই রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান কতটুকু সহজ হবে? এ প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে। তবুও কক্সবাজারের মানুষ চেয়ে আছে দৃঢ়চেতা নেত্রী শেখ হাসিনার দিকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৮ইং থেকে ২০১৭ইং পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। ১৯৯২সনের সেপ্টম্বরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকার ইউএনএইচসিআরের সহায়তায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৪সনে স্থগিত হয়ে ২০০৫সনে একেবারেই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। স্থানীয়দের মতে শুরু থেকেই এ পর্যন্ত ছয় লাখের উপরে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। যার অর্ধেক রোহিঙ্গা এসেছে কিন্তু এবারে। রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হয়ে প্রায় সময় বাংলাদেশে চলে আসবে। বছরের পর বছর এখানেই থাকবে। এরা স্থানীয় মানুষের জীবন যাত্রায় প্রভাব ফেলবে। তাতো কিছুতেই হবে পারে না। টেকনাফ-উখিয়াসহ পুরো কক্সবাজারের মানুষ এবারে কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান। এক্ষেত্রে তারা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সরকার এবং দেশের সব রাজনৈতিক দলকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করার আহবান জানান। যুবদল নেতা রফিকুল ইসলাম অপি জানান, এত বছরে যে সমস্যার সমাধান হয়নি। সে সমস্যা সহজে সমধান হবে বলে মনে হয়না। তারপরও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান আশা করছি। টেকনাফের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী আব্বাছ আলী জানান, রোহিঙ্গারা আমাদের জীবন যাত্রায় পর্যন্ত প্রভাব ফেলেছে। বিশ্ব নেতারা চাইলেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: আলম বাহাদুর জানান, আর কত বছর রোহিঙ্গাদের এভাবে মাথার রাখব? তাঁরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবী জানিয়েছেন।