— শাহজালাল
পানের বাটা সাজিয়ে বসে আছে আলেয়ার মা মাহমুদা খাতুন। আজ আলেয়ার বিয়ের দিন ধার্য্য হয়েছে। পরের শুক্রবার আলেয়ার বিয়ে। রাজকুমারী জর্দার কৌটা মাহমুদা খাতুনের হাতে দিতেই চোখ পড়ে বরের বুড়ো দাদুর উপর। দাদু একনজরে চেয়ে আছে। রাজকুমারী জর্দার কৌটা দিয়ে বুড়োর কাছে এসে ফিস ফিস করে বলে, “মনে ধরেছে নাকি ?” দাদু উত্তরে বলেন, “বুড়োর কি মন থাকতে নেই” রাজকুমারী মুখ উচু করে একটু বড় করে বলে, “বিয়ের পূর্বে বিয়ে হউক” বলে ভেতরে রুমে চলে যায়। দাদু একনজরে চেয়ে থাকে। চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে । এক দশক পার হলে শতক হবে দাদুর। পরিবারের সবাই বারণ করেছিল না আসতে । বারণ করার স্বর্ত্ত্বেও নাত বউকে একনজর দেখতে এসেছেন। নাত বউকে না দেখে মারা গেলে আপসোস হয়তো থেকে যাবে। তাই লাঠিতে ভর দিয়ে খুব কষ্টে এসেছেন । রাজকুমারীকে দেখার পর থেকে নাত বউকে দেখার কথা বলেননি। আসার পর থেকে নাত বউকে দেখার জন্য অস্থির ছিলেন। হয়তো, রাজকুমারীকে নাত বউ ভেবে বসেছেন । ভাববার বিষয় আছে অনেক। রাজকুমারী হলো আলেয়াদের কাজের মেয়্।ে কখনও কেউ কাজের মেয়ে মনে করে না। নিজের মেয়ের মত করে দেখে। আলেয়ার জন্য যে পোশাক রাজকুমারীর জন্য সে পোশাক। আলেয়া কোন প্রসাধনী ব্যবহার করে না। এমনকি গয়ণাগাটি ও পরিধান করে না। সব গয়ণাগাটি রাজকুমারীই পরিধান করে। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, রাজকুমারীর দরিদ্র পিতা মেয়েকে খুব আদর করে রাজকুমারী ডাকত। ধীরে ধীরে রাজকুমারী নামটা প্রকাশ পায়। আসল নাম কেউ জানে না। সত্যিই রাজকুমারী নামটা মেয়েটার সাথে মানিয়েছে বেশ। যেমন ঘন কালো লম্বা চুল তেমন চোখের ভ্রু।
খাওয়া দাওয়া করে প্রয়োজনীয় কথা শেষ করে চলে যান বর পক্ষ।যদিও কনে দেখা হয়নি।বরের পিতা বার কণে দেখেছিলেন।কণে বরকে বেশ কবার উকি মেরে দেখেছেন।
আলেয়ার পিতা খুব ব্যস্ত। বিয়ের যাবতীয় কাজ তাকে সামলাতে হচ্ছে। সাথে ব্যবসা বাণিজ্য। আলেয়ার মা ঘর-দুয়ার পরিষ্কার এবং মেঝে লেপ দেওয়ার জন্য পাড়ার মধ্য বয়স্ক মহিলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আলেয়ার বেশ পরিবর্তন এসেছে সাজ-সজ্জায়। গুনগুন করে গান করে। আয়নায় নিজেকে নিজে দেখে। নিজের সাথে নিজেই কথা বলে আর হাসে। কিন্তু কারোর নজর নেই সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। আলেয়ার একমাত্র বন্ধু , ভাই মনছুর ।রক্তের সর্ম্পকে কেউ নয় পাড়াত চাচাত ভাই। বয়স দশ। খেতে খুব পছন্দ করে। গায়ের রং তেলতেলে কালো। পাড়ার সব খবরা খবর রাখায় তার কাজ। কারোর বিয়ে কিংবা কোন ঘটনা ঘটলে জানাতে আসে। আলেয়া মনছুরকে খুব আদর করে এবং খুব ভালোবাসে। এতো বেশী আদর করে যে,আচরণ দেখলে মনে হবে, মনছুরের বয়স পাঁচ পূর্ণ হতে আরো পাঁচ মাস বাকি আছে। তারা দু,জন দুজনকে খুব ভালোবাসে। বাড়িতে ভালো কিছু রান্না হলে , আলেয়ার জন্য নিয়ে আসে। বিয়ের দিন ধার্য্য হওয়ার পর থেকে সে বেপাত্তা । দিনে যে ছেলেটি দু-তিন বার না আসলে পেটের ভাত হজম হয় না। সে ছেলেটি ক’দিন যাবত আসে না। আলেয়ার চিন্তা হয় । কিন্তু কিছু করার নেই। সে বাড়ির বাহির হয় না অনেক দিন, পিতা পছন্দ করে না মেয়েরা বাড়ীর বাইরে যাক। মেয়েও পিতার মত হয়েছে । পিতার চাওয়ার চেয়ে বেশী পালন করে। সে নানার বাড়ী যাই না পাঁচ বছর।
সাদা শার্টের ভিতর কালো মানুষটি অর্থাৎ হবু বরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। বিয়ের দিন ধার্য্য হওয়ার পর থেকে পুকুর পাড়ে আসে। ও ! একটা কথা বলা হয়নি, আলেয়ার পিতা ইট এনেছিলেন ঘর নির্মাণের জন্য। কিন্তু পিতার ঘর ভেঙ্গে নির্মাণ করতে পারেন নি। সে ইট দিয়ে চারিদিকে দেয়াল দেন। পুকুর পাড়ে একটা পেয়ারা গাছ । গাছের কয়েকটি ঢাল দেয়ালের বাইরে গেছে। সে আসলে গাছের ঢাল নেড়ে সংকেত দেয়। এখনও আলেয়ার চাঁদ মুখ দেখেনি। তারপরেও বারবার ছুুেট আসে। বিকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি দু-জনে থাকে দেয়ালের দুপাশে। কিন্তু কারোর সাথে কেউ কথা বলে না। মাঝে মাঝে আলেয়া হেসে রসিকতা করার চেষ্টা করে। বিপরীত পাশ থেকে শুধু কাশির শব্দই আসে।
বুধবার খুব ভোরে মনছুর পুটঁলি নিয়ে বাড়ি আসে। পুটঁলিতে তার কাপড়-চোপড়। সবাই অবাক! মাহমুদা খাতুন বুকে জড়িঁয়ে নিয়ে আদর করে বলে,“বাপ এতদিন কোথায় ছিলি ? মনছুর উত্তর করেনা কিন্তু বলে ,“ মা বুবুকে তাড়িয়েই তবে বাড়ি ফিরবো।” সবাই হাসে, ছোট বেলা থেকে মা ডাকে। মাহমুদা খাতুন বলেন, “আমার ছেলে কোথাও যাবে না, আমার সাথে থাকবে । আলেয়া মনছুরকে নিয়ে ভেতরের রুমে চলে যায়। তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে গল্প শুরু করে। কিছুক্ষণ পর তাকে খালার বাড়ি পাঠায় খালাতো বোন রুপাকে আনতে। সে যাওয়ার সময় বলে, রুপাবুকে নিয়ে বাড়ি ফিরবো।” সে যাওয়ার পর থেকে দুপুর অব্ধি শুয়ে থাকে। মেহমান বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আসবে। দুপুরে খাওয়ার পর পুকুর পাড়ে বসে গান করে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়। কারো আসার খবর নেই । একটু চিন্তিত ! উঠে বাড়িতে যায়। বাড়িতে কয়েকজন মেহমান। ছোট খালা স্বামীসহ এসেছেন। তাদের সালাম করে পুকুর পাড়ে পূনরায় চলে আসে। মনটা খুব অস্থির, যে মানুষটা ক’দিন যাবত দুপুরের পর এসে পেয়ারা গাছের ঢাল নেড়ে সংকেত দেয়। সে মানুষটার কোন সাড়াঁ নাই। হঠাৎ গুড়–ম গুড়–ম বিকট শব্দ হয় ।গুলাগুলি শুরু হয়।প্রচন্ড শব্দে সে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। খানিক বাদে মনছুর ফিরে আসে। উঠানে বেশ ক’টি লাশ পড়ে আছে। আলেয়ার লাশ না দেখে আতকে উঠে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। সন্ধ্যা হয়ে আসে বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে । সারাগ্রাম আগুনে জ্বলছে। তার মাথায় একটা কথাই বাজতে থাকে আলেয়া বেঁচে আছে। সারা উঠান খুজে দেখে, না পেয়ে পুকুর পাড়ে চলে আসে। পেয়ারা গাছের নিচে আলেয়ার নিস্তেজ দেহ পড়ে আছে। অন্ধকারে ্আলেয়ার শরীরে হোঁচট খেয়ে মনছুর পড়ে যায়। অন্ধকারে দেখতে না পেলেও বুঝতে পারে কারো দেহ। সে নিশ্চিত হয় আলেয়া। তার পায়ে চোঁট লাগে। চোট লাগা পা নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে মুখ স্পর্শ করে। নোলক স্পর্শ হলে নিশ্চিত হয় । মুখ বুকে জড়িয়ে নিয়ে “বুবু” বলে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠে। কিছুক্ষণ পরে তার বুকে নিঃশ্বাসের স্পর্শ অনুভব করে। সে দ্রুত মাটিতে রেখে পুকুর থেকে পানি নিয়ে এসে মুখে পানি ছিটকে দেয়। অন্ধকারে কিভাবে যে পানি এনেছে তার মনে নেই। আলেয়ার জ্ঞান ফিরে আসে। মনছুর বুবু বলে কাঁদতে শুরু করে। কিন্তু সে নিস্তব্দ । কোন কথা নেই, নেই কাঁদার মত অনুভূতি। দুজনে দাঁড়িয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর মনছুর বোনের হাত ধরে উঠানে নিয়ে আসে। পিতা মাতার লাশের কথা বললেও নিশ্চুপ। প্রত্যেকের লাশ ছুয়ে ছুয়ে দেখায় তাকে। কিন্তু মুখে কোন কথা নেই, নেই কোন অনুভূতি। মনছুর কপাল ছাপড়াতে ছাপড়াতে কাদেঁ আর বলে, দেখ, শেষ দেখা দেখ। ” মাঝে মাঝে আগুনের ফুলকি উঠছে। কি করা উচিত কারো জানা নেই। মনছুরের দাদুর কথা মনে পড়ে। দাদু বলেছিলেন, ১৯৭৮সালে আরকানের মুসলিমদের উপর বর্বর নির্যাতন চালায় মিলিটারি। প্রাণ বাঁচাতে, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। কিভাবে আশ্রয় নিয়েছিল , শুনে নি। মনে মনে স্থির করে তাদেরকে বাংলাদেশে পাঁড়ি দিতে হবে। কিভাবে দিবে, কোন পথে যাবে, জানে না। যেভাবে হোক যেতে হবে। সে উঠে দাঁড়িয়ে বুবুর হাত ধরে বলে, বুবু চল। মুখে কিছু না বললেও তার সাথে চলে।
পালিয়ে আসার সাত দিন পর । খেতে পাগল ছেলেটা খেতে না পেয়ে শুকিয়ে কংঙ্কালসার হয়েছে। আলেয়ার চাঁদ মুখ ফ্যাকাসে হয়েছে । হাতের চুড়ি বেরিয়ে পড়ছে হাত থেকে। মনছুরের পেন্ট আটকানো হয়েছে লতা দিয়ে। আলেয়া একটু স্বাভাবিক হয়েছে কথাও বলছে। কিন্তু মনের ভেতরটাই চলছে অদ্ভুদ যন্ত্রণা। যে ছেলেটাকে আদর খাওয়াত তাকে কিছুই খাওয়াতে পারছে না।
তারা সীমানার একদম কাছে। বাংলাদেশের সীমানা থেকে নৌকা আসলে উঠে পড়বে। উঠতে পারলে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে গিয়ে কী হবে জানে না। তবে তাদের বিশ্বাস সে দেশে গেলে থাকতে পারবে। খেতে পাবে।
তাদের সাথে থাকা অনেকের হাতে পাউরুটি পানির বোতল। কে কাকে দিবে? মৃতে্যুর দুয়ারে এসে নিজের চিন্তা করা ছাড়া অন্যকারোর চিন্তা করা অসম্ভব। পাশের গ্রাম থেকে অনেকে এসেছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার জন্য। যে গ্রাম গুলোতে এখনও কোন রকম খুনাখুনি হয়নি, পোড়ানো হয়নি কোন ঘর বাড়ি। তারপরেও তারা ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। তাদের মধ্যেই এক মহিলা বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, সাথে স্বামী ছেলে-মেয়ে ।তাদের হাতে পাউরুটি পানির বোতল পলিথিনে শুকনা খাবার। আলেয়া উঠে তাদের কাছে যায়। মহিলার কাছে পাউরুটি ও পানি চাইলে না করে দেই। আলেয়া নাকের নোলক খুলে মধ্য বয়স্ক মহিলার হাতে দিয়ে কিছু না বলে একটি পানির বোতল নিয়ে নেয়। মধ্য বয়স্ক মহিলার কন্যা হাতের ইশারায় মাকে চুপ থাকতে বলে। পানির বোতল আর পাউরুটি পেয়ে খুব খুশি। মনছুেেরর পাশে বসে মনছুরকে খাইয়ে দেয় । প্রথমে গলা আটকে যায়্ । পানি খাইয়ে দেয়। মনছুর এক ঠুকরা খাওয়ার পর“ বুবু তুই নে ” বলে খাইয়ে দিতে চাইলে না করে । জোর করে খাইয়ে দেয়। খাওয়ার কিছুক্ষণ পর মনছুরের প্রচন্ড বমি হয়। বমির মাত্রা এতো বেশি যে , তার মনে হয় পেট থেকে নাড়ি ভূড়ি বের হয়ে আসছে। আলেয়া কেঁদে উঠে । সবাই তাদের ঘিরে ধরে। পেট থেকে বের হওয়ার মত আর কিছু নেই। তারপরে ও বমি হয় , রক্ত বমি।বমি করতে করতে সে ক্লান্ত। তার চোখ বন্ধ হয়ে আসে।টানা সাত আট দিন না খেয়ে অসুস্থ হয়নি ।খেতে পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছেলেটা। জড়– হওয়া অনেকে আপসোস করে কিন্তু তাদের কিছুই করার নেই। সে হাত উপরে তুলার চেস্টা করে ।শেষ পর্যনÍ তুলতে সক্ষম হয়।সারা মুখ একবার স্পর্শ করে।হাত নিচে পড়ে যায়।শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মনছুর বোনের গলা ধরে আছে। আলেয়া তাকে দু-হাতে জড়িয়ে ধরে। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তখন তার দু ঠোঁট খোলা। মনে হচ্ছে ঠোঁট দিয়ে বুবু শব্দটাই বের হবে।আলেয়ার চোখ দিয়ে পানির ঝর্ণা বয়ে গেলেও মুখ দিয়ে “উ” শব্দ বের হয়নি।সবাই ধরাধরি করে দেহ আলাদা করে।ঘন্টখানেকের মধ্যে প্যারাবনের মাঝখানের নরম ভ’মিতে কবরস্ত করা হয়।বিনা কাফনে দাফন ,। গোসল দেয়া হয়নি । জানাযার মাঠ সুসুভিত হয়নি গোলাপ জলের সুগন্ধে ।আত্মীয অনাত্মীয়ের কান্নার আওয়াজে মুখরিত হয়নি চারপাশ।বিনা দাফনে কত শত মানুষ পঁচেগলে মাটির সাথে মিশে গেছে হিসেব নেই।
আলেয়া খুব একা হয়ে পড়ে। তার আপন বলতে কেউ নেই। রাত দশটার দিকে একজন লোক আসে। সে বলে,“ রাত তিনটায় ঘাটে নৌকা আসবে। সবকিছুর ব্যবস্থা হয়েছে। কে কে যাবে ? গেলে দুই হাজার টাকা দিন”। শুনে শুনে বড় হয়েছি ঘাট পার হতে মাঝিরা এক আনা কিংবা দু আনা নিত। সময়ের সাথে বাড়লে সর্বোচ্চ একশত টাকা পর্যন্ত হওয়ার কথা। কিন্তু দুই হাজার টাকা! কী অবাক কান্ড! এরা মাঝি না, দালাল। মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশ সীমানায় পৌঁছে দেওয়াই তাদের কাজ। আলেয়ার হাতে কোন টাকা পয়সা নেই। তাই চুপ থাকে সে। খানিকবাদে তার মনে হয় হাতেরচুড়ি দিয়ে ঘাটের টাকা পরিশোধ করবে। লোকটিকে ডেকে চুড়ি জোড়া তোলে দেয়। লোকটি খুশি হয়ে তার হাতে থাকা পানির বোতল ও কিছু খাবার আলেয়ার হাতে দিয়ে প্রস্থান করে। সে খুশি মনে কিছু না ভেবে খেয়ে নেয়। রাত তিনটা বাজে, নৌকার কোন হদিস নেই। সবাই উৎকন্ঠা! ! একেক জন একেক জনকে প্রশ্ন করে ,কারো কোনো উত্তর নেই। তিনটা পেরিয়ে ভোর হয়। আজান দেওয়ার কিছুক্ষণ পর লোকটা আসে । তখন দিনের আলোতে সবকিছু পরিস্কার দেখা যাচ্ছে । তাদেরকে তোলা হয় নৌকায়। আলেয়া একপাশে বসে। ছোট ছেলেমেয়ে বৃদ্ধ সহ আঠারো বিশ জন নৌকার । হঠাৎ চোখ পড়ে বিপরীত পাশে, সাদা শার্টের ভেতর সেই কালো মানুষটি। তার দিকে বার বার দেখে , সে ও দেখতে থাকে । কিন্তু সে চিনতে পারে না, চেনার কথাও না।সে মানুষটি আলেয়াকে দেখেনি ,আলিয়াই দেখেছিলো। আলেয়া ভাবে কিভাবে সে কথা বলবে। না, বলবে না। ভাবতে ভাবতে নৌকা পৌছায় বাংলাদেশের সীমান্তে। নৌকা থেকে নিচে নেমে ছেলে মেয়েসহ বৃদ্ধদের নামতে সাহায্য করে। সবাই নেমে পড়ে শুধু নৌকায় আলেয়া। আলেয়া নামতেই মুখ ঘুরিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে সে। আলেয়া খুব গম্ভীর সরে বলে,“ আমাকে ধর আমি পড়ে যাচ্ছি”। মুখ ঘুরিয়ে দেখে। কিছুনা বলে দাঁড়িয়ে থাকে, দাঁড়িয়ে থাকে দুজনে।খানিকবাদে ,আলেয়া অনেক ভেবে চিন্তে বলে ,“আমি আলেয়া” । নাম শুনে সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে। গভীর আনন্দে মুখ পানে চেয়ে দুহাত প্রসারিত করে মৃদু হাসে। আনন্দের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। দুফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ে।অন্যদিকে আনন্দে চোখের তারা নাচাতে নাচাতে এক কদম সামনে এগিয়ে আশে আলেয়া।আবেগ আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরার অনূভুতি জাগলেও থমকে যায় সে।অল্প সময় বিরতী দিয়ে হাত ধরে নৌকা থেকে নিচে নেমে আসে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।