পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কথাবলে জানা যায়, রাখাইন রাজ্যের স্থানীয় মগ ও সেনাবাহিনী মিলে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, নারীদের চরম নির্যাতন করে যুবকদের প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করছে। তাদের দাবি চলমান সহিংসতায় লক্ষাধিক লোকজন হতাহত হয়েছে। চলাচলের পথে মাইন দিয়ে রাখায় দিনদিন আরো হতাহতের ঘটনা বাড়ছে। ৪ ই সেপ্টেম্বর তুমব্রু সীমান্তে মাইনের আঘাতে এক রোহিঙ্গা নারী ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এসব সহিংসতার কারণে মুসলমান রোহিঙ্গা ও হিন্দুরা দেশত্যাগ করে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বারংবার প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। এদের অনেকেই বাংলাদেশ সীমান্তের ভিতরে চলে এসেছে। আবার অনেক রোহিঙ্গা জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছে। পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদেরকে দেখা যায়, কেউ সামান্য কাপড় ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে চলে এসেছে আবার অনেকে এক কাপড়ে চলে এসেছে।
কুতুপালং আনরেজিষ্ট্রাট ক্যাম্পের রাস্তার পাশে বসে থাকা কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলে জানা যায়, পাথেয় হিসেবে প্রায় সকলে গৃহপালিত গবাদি পশু গুলো নিয়ে আসতেছে যেন উপস্থিত বিপদ সংকোলন করা যায়। তবে সীমান্তে কতিপয় দালালরা ঝাঁপটা মেরে আছে শুধু রোহিঙ্গাদের গরু-মহিষ, ছাগলগুলো কেনার জন্য। এসব দালালরা সিন্ডিকেট বসিয়ে কারবারি করার দরুন তারা সঠিক দাম না পেয়ে হয়রানির মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা আরো জানায়, বাংলাদেশে এনে যতসামান্য দাম দিয়ে এসব গুরু ছাগল বিক্রি করে কোনরকম পলথিনের মোড়ানো আবাসস্থল নির্মানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রাঁণ রক্ষায় চলে আসা রোহিঙ্গারা বলেন, এদের অধিকাংশই চার-পাঁচদিন অভুক্ত অবস্থায় না খেয়ে আছে। কেউ কেউ অভুক্ত অবস্থায় খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মিয়ানমারের নির্মম সহিংসতায় বাংলাদেশের সীমান্তে চলে আসা এসব রোহিঙ্গাদেরকে উখিয়ার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানবিক মানুষরা খাবার বিতরণ ও প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
কুতুপালংয়ের কলেজ ছাত্র মিজান জানায়, এদের অধিকাংশ উলুবনিয়া, আমতলি, ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে এসেছে। তার ভাষ্যনুযায়ী পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ নারী এবং শিশু তবে পুরুষদের সংখ্যা তুলনামুলক কম । সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুতুপালং ও ঘুমধুম- তুমব্রুতে মোড়ে মোড়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসা গরু মহিষের জমজমাট হাট বসেছে। সেখান থেকে বিভিন্ন বেপারিরা পানি মুল্যে এসব গরু-মহিষ কিনে এনে জেলাব্যাপি ছড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কোনভাবে বেঁচে থাকার মানসে উখিয়ার কুতুপালং, ঘুমধুম, তুমব্রুর পাহাড় ও সমতলভুমিতে পলথিন মুড়িয়ে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঘর বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। এছাড়া অভুক্ত পরিবারের লোকজনদের খাবার খাওয়ানোর মানসে ক্যাম্পের কয়েকজনে মিলে মাটির চোলা তৈরি করে রান্না করার পরিবেশ করছে।
এদিকে অভুক্ত শিশুরা তাবুর নিচে খাবারের অভাবে হাউমাউ কান্নাকাটির আহাজারি পরিবেশ যে কারো স্বাভাবিকতাকে অস্থির করে দিচ্ছে। আরো দেখা যায়, কোন স্বেচ্ছাসেবী তাদেরকে খাবার দিতে গেলে হাহাকার মনোভাবে তারা হাত উঁচিয়ে অভুক্ত চেহারায় ভীড় করছে রীতিমত। বিজিবি সদস্যদের সহমর্মিতার মনোভাবে জিরো পয়েন্টের নিকটস্থ বাড়িঘর হতে তাবুতে অবস্থিত রোহিঙ্গারা খাবার পানি কলসি ভরে নিতেও দেখা যায়। এমনকি উদার মনোভাবের মানসিকতায় নতুন করে গড়ে উঠা ক্যাম্প গুলোতে স্থানীয় উপজেলার বিভিন্ন তরুনরা এবং সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার পরিবেশন করে সহানুভুতি প্রকাশের চেষ্টা করছেন। এতে এসব রোহিঙ্গারা একবেলা খাবার পেয়ে সন্তুষ্ট হচ্ছেন।
অন্যদিকে যেসব রোহিঙ্গা আহত ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে তারা কুতুপালং এমএসএফের ক্লিনিকে প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা সেবা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সেখানকার এক চিকিৎসক জানায়, প্রতিদিন শতশত আহত নারী পুরুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। ছোট ছোট শিশুরা পানিতে ভিঝে যাওয়ায় নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এতোসব রোহিঙ্গাদের অনুপ্র
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।