নদীর যতো জলের ধারা সাগর বুকে বয়
মনীষ পাল ,টরন্টো থেকে :
২৬ আগস্ট ২০১৭ -ঝকঝকে নীলাকাশ, মেঘের কোনো লুকোচুরি নেই , শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে শান্ত হ্রদ আর তার পার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে উপত্যকার প্রশস্ত উঁচু পাথরের দেয়াল আর তারই কোলে গাছপালা শোভিত ছায়ায় ঘেরা উদ্যান । পাহাড় আর হ্রদের এই অপূর্ব বিন্যাস পরিচিতজনেরা ব্ল্যাফারস পার্ক বললে নিমেষেই চিনতে পারেন । এটি হচ্ছে টরন্টোর দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তের স্কারবোরোর অন্যতম একটি পার্ক আর এটিকেই সেদিন বেছে নেয়া হয় টরন্টোয় কক্সবাজার এর অভিবাসীদের প্রথম মিলনমেলার পরিসর হিসেবে । কক্সবাজার এর ঐতিহ্যবাহী রকমারী খাবারের আয়োজন ছিল তাতে । বৃহত্তর টরন্টোর নানান উপশহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করছেন, এই মেলা উপলক্ষে মিলিত হয়েছিলেন সবাই এদিনের এই আয়োজনে। কক্সবাজার এর সমুদ্র আর বেলাভূমির মেজাজ আর বৈশিষ্টকে ধারণ করবার একটা চেষ্টা ছিল আয়োজনকারীদের আর তাই এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘নদীর যতো জলের ধারা সাগর বুকে বয়’ । নির্মলেন্দু গুণের কবিতায় জলের গুনগান আর কক্সবাজারবাসীদের জন্য এর চেয়ে যোগ্য আর কিই বা হতে পারে I কক্সবাজার এর মানুষের জলের প্রতি টান আপ্রাণ, সেই মাটিতে জন্মের কারণেই । সাগরের নীল জলরাশির সাথে সখ্যতা করেই তো কক্সবাজার এর মানুষের জন্ম, বেড়ে ওঠা । আর যারা সম্পর্কের টানে এসেছেন কক্সবাজারে , সময়ের সাথে সাথে মনের মানুষের সাথে সম্পর্কের
নিবিড়তা বাড়িয়েছেন অথচ সৈকত এর বালুচর , ঝাউবন , সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ ভালোবাসেননি , তা তো হতে পারে না I তাদের সবাইকে নিয়েই প্রথমবারের মতো টরন্টোয় কক্সবাজার এর অভিবাসী পরিবারগুলো মেতে উঠেছিল এদিনের মিলনমেলায় ।স্কারবোরোর প্রাণকেন্দ্রের এই পার্কে সকাল দশটা থেকে অতিথিরা জড়ো হতে শুরু করেন। সকাল গড়িয়ে দুপুর হতেই কক্সবাজার এর অভিবাসী , তাদের পরিবারবর্গ, আত্মীয়স্বজন ও অতিথিদের পদচারনায় মিলনমেলা সরগরম হয়ে ওঠে। দুপুরের আয়োজনে ছিল সুস্বাদু পোলাও, চিকেন রোষ্ট, মাটন্ কারী, সালাদ এবং পানীয় সহ খাবারের আয়োজন ও পরিবেশনা । খাওয়া দাওয়া তো ছিলই, তার চেয়ে বড়ো ব্যাপার ছিল সবার সাথে দীর্ঘদিনের সেই পুরোনো যোগাযোগটা ঝালাই করে নেয়া I চমৎকার সব মানুষগুলোকে কাছে পেয়ে
অনেকেই স্মৃতিচারণে মেতে উঠেছিলেন , নতুন অনেককেই জানবার সুযোগ হয়েছে , একেবারে ঘরের কাছের অথচ জানাপরিচয় ছিল না , এমন অনেকের সাথে পারস্পরিক পরিচয় এর এক অনবদ্য সুযোগ ছিল এটি । অংশগ্রহণকারীদের জন্য এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা । এই মিলনমেলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পরবর্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করবার জন্যে নতুন পাঁচজনকে দায়িত্ব দেয়া হয় ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ,এই মিলনমেলার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন বিশিষ্ট রোটারিয়ান আনোয়ার সাদাত আর তাঁর সহধর্মিনী আফরোজা মমতাজ ।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামতেই বিদায়ের রাগিনী বেজে ওঠে । সারাদিনের ঝকঝকে নীলাকাশে গোধূলির বিষন্ন রং উঁকি দিতে শুরু করে কি করছে আর পরিবার পরিজনেরা একে অপরের কাছে বিদায় নেবার জন্য হাত বাড়াতে শুরু করেন I রবীন্দ্রনাথের সেই অমোঘ বাণী যেন সবার মনকেই শেষবারের মতো আরেকবার নাড়িয়ে দিয়ে যায় – ‘ যেতে নাহি দিব হায় , তবু যেতে দিতে হয় , তবু চলে যায় ।’
ছবি : আফরোজা মমতাজ