উগ্রপন্থা দমনের অজুহাতে বোমা মেরে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী। জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য দাবি করে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরাকানের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার তরুণদের। তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাণ বাঁচাতে সীমান্তে এসে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গারা।

রোববার আরাকানের আকাশে উড়ে আসা হেলিকপ্টার এলাকা ত্যাগ করার পর পরই নতুনভাবে শুরু হয় আক্রমণ। শোনা যায় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা ও শিশুর কান্নার আওয়াজ। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে সোমবার সারাদিন থেমে থেমে গুলির আওয়াজ ও ওপারের অনেক এলাকায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী আতঙ্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সীমান্তে বাড়ছে রোহিঙ্গা উপস্থিতি।

rohingya

রোহিঙ্গারা বলছেন, তারা উভয় সঙ্কটে পড়েছেন। নিজ দেশে বর্মী বাহিনীর নিপীড়ন ও সীমান্ত পার হলে বিজিবির বাধা। জিরো পয়েন্টে খোলা আকাশের নিচেই তাদের আশ্রয়স্থল।

রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহারে তরুণদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। যাদের ধরতে পারছে না তাদের গুলি করা হচ্ছে। বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে সব পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

রাখাইন রাজ্যের ঢেঁকিবনিয়ার উত্তরপাড়ার আহমদ হোসেন মুঠোফোনে জানান, রোববার খুব ভোরে সেনাবাহিনীর একটি দল গ্রামে ঢুকে স্থানীয় জহির, করিম ও আব্দুর শুক্কুরকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় তারা পালিয়ে পাশের পাহাড়ে আশ্রয় নেন। পরে ওই তিন তরুণের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় জঙ্গলে ফেলে দেয়া হয়।

rohingya

ঢেঁকিবনিয়া পূর্বপাড়ার আবছার কামাল জানান, সেনাবাহিনী সন্ধ্যার পর বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেছে। যেসব বাড়িতে মানুষ পাচ্ছে না সেসব বাড়ি বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। যাকে পাচ্ছে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

সোমবার সকালে উখিয়ার পালংখালী আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া আহমদ শফি জানান, ফকিরপাড়ায় গত দুই দিন ধরে সেনাবাহিনী বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে। প্রকাশ্যে অনেককে হত্যা করছে।

উখিয়ার পালংখালী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোজাফফর আহমদ বলেন, নাফ নদী পার হয়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নদীর পারে অবস্থান করছে। ওপারে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ পাচ্ছি। শুধু তাই নয় শোনা যাচ্ছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের কান্নার আওয়াজ। রোববার সন্ধ্যার পর থেকেই থেমে থেমে গুলির শব্দ এবং আগুনের শিখাও দেখা যাচ্ছে।

রোববার বিকেলে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করে বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সীমান্ত সিল করে দেয়া হয়েছে।

rohingya

এদিকে মিয়ানমারের গুলিবিদ্ধ সাতজন ও পুড়ে যাওয়া দুজন রোহিঙ্গাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুনে পোড়া নুরুল হাকিম (২৬) ও পারভেজকে (২০) চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

গুলিবিদ্ধরা হলেন- মামুনুর রশিদ (২৭), সাকের (২৭), সাদেক (২০), জাহেদ (২০), নুরুল আলম (১৫), আবুল কাসেম (২০) ও নুরুল আমিনকে (২২)। রাত ২টার দিকে তাদের হাসপাতালে আনা হয়। রোববার সকালে চমেকে আনা হয় আরও চার রোহিঙ্গাকে। তারা হলেন- জিয়াবুল (২৭), মো. ইলিয়াছ (২০), মো. তোহা (১৬) ও মোবারক হোসেন (২৫)। তারও আগে আনা হয় গুলিবিদ্ধ তিনজনকে। এর মধ্যে একজন মারা যান।

চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মো. আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, আহতদের কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেকে নিয়ে আসা হয়। তাদের কক্সবাজার জেলা পুলিশের পাহারায় রাখা হয়েছে।

হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, আগুনে ঝলসে যাওয়া দুজনকে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। তাদের শরীরের ৫০ ভাগ পুড়ে গেছে।

সায়ীদ আলমগীর/জাগো নিউজ