ধর্ম ডেস্ক:
হজ আল্লাহ তাআলা সর্বোত্তম ইবাদত। পবিত্র নগরীর একাধিক স্থানে বিভিন্ন রোকন যথাযথ নিয়ম-কাননু মেনে আদায় করতে হয়। আর তা যদি যথাযথ আদায় করা যায়, তবে এর বিনিময় শুধুমাত্র জান্নাত। প্রিয়নবরি প্রশ্নোত্তরে হজযাত্রীদের হজের রোকনগুলো আদায়ের বিশেষ উপকারিতা ওঠে এসেছে।

হজ সম্পাদনের প্রতিটি রোকনের রয়েছে আলাদা আলাদা ফায়েদা। যা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনি সাকিফ গোত্রের এক লোক এবং একজন আনসারি সাহাবিকে মিনায় অবস্থান কালে জানিয়েছিলেন। হজের রোকনগুলোর ফায়েদা সম্পর্কিত বিশ্বনবির হাদিসের আলোচনার সার নির্যাস তুলে ধরা হলো-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে মিনার মসজিদে বসা ছিলাম। ওই সময় এক আনসারি সাহাবি ও বনি সাকিফ গোত্রের এক লোক এসে প্রিয়নবিকে সালাম দিল।

অতঃপর তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে এসেছি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা যা জানতে এসেছ তা সম্পর্কে আমি কি তোমাদের সংবাদ দেব? যদি তোমরা না চাও তাহলে আমি সংবাদ দেব না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তা আমাদের অবহিত করুন।

সাকিফ গোত্রের লোকটি আনসারি সাহাবিকে বলল, আপনি প্রশ্ন করুন? আনসারি সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে অবহিত করুন।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উভয়কে (অবাক) করে দিয়ে বলেন, তোমরা এসেছিলে আমার কাছে এ বিষয়গুলো জানতে-
>> বাইতুল্লাহর উদ্দেশে নিজের ঘর থেকে বের হওয়ার উপকারিতা কী?
>> তাওয়াফের পর দু’রাকআত নামাজের উপকারিতা কী?
>> সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সাঈ করার উপকারিতা কী?
>> আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের ফায়েদা কী?
>> জামারাতে পাথর নিক্ষেপের উপকারিতা কী?
>> মাথা মুণ্ডনের উপকারিতা কী?
>> ফরজ তাওয়াফ আদায়ের ফায়দা কী?

(প্রশ্নগুলো শোনে) আনসারি সাহাবি বলল, আল্লাহ আপনাকে সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, আমরা এ বিষয়গুলো জানতেই এসেছি।

অতঃপর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে যা অবহিত করলেন, তাহলো-

>> বাইতুল্লাহর লক্ষ্যে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে সাওয়ারি বা যানবাহনে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির আমলনামায় সাওয়াব লেখতে এবং গোনাহ মাফ করতে থাকেন।

>> তাওয়াফের পর (মাকামে ইবরাহিমে) দু’রাকআত নামাজ আদায় করলে বনি ইসমাইলের গোলাম আজাদ করার সমান সওয়াব দান করা হয়।

>> সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সাঈ করার ফলে ৭০টি গোলাম আজাদ করার সওয়াব দেয়া হয়।

>> আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের সময় আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং তোমাদের (হজ পালনকারীদের) নিয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন-

‘আমার বান্দারা ধূলায় ধূসরিত হয়ে এলোমেলো চুল নিয়ে পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চল হলে জান্নাত লাভের আশায় এসেছে। তাদের গোনাহ যদি বালু রাশি, বৃষ্টির পানি কিংবা সমুদ্রের ফেনাসমও হয়; আমি তাদের ক্ষমা করব। আমার বান্দাহদের ক্ষমার সংবাদ দিয়ে দাও। আর তারা যাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদেরকেও (ক্ষমার) সংবাদ দিয়ে দাও।’

>> (মিনায়) জামারাতে প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে একটি করে কবিরা গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
>> মাথা মুণ্ডনে (ফলে ওই ব্যক্তির) প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি করে সাওয়াব লেখা হয় এবং একটি করে গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।

>> (মাথা মুণ্ডনের পর) ফরজ তাওয়াফের সময় (ওই ব্যক্তি) গোনাহমুক্ত। (সে) নিষ্পাপ হিসেবে তাওয়াফ করবে। তাওয়াফের সময় একজন ফেরেশতা (হজ পালনকারীর) কাঁধে হাত রেখে বলতে থাকে, ‘আল্লাহ আপনার আগের সব গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। (সুতরাং) ভবিষ্যতের জন্য (আপনি) নেক আমল করুন।’

এ হলো বিশ্বনবি ঘোষিত হজের রোকনগুলো যথাযথভাবে আদায়ের ফজিলত বা উপকারিতা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজের প্রতিটি রোকন যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। হজের সফর থেকে নিষ্পাপ হয়ে নিজ ঘরে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। হজযাত্রীদের প্রত্যেককে হজে মাবরুর লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।