ডেস্ক নিউজ:

আদালতের রায়ে বিলুপ্ত হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পরবর্তী বিতর্ক ও প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এবং বিএনপির নেতারা তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি ফেরানো নিয়ে কথা বলতে শুরু করায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল।

জানা গেছে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় আওয়ামী লীগের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। রায় পরবর্তী বিতর্ক ও প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এবং বিএনপির নেতারা তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি ফেরানো নিয়ে কথা বলতে শুরু করায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। এ রায়ের পরই নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়টিও। বাতিল হওয়া এই পদ্ধতি পুনরুজ্জীবনে রিভিউ করা না করা নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এর প্রেক্ষাপটে রবিবার (২৭ আগস্ট) সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কবর হয়েছে। তাই এখানে কেউ হাত দিতে চাইলে তার হাত পুড়ে যাবে।’

ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার কোনও সুযোগ নেই। আর এই সংশোধনী আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলে জল অনেক দূর গড়াবে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য বলেন, বিভিন্ন সময়ে প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস কোনও পক্ষ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আইনি কোনও গ্রাউন্ড নেই। এর ওপর একটি জাতীয় নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপরও কেউ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার প্রস্তুতি নিলে তা আলোর মুখ দেখবে না বলেই মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ওই নেতারা বলেন, জলঘোলা করার জন্য নির্বাচনের আগে হয়ত কেউ কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখতে পারে। কিন্তু তাতে সফল হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার বিধান বাতিল করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। তার নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে বাতিলের রায় দেন। রায়ে বলা হয়, ‘১৯৯৬ সালে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে বাতিল করা হলো।’ এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আপীল বিভাগ কর্তৃক রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনা: সংসদের যে কোনও আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে এবং আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রণীত যে কোন বিধি সাপেক্ষে আপীল বিভাগের কোনও ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকিবে।’

বিশিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পর রিভিউ হয়নি। এখন কেউ রিভিউ আবেদন করলে তার সুযোগ আছে। তবে ফিরবে কি ফিরবে না– তা উচ্চ আদালতের রায়ের আগ পর্যন্ত বলা যাবে না। এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিভিউ করার সুযোগ আছে।’

এর আগে এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘রায়ের পর তো নির্বাচন হয়ে গেছে। কজ তো অলরেডি ইনফ্র্যাকচার্স হয়ে গেছে। অবজারভেশনে থাকলেও সেটি যদি মেইন জাজমেন্টে না থাকে, তাহলে ইম্প্লিমেন্ট করার স্কোপ নাই।’ রিভিউ করার সুযোগ আছে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘চাইলে রিভিউ করা যাবে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না। অ্যানাফ ইজ অ্যানাফ। তবে বলতে চাই জুডিশিয়ারির উপর জনগণের আস্থা আছে, বলতে চাই তা যেন থাকে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জলঘোলা করতে অনেকেই অনেক চক্রান্তে লিপ্ত হতে পারে, কিন্তু সুফল ঘরে তুলতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবায়ক সরকার বাতিল হয়ে গেছে। তারপরও এই পদ্ধতি ফিরবে– কেউ এমন স্বপ্ন দেখতে পারেন কিন্তু বাস্তবায়ন হবে না, নিশ্চিত করেই বলতে পারি।’