বিদেশ ডেস্ক:
আজ সোমবার ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু ডেরা সাচা সৌদার প্রধান রাম রহিম সিং-এর সাজা ঘোষণা করা হবে। ঝুঁকি এড়াতে জেলগেটেই আদালত বসিয়ে তার বিচার সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা গেছে, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রোহতকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেজন্য গুরমিত সিংয়ের পরিচালিত ১০৩টি ডেরা থেকে তার ভক্তদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা। থমথমে রোহতকে সেনা মোতায়েনের কথাও জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস রাম রহিমের সাজাকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারির খবর দিয়েছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া তাদের অনলাইন ভার্সনের শিরোনামে লিখেছে: ডেরা প্রধানের সাজা ঘোষণার দিনে রোহতক উত্তপ্ত। রোহতকে সেনা মোতায়েন রয়েছে বলেও জানিয়েছে ওই সংবাদমাধ্যম। এনডিটিভির ওয়েবসাইটে রাম রহিমের ঘাঁটি থেকে হাজারও ভক্তকে উচ্ছেদ করার খবর দেওয়া হয়েছে। হিন্দুস্থান টাইমস লিখেছে: আজ রাম রমিহের সাজা ঘোষণা, রোহতক যেন দূর্গ, বন্ধ থাকবে স্কুল-কলেজ।
১৫ বছরের পুরনো এক ধর্ষণ মামলায় শুক্রবার সিবিআই-এর আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন রাম রহিম। বিচারপতি জগদীপ ২০০২ সালে নিজ আশ্রমে দুই নারী অনুসারীকে ধর্ষণ করার দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। রায় ঘোষণার পর একটি সরকারি হেলিকপ্টারে করে কথিত এই ধর্মগুরুকে নিয়ে যাওয়া হয় রোহটাকে। রাম রহিম এখন সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সুনারিয়ার ডিস্ট্রিক্ট জেলের একটি বিশেষ সেলে বন্দি রয়েছেন।
শুক্রবার আদালতের রায়ের পর যেভাবে বিভিন্ন জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছিল ডেরা অনুগামীরা তারপর আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় হরিয়ানা প্রশাসন।হরিয়ানার রোহতক জেলা ও সুনারিয়া জেল চত্বরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সুনারিয়া জেলে নিয়ে আসা হবে বিচারককে। সেখানেই সাজা ঘোষণা করবেন তিনি। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট নির্দেশ মেনে আজ দুপুর আড়াইটে নাগাদ কড়া নিরাপত্তায় বিমানে করে বিচারক জগদীপ সিংকে জেলে নিয়ে আসা হবে। জেল গেটেই সাজা ঘোষণা করবেন তিনি।
হরিয়ানার পাঁচকুলাতে গত শুক্রবার সিবিআই আদালত রাম রহিমকে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত করলে তার হাজার হাজার ভক্ত হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন, ট্রেন-বাসও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেদিনের সহিংসতায় অন্তত ৩৫জন নিহত ও আরও বহু লোক আহত হওয়ার পর অভিযোগ ওঠে, হরিয়ানা প্রশাসন পরিস্থিতি সামলাতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে। সোমবার যাতে সেদিনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না-হয়, তার জন্য চরম সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।
৫০ বছর বয়সী বাবা গুরমিত রাম রহিম সিংকে এখন বন্দি রাখা হয়েছে রোহটাকের সানোরিয়া জেলে, যেটি রোহটাক শহর থেকে দশ কিলোমিটার দূরে। শহর থেকে যে রাস্তাটি জেল অভিমুখে যাচ্ছে, সেটি আর কারাগার চত্বর ঘিরে রেখেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ আর হরিয়ানা পুলিশের সদস্যরা। বাবা গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের আশ্রম, ‘ডেরা সাচ্চা সওদা’-র ভক্তদের রোহটাক বা তার আশেপাশে কোথাও ঘেঁষতেই দেওয়া হচ্ছে না বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হরিয়ানা জুড়ে বাবা গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের যে প্রায় গোটা তিরিশেক ‘ডেরা’ আছে তার সবগুলোই পুলিশ এর মধ্যে সিল করে দিয়েছে। ডেরার যে প্রধানরা ভক্তদের জুটিয়ে আনার ক্ষমতা রাখেন, আটক করা হয়েছে তাদেরও অনেককেই।রোহটাকের আশেপাশের জেলাগুলোকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে কোনও ডেরা ভক্ত যাতে রোহটাকে ঢুকতে না-পারে।
এদিকে ডেরা সচ্চা সওদা-র মূল আশ্রম যেখানে, সেই সিরসা-তেও ব্যাপক নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছে।
রোহটাকের পুলিশ প্রধান নভদীপ সিং ভির্ক জানান, সোমবার রোহটাককে শান্তিপূর্ণ রাখতে জেলায় মোট ২৮ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে সেনাবাহিনীকেও। তবে লক্ষ লক্ষ ডেরা ভক্ত পাঁচকুলায় গিয়ে গত শুক্রবার যেভাবে সহিংস বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন, রোহটাকে তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না বলেই পুলিশ আশা করছে। ভক্তরা দলে দলে রোহটাক অভিমুখে আসছেন বলেও কোনও খবর নেই।
জেল চত্বরের ভেতরেই বিচারক বন্দি নম্বর ১৯৯৭, বাবা গুরমিত রাম রহিম সিংকে তার সাজা পড়ে শোনাবেন। অর্থাৎ সাজা শোনার জন্য রাম রহিমকে কোর্টে নেওয়া হবে না, কোর্টই তার কাছে আসবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।