রফিক মাহমুদ, কক্সবাজার :

বডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেছেন, জিরো লাইন ক্রস করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ত্বের উপর বিন্দু পরিমান আঘাত হলে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।  রবিবার বিকাল ৪টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যছড়ির সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে ৩৪ বিজিবির ঘুমধুমস্থ ক্যাম্পে সাংবাদিকরে ব্রিফ্রিংকালে তিনি বলেন, আমরা অনেক ধর্য্যধরেছি। আমাদের বিজিবির সদস্যরা সবসময় কঠোর সর্তক অবস্থায় রয়েছে। পাশা পাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পুরো সীমান্ত এলাকায় দিবারাত্রি বিজিরি টহল জোরদার রয়েছে। এছাড়াও তিনি বলেন, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) পুলিশ বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করতে চেষ্টা করলে তার দাত ভাংগা জবাব দেওয়া হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিজিবির সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল কামরুজ্জমান, বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলিপ কুমার বনিকসহ বিজিবি ও সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

গত ৪দিন ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও রাখাইনদের নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও ঘর-বাড়ি জ¦ালিয়ে দেওয়া এবং নৃশংসতায় শিকার হয়ে রাতের আধারে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অব্যহত রয়েছে। বিশেষ করে গত শুক্র, শনি ও রবিবার সকালের সহিংসতা আর গোলাগুলির পর রাখাইন রাজ্য থেকে এই পযর্ন্ত হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার লেদা,মুছুনি,নয়াপাড়া ও উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এবং বালুখালী শরনার্থী শিবির গুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। আরও পালিয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছে ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম। বর্ড়ার গার্ড় বাংলাদেশ (বিজিবির) কড়া সর্তক থাকার পরেও বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে দলে দলে ঢুকে পড়ছে তারা। নাফনদী ও ঘুমধুম সীমান্তে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের উপর থেমে থেমে গুলিবর্ষণ অব্যহত রেখেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) পুলিশ। এসময় বাংলাদেশ সীমান্ত ভূখন্ডেও তারা গুলিবর্ষণ করে।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দরা জানান, মিয়ানমারের জান্তাবাহিনীর রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় সীমান্তবর্তী এলাকা চাকমা কাটা গ্রাম, কুআনচি বং, নাচিদং,রাইম্যকাটা ঢেকিবনিয়াসহ ১৫টির অধিক রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামবাসির উপর গত ৩ দিনধরে ব্যাপরোয়া গুলিবর্ষণের ফলে অসংখ্য লোক প্রাণ হারিয়েছে।

ওবিবার বিকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইবনিয়া সীমান্ত পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পে প্রবেশের অপেক্ষায় জটলা বেঁধে বসে আছে প্রায় ১০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু। এদের মধ্যে একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধ মোস্তাক আহমদ জানান, তার বাড়ি মিয়ানমার আরকান রাজ্যের ঢেঁকিবনিয়া গ্রামে। ৪ ছেলে ৬ মেয়ের মধ্যে ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। তিনি নিশ্চিত, তার ছেলেকে মেরে ফেলা হবে। সে আর ফিরবে না। তাই তারা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।

রোহিনা আক্তার নামের আরেক গৃহবধূ জানান, ‘আমার স্বামীকে গত শনিবার সকালে বিনা কারণে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর একটি দল। আমার স্বামী আনোয়ার সেলিম নিরপরাধ। কিন্তু, তিনি উগ্রপন্থী দল ‘আলকিন’এর সদস্য বলে অভিযোগ করে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমার চোখের সামনে ভয়াবহ নির্যাতন করেছে। এ কারণে আমি বাংলাদেশে পালিয়ে এসে সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছি।’

বাংলাদেশ ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া ফকিরাপাড়া গ্রামের নুরুল বশর (৬৫), মুজিবুর রহমানসহ (৫০) অসংখ্য রোহিঙ্গা জানান, গত শনিবার দুপুর ২টার দিকে সেদেশের একটি সামরিক হেলিকপ্টার ঢেঁকিবনিয়া সেনা ও বিজিপি ক্যাম্পে আসে। বিকাল ৩টার দিকে ওই হেলিকপ্টারটি চলে যাওয়ার পর পরই সেনা, বিজিপি ও স্থানীয় রাখাইনরা যৌথভাবে সীমান্ত সংলগ্ন ঢেঁকিবনিয়া, চাককাটা, ঢেঁকিপাড়া, ফকিরাপাড়া, চাকমাকাটাসহ বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা গ্রামে হামলা শুরু করে। এ সময় নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে।

গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় সে দেশের বিদ্রোহী গ্রুপ। এতে ১২ পুলিশসহ বহু রোহিঙ্গা হতাহত হয়। এঘটনার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে গেছে। ফলে প্রতিদিন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসছেন অসংখ্য রোহিঙ্গা। নাফনদীর জলসীমানা থেকে শুরু করে স্থল সীমানা পার হয়ে আসছেন তারা। এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবরের পর থেকে মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে একইভাবে হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসে প্রায় ৯০ হাজার রোহিঙ্গা। এরপর আন্তর্জাতিক মহল নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমার সরকারের ওপর। কিন্তু এর কোনও তোয়াক্কা না করে আরকানে ফের সেনা মোতায়েন করে নির্যাতন শুরু করে তারা।