হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:
মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে (রাখাইন স্টেট) সহিংসতায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে কেউ সহযোগিতা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে কারও গাফেলতি বরদাশত করা হবেনা। অবৈধ রোহিঙ্গা পারাপারের ঘাট এবং দালালদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। তাছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ২৬ আগস্ট শনিবার দুপুরে টেকনাফ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে আইনশৃংখলা বিষয়ক বিশেষ জরুরী সভায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন এসব কথা বলেন। যেকোন মুল্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দেশের স্বার্থে সর্বমহলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে এ ক্ষেত্রে সরকারের জিরো টলারেন্স উল্লেখ পূর্বক তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা। এরা কোন ভাবেই যেন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও আইনশৃংখলা বাহিনীকে সতর্ক এবং নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। যারা রোহিঙ্গা পারাপার, অনুপ্রবেশে সহযোগীতা, আশ্রয় প্রশ্রয় দেবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং রোহিঙ্গাদের বহনকারী সিএনজি, টমটম গাড়ীসহ যে কোন ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিপূর্বে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে সরকার। কিন্তু এই রোঙ্গিাদের কারণে আমাদের দেশের আইনশৃংখলা ও সামাজিক ভাবমুর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। তাই বার বার তাদের সেই সুযোগ দেয়া যাবেনা। সীমান্তে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার করতে বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃংখলা বাহিনীকে দায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সুশীল সমাজের ব্যক্তিদেরও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভুমিকা অতি প্রয়োজন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক। টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আহমদ, কক্সবাজারের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) আনোয়ারুল নাসের, সহকারী পুলিশ সুপার (উখিয়া-টেকনাফ সার্কেল) চাইলাউ চাকমা, টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাঈন উদ্দিন খাঁন, হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মাওঃ নুর আহমদ আনোয়ারী, হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান এইচকে আনোয়ার সিআইপি, সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন, বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাওঃ আজিজ উদ্দিন, টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র-৩ কুহিনুর আক্তার, হোয়াইক্যং ইউপি ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার হাজী জালাল আহমদ, রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারী কায়সার পারভেজ চৌধুরী, সাবরাং ইউপির ৯নং ওয়ার্ড শাহপরীরদ্বীপের মেম্বার ফজলুল হক প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। টেকনাফ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিস তাহেরা আক্তার মিলি, পৌর প্যানেল মেয়র মাওঃ মুজিবুর রহমান, টেকনাফ সদর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল্লাহ, বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, গোয়েন্দা, বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সহিংসতার ফলে আতংকিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের সীমান্তের অভ্যন্তরে শতশত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য জড়ো হয়ে রয়েছে বলে একাধিক সুত্রে জানা যায়। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ২৬ আগস্ট সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারের ৭৩ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের আটক পূর্বক স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় বিজিবি, কোস্টগার্ড টহল জোরদারসহ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২৪ আগস্ট রাতে এবং ২৫ আগস্ট শূক্রবারে মিয়ানমারে সহিংসতা শুরু হলে শুক্রবার ২৫ আগস্ট ভোররাতে কয়েকশত রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু বিজিবি তাদের প্রতিহত করে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে মুসলমানদের উপর সে দেশের সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। এর প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ২৬ আগস্ট শনিবার দুপুর ১ টায় টেকনাফ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন জরুরী আইনশৃংখলা বিষয়ক সভার আয়োজন করেন।
টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আহমদ বলেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে অবস্থানরত আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সাথে যোগাযোগ করে অনুপ্রবেশ করাতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের লক্ষ্য রাখা জরুরী। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা যেন সীমান্তের কাছাকাছি যেতে না পারে সে জন্য ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরনার্থীদের গতিবিধির প্রতি নজরদারী রাখতে হবে। হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এইচকে আনোয়ার বলেন, রোহিঙ্গাদের শিগগিরই দেশের অন্য যে কোন স্থানে স্থান্তরিত করে টেকনাফকে রোহিঙ্গা মুক্ত করা দরকার। অন্যথায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্দ হবেনা।
এদিকে শুক্রবার ২৫ আগস্ট রাত ৯ টা থেকে শনিবার ২৬ আগস্ট সকাল পর্যন্ত উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৭৩ জন রোহিঙ্গাকে আটক পুর্বক স্বদেশ ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা। কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার জাফর ইমাম সজিব জানান নাফ নদী জুড়ে কোস্টগার্ডের টহল জোরদার এবং অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। মিয়ানমারের মংডু এলাকা থেকে ৫৬ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু বহনকারী একটি নৌকা অনুপ্রবেশকালে আটক পূর্বক একই সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম জানান, নাফ নদী পেরিয়ে অনুপ্রবেশকালে ১৭ জন রোহিঙ্গাকে আটক পূর্বক মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। এতে ৪ জন শিশু, ৮ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সীমান্তে বিজিবি জওয়ানরা কড়া পাহারায় রয়েছে। কোনভাবেই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবেনা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।