শফিক আজাদ,উখিয়া :
উখিয়া ষ্টেশন জামে মসজিদের দেয়াল ঘেষে বসে আছে ৪টি রোহিঙ্গা পরিবার। উৎসুক জনতা ভীড় দেখে দেখার আগ্রহ হয় প্রতিবেদকের। জনতার ভীড়ের ভিতর থেকে দেখা যায় উক্ত রোহিঙ্গা পরিবার গুলোকে। তাদের মধ্যে ১জন পুরুষ বাকী ৪জন পরিবার। সন্তান রয়েছে ৬জন। ৪ পরিবারের ৪টি বস্তা। বস্তার ভিতর রয়েছে কিছু খাবার, আর থালা,বাসন। বলছিলাম বৃহস্পতিবার রাত ৯টার একটি ঘটনা। তারা সবাই বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সীমান্তের রেজু আমতলি এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে। পথ ভুলে এরা উখিয়া ষ্টেশনে চলে এসেছে।
সুত্রে জানা গেছে, গত ২০১৬সালের ৯অক্টোবর সেনা ও রাখাইন উগ্রবাদীদের হাতে রোহিঙ্গা নির্যাতনে ক্ষত চিহ্ন মুছ না মুছতে ফের মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত মংডু, বুচিদং ও রাচিডং জেলায় অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ ঘটাচ্ছে গত সপ্তাহ ধরে। এ ধরনের সৈন্য সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার ও নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। নতুনভাবে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতনের আশংকায় এসব এলাকা থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমরা আবারো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশংকা করছে স্থানীয় লোকজন। গত ১সপ্তাহে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং এবং টেকনাফের লেদা ও মুছনি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে বলে এনজিও সংস্থার রিপোর্টে বলা হলেও সরকারী ভাবে এর কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক মনজুরুল হাসান খান বলেন, কক্সবাজার বিজিবির আওতাধীন সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে বিচ্ছিন্নভাবে অনাকাঙ্খিতভাবে কয়েকজন রোহিঙ্গা গোপনে চুরি করে সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা প্রতিহত করা হচ্ছে বলে টেকনাফ বিজিবি অধিনায়ক জানান। কিন্তু ঠিকই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে কুতুপালং নতুন ক্যাম্প অবস্থানকারী রোহিঙ্গা সিরাজুল হক ও বালুখালী নতুন বস্তির মাঝি লালু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে টেকনাফ ছাড়া উখিয়ার কুতুপালং এবং বালুখালী নতুন বস্তিতে অন্তত ৫হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে আশ্রয় নিয়েছে। যারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার উখিয়া সদর ষ্টেশন জামে মসজিদের পাশের্^ অবস্থান নিয়েছে কক্সবাজার অথবা অন্য কোথায় চলে যাওয়ার জন্য। অনুপ্রবেশকারী এদের রয়েছে দিল মোহাম্মদ (৪৪) তার স্ত্রী ছখিনা খাতুন (৩৫), তাদের ৪সন্তান মোঃ তাহাদ(৮) মোঃ আনাছ (৬) মোঃ হাসান (৪) এবং মোঃ হোসেন দেড় বছরের শিশু। তাদের বাড়ী মিয়ানমারের মংডু তামাবিল গ্রামে। এছাড়াও তাদের রয়েছে একই এলাকার নুরুল আলমের স্ত্রী বাবেয়া খাতুন (৩০)। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সেনা নির্যাতন সইতে না পেরে স্বামীকে ফেলে রেখে ১সন্তান নিয়ে সে চলে এসেছে বাংলাদেশে। একই কথা ছাহিদা নামের আরেক গৃহবধুর। তার স্বামীও মিয়ানমারে রয়ে গেছে। তারা প্রত্যেকে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের রেজু আমতলী সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এখন তারা কোথায় যাবে ভেবে পাচ্ছেনা। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অনুপ্রবেশকারীরা মসজিদের দেয়াল ঘেষে বসা ছিল। এ নিয়ে রেজু আমতলি বিজিবি’র সুবেদারের নিকট বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিক বার ফোন করেও নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ৩ আগস্ট মংডুর ময়্যু পর্বতমালার পাদদেশে সেদেশের ¤্রাে উপজাতির ৭ জনের গুলিবিদ্ধ ও ছুরিকাঘাত লাশ উদ্ধার করা হয়। ইতিপূর্বে ২৯ সেপ্টেম্বর রাছিদং জেলার একটি নদীতে গলাকাটা একই পরিবারের পিতা, পুত্র ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। চলতি বছরের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় ৫৫ জন নিহত ও ৩৪ জন নিঁখোজের তথ্য প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর অং সান সুচি’র অফিস থেকে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে আরকান প্রাদেশিক পরিষদের ৯ জন এমপি গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনা প্রধানের সাথে রুদ্ধদার বৈঠক করেন। উক্ত বৈঠকের একদিন পর প্রতিকুল আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিমানে করে রেঙ্গুন থেকে আরকান দেশের রাজধানী সিটুয়ে বিমানবন্দরে অতিরিক্ত প্রায় ৫ শতাধিক পদাতিক সৈন্য প্রেরণ করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বিশেষ করে পূর্বে অবস্থিত কয়েক ডিভিশনের পাশাপাশি রাখাইনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের মংডু, বুছিদং ও রাছিদং জেলায় এসব অতিরিক্ত পদাতিক সৈন্য মোতায়েক করেছে বলে রয়টার্স ও এএফপি’র খবরে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে নিয়োজিত অতিরিক্ত সৈন্যরা বুছিদং ও রাছিদং জেলার ময়্যু পর্বতমালা সংলগ্ন রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে মৌখিকভাবে কারফিউ জারি করেছে। এসব এলাকার লোকজনদের ভুলেও ময়্যু পর্বতমালার দিকে অগ্রসর না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে রোহিঙ্গা আতংকিত হয়ে নতুনভাবে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।