নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিকাল গড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরের প্রধান সড়কের দু’পাশে মাছের ঝুড়ির নিয়ে বসে পড়ে ব্যবসায়ীরা। এসব ঝুড়ির কারণে পথচারিদের হাঁটা চলায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।

অন্যদিকে সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মোড় থেকে বার্মিজ মার্কেট পর্যন্ত প্রধান সড়কের দুপাশ, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সড়ক, কোর্টবিল্ডিং চত্বর, আইবিপি রোড়ের শহরমুল্লুক বাজারসহ যত্রতত্র অবৈধভাবে ভ্রাম্যমান মাছ বাজার বসার কারণে বড়বাজারের প্রধান মাছ বাজারের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। একারণে সরকারকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব দেওয়া বড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা এখন দেউলিয়ার পথে। হারাতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্য।

দীর্ঘদিন ধরে মাছ বাজার নিয়ে এই অরাজকতা চলে আসলেও এবার নড়েচড়ে বসেছে পৌরসভা। বড়বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদের কঠোর আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত সড়কের উপর ঝুড়ি নিয়ে অবৈধভাবে বসা মাছ ব্যবসা বন্ধে মাঠে নামছে পৌর কর্তৃপক্ষ। আগামি ৪ সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ মাছ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।

গতকাল রাত সাড়ে ৭টায় পৌর ভবনে বড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদের এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এসময় ব্যবসায়ীরা নানা দাবী উত্থাপন করে মেয়রকে স্মারকলিপি দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কমিশনার সিরাজুল হক। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদেরও অবৈধ মাছ বাজারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামার কথা জানান মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।

মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, আগামি ৪ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে সব ধরণের অবৈধ মাছ বাজার বন্ধ করে দেওয়া হবে। পৌরবাসির সুবিধার্থে ৪ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বড়বাজারে সন্ধ্যাকালিন বাজার বসবে। সেখানে সকাল আটটা থেকে রাত ১২ টা মাছ পাওয়া যাবে।

মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর বড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা পৌরসভাকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব দেয়। কিন্তু কয়েক মাস ধরে সড়কের পাশে যত্রতত্র ভ্রাম্যমান মাছ বাজার বসার কারণে মরে যাচ্ছে বড়বাজারের মাছ বাজার। দিনের বেলায় সড়কের পাশে অবৈধভাবে বসা মাছ বাজার থেকে মাছ কিনতে পারায় বড়বাজার বিমুখ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। অথচ এসব ভ্রাম্যমান মাছ বাজার বসে অবৈধভাবে। সাধারণ মানুষ বড় বাজার বিমুখ হয়ে পড়ার কারণে সেখানকার মাছ ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছে। বর্তমানে জামানত হারিয়ে অনেকে দেউলিয়ার পথে।

জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অবৈধভাবে মাছবাজার বসে শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সড়কে। অর্ধশতাধিক মাছের ঝুড়ি বসানোর কারণে ওই সড়ক দিয়ে মানুষ ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। একই সময়ে হাত করে ও ঝুড়ি নিয়ে বসে মাছ বিক্রি করতে দেখা যায় কোর্টবিল্ডিং চত্বরেও। এরপর বিকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছের ঝুড়ি বসিয়ে ব্যবসায়ীরা মাছবাজার গড়ে তুলে শহরের প্রধান সড়কের সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বার্মিজ মার্কেট পর্যন্ত এলাকায়। এসব ভ্রাম্যমান মাছ বাজারের কারণে মানুষের চলাচলে চরম বিঘœ ঘটে। যানজট ও দুর্গন্ধে হাটাচলায় দায় হয়ে উঠে। এছাড়া আইবিপি মাঠে অবৈধভাবে বসে শহরমুল্লুকের বাজার নামে একটি মাছবাজার। এই বাজারেরও কোন বৈধতা নেই। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বসে বাজারটি। এসব অবৈধ মাছবাজারের কারণে মরতে বসেছে বড়বাজারের মাছবাজার। বড়বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদের কঠোর আন্দোলনের কারণে শেষ পর্যন্ত এসব অবৈধ মাছবাজার বসতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

এদিকে অবৈধভাবে মাছবাজার বসা বন্ধ ছাড়াও স্মারকলিপিতে আরো নানা দাবী তুলেছেন বড়বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা। এসব গুলো হচ্ছে- পেশকারপাড়া, ফুলবাগ, সুজা ও সওদাগরপাড়া পশ্চিম টেকপাড়ার শত শত ছাত্র-ছাত্রী এবং জনসাধারণের শহরমুখি চলাচলের একমাত্র রাস্তা পেশকার পাড়ার কালভার্ট থেকে আইবিপি রোড় হয়ে প্রধান সড়ক পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে যানজট মুক্ত রাখা। বড়বাজারের পার্কিংয়ের জায়গা দখলকারি তরকারি ব্যবসায়ীদেরকে তরকারি বাজার শেডে স্থানান্তর করা, বড়বাজারের তরকারি আড়তদার ও মুদির দোকানদার ভেতরে খালী রেখে যানবাহন ও জনচলাচলের রাস্তার উপর যে সমস্ত পণ্য সামগ্রি ও মালামাল রাখা হয়, সেই সমস্ত পণ্য সামগ্রি ও মালামাল দোকানের ভেতরে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। রাস্তার উপরে ময়লা-আবর্জনা ও পঁচা তরকারি, পিয়াজ ও রসুনের খোসাসহ নানা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা। বড়বাজার এলাকায় মাছবাজার সংলগ্ন পেশকারপাড়া কালভার্ট থেকে বড়বাজার শপিং কমপ্লেক্স পর্যন্ত ড্রেইন নির্মাণ ও আরসিসি দ্বারা পুণ:নির্মাণ করা। আইবিপি রোড়ের মাথায় প্রধান সড়কের সংযোগস্থলে ট্রাফিক পুলিশ, পৌর কমিউনিটি ট্রাফিকের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক যানজটমুক্ত রাখা ও টহলদারের ব্যবস্থা করা। সন্ধ্যাকালিন সময়ে বড়বাজার এলাকায় সড়ক বাতি ও যথাযথ আলোর ব্যবস্থা করা। পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেসি সহায়তা নিয়ে সমগ্র বাজার এলাকায় যানজটমুক্ত করণ. পরিবেশ সংরক্ষণ, বাণিজ্যিক আইন অনুসারে সকল ব্যবসায়ীগণকে নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তা অধিকার বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নষ্ট মালামাল বিক্রি নিষিদ্ধ করণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

মেয়রকে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বড়বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতির সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার করিম, সহসভাপতি বশির আহমদ, সহসাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক, অর্থ সম্পাদক আব্দুল আলিম, কার্যকরি সদস্য মোবারক হোসেন, বদিউল আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ আকবর, সাহাব উদ্দিন, বাদশা (সও.), সালামত উল্লাহ, সাইফুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, শাহাদত করিমসহ সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।