বাংলাট্রিবিউন:
বিভিন্ন ধরনের সরকারি-বেসরকারি মোবাইলে স্বাস্থ্যসেবা মিলছে বাংলাদেশেরাত তখন পৌনে ১১টা। হঠাৎ করেই মায়ের প্রচণ্ড জ্বর, সঙ্গে বমি। বাসায় আমি মাকে নিয়ে একা। ভেবে পাচ্ছিলাম না এত রাতে মাকে নিয়ে কোথায় যাব, কী করব। এমন সময় হঠাৎ মনে পড়লো একটি মোবাইল অপারেটরের মোবাইল সার্ভিসের কথা। তখনই ফোন করি তাদের দেওয়া একটি নম্বরে। কথা হয় চিকিৎসকের সঙ্গে। তার পরামর্শ নিয়ে মাকে ওষুধ খাওয়াই। জ্বর ও বমি— দু’টোই কমে যায় মায়ের।
কথাগুলো বলছিলেন তাহমিনা রিমা। কেবল রিমা নয়, রাজধানীবাসী অনেকেই এখন স্বাস্থ্যসেবা পেতে ব্যবহার করছেন মোবাইল সেবা। এর পাশাপাশি অনলাইনেও এখন মিলছে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া, নগরীর রাস্তার রাজ্যের জ্যাম ঠেলে চেম্বারে পৌঁছানো, শারীরিক সমস্যা অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসকের সন্ধান না পাওয়ার মতো সব ঝক্কি-ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকার সুবিধার কারণেই মোবাইলে স্বাস্থ্যসেবা হয়ে উঠছে জনপ্রিয়। এখনও সব ধরনের মানুষ এই সেবা নিতে শুরু না করলেও ক্রমেই বাড়ছে এ ধরনের সেবার গ্রাহক। তারা বলছেন, মোবাইল ও অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পেরে তারা অনেক ঝামেলা থেকে বেঁচে যাচ্ছেন। পাশাপাশি যখন প্রয়োজন, ঠিক তখনই তারা নিতে পারছেন এই সেবা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি ও গ্রামীণফোন মোবাইলে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। তবে কেবল বেসরকারি উদ্যোগে নয়, সরকরি উদ্যোগেও দেওয়া হচ্ছে মোবাইলে স্বাস্থ্যসেবা। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবগুলো জেলা ও উপজেলা মিলিয়ে মোট ৪৮২টি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে এই সেবা। এর বাইরেও চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করা বা শারীরিক সমস্যা অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসক বেছে নিতেও চালু হয়েছে অনলাইন সেবা।
তৃণমূল পর্যায়ের মোবাইলের মাধ্যমে সরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবা দিতে প্রতিটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে একটি মোবাইল ফোন। ওই ফোর নম্বরে কল করে দিন-রাতের যেকোনও সময় কথা বলা যাবে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গে। তার কাছেই পাওয়া যাবে শারীরিক সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা বাস করেন, তাদের জন্য এর মাধ্যমে বিনামূল্যে সরকারি চিকিৎসকদের কাছ থেকে সেবা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে যেকোনও সময় সেবা নেওয়া যায়। গভীর রাতে, জরুরি প্রয়োজনে বা দূরত্বের জন্য যারা চিকিৎসকের কাছে যেতে সমস্যায় পড়তেন, তারা এখন ঘরে বসেই সেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারছেন।’ এই সেবা ছড়িয়ে পড়লে সীমিত জনবল দিয়ে অনেক মানুষকে সেবা দেওয়া সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমবে বলেও মনে করেন তিনি।
মোবাইলে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও (ছবি- ইউএসএইড)মোবাইল ফোন অপারেটর রবি মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে গ্রাহকদের। কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড কর্পোরেট রেসপন্সিবিলিটিস) ইকরাম কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এম ডাক্তার সেবা ব্যবহার করে এসএমএস বা ভয়েস কলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবেন রবির গ্রাহকরা। এছাড়া, পুষ্টি, সুষম খাদ্য, সুস্থতা, গর্ভাবস্থা, হৃদরোগ, রক্তচাপসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার স্বাস্থ্য পরামর্শ নেওয়া যাবে ৭৮৯ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে। এর বাইরে ২১২১৬ নম্বরে কল করে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে চিকিৎসক তাকে কলব্যাক করে স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলে জানান ইকরাম কবীর।
গ্রামীণফোনের মোবাইল স্বাস্থ্যসেবার নাম টনিক। এই সেবার মার্কেটিং ম্যানেজার শেজামি খলিল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, টনিক একটি ওয়ানস্টপ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন পরীক্ষায় ছাড়, উপযুক্ত চিকিৎসকের সহযোগিতা এবং হাসপাতালের খরচ বহন করার মতো নগদ অর্থায়নের সুবিধা রয়েছে টনিকে। গ্রামীণফোনের গ্রাহকরা ৭৮৯ নম্বরে ফোন করে অথবা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে টনিক অ্যাপ ডাউনলোড করে এই সেবা নেওয়া যাবে।
এদিকে, রোগীকের সঠিক চিকিৎসকের সন্ধান দেওয়া ও চিকিৎসকদের সঙ্গে রোগীদের যোগাযোগের সুবিধা দিতে কাজ করছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ডক্টরোলা ডটকম। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মতিন ইমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক রোগী চিকিৎসক দেখাতে আসেন। কিন্তু তার শারীরিক সমস্যার জন্য যে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন, তাকে হয়তো তিনি খুঁজে পান না। ঠিক এই জায়গাটি নিয়েই কাজ করি আমরা। রোগীদের একটি গাইডলাইন হিসেবে আমরা কাজ করছি। কোন রোগীর জন্য কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন, সেই পরামর্শ আমরা দিচ্ছি। শুধু তাই নয়, সেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের কাজটিও আমরাই করে দিচ্ছি। আমাদের সেবায় ঘরে বসেই যথার্থ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার সুবিধা থাকছে।’
আবদুল মতিন জানান, দেশের প্রায় ৫শ হাসপাতালের সাড়ে সাত হাজার চিকিৎসক ডক্টরোলার তথ্যভাণ্ডারে যুক্ত আছেন। এতে এরই মাধ্যমে সেবা নিয়েছেন সোয়া লাখের বেশি মানুষ। সেবা দিতে ডক্টারোলায় রয়েছে হটলাইন ১৬৪৮৪। আর কোন রোগীর জন্য কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন, সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্যও ডক্টরোলায় রয়েছে চিকিৎসক দল।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।