আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা প্রকল্পের চুক্তিপত্র প্রায় প্রায় ৬ বছর আগে সই করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। এতদিন থেমে থাকা ওই প্রকল্প নিয়ে আবার সরব হচ্ছে ভারত।
দিন দিন সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বৃক্ষহীন অবস্থা বাড়তে থাকায় এবার ঢাকা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সঙ্গে নিয়ে ‘সুন্দরবন বাঁচাও’ অভিযানে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি। খবর- আনন্দবাজারের।
এদিকে, সুন্দরবনের কাছাকাছি ভারতের সহায়তায় রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক বিরোধীতার মুখে রয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু এ প্রকল্পে নির্মাণ অনড় সরকার। তবে এবার সুন্দরবনের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভারতীয় উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ সরকারের রামপাল বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফের বিতর্ক দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, সুন্দরবন বিষয়ে ‘অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের’ (ওআরএফ) কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠায় মোদি সরকার। সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ওআরএফ।
ওই প্রতিবেদনের প্রস্তাবনাগুলো সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে দিল্লি। এ নিয়ে ঢাকার সঙ্গে শিগগিরই আলোচনা শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন সূত্র।
ওআরএফের প্রতিবেদনে দুই দেশের জন্যেই কিছু বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে, ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, স্বাদু পানির অবাধ সরবরাহ, লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা এবং ভূ-বৈচিত্র্য মানচিত্র তৈরি।
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সুন্দরবন রক্ষায় চুক্তি হলেও বর্তমানে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়া যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি কার্যত স্থবির হয়ে আছে। এখন সে কমিটিকে নতুন করে সক্রিয় করা হচ্ছে। এছাড়া সুন্দরবনের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি পরামর্শদাতা কমিটি করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
উপগ্রহ থেকে পাওয়া গত কয়েক বছরের ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগে সুন্দরবনের পশ্চিম অংশ দিয়ে যে নদীগুলো সাগরে গিয়ে পতিত হত, এখন সেসব নদীর অধিকাংশই বিপন্ন হয়ে গেছে; নয়ত পানি ধারণ ক্ষমতা কমে এমন পর্যায়ে এসেছে যে ওই পানিতে সুন্দরবনের মাটিই ভিজছে না।
এতে করে ব-দ্বীপের মাঝখানে স্বাদু পানি পৌঁছাতে পারে না। ফলে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার কারণে নোনা পানিতে ভিজে যাচ্ছে পুরো সুন্দরবন। এভাবে ধীরে ধীরে সুন্দরবনের পশ্চিমদিকের জঙ্গলে লবণাক্ততা অনেক বেড়ে গেছে। এতে সুন্দরী গাছের বৃদ্ধি ঘটছে না।
অন্যদিকে, স্বাদু পানির সরবরাহ না বাড়লে সুন্দরী গাছ বাঁচানো যাবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে গোটা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্টের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপগ্রহ থেকে সুন্দরবনের পশ্চিমবঙ্গ অংশের যে ছবি রাজ্য বন দফতরের রিমোট সেন্সিং বিভাগের কাছে রয়েছে, তাতে দেখা যায়- চারদিকে ঘন বনাঞ্চল কিন্তু মাঝখানে ফাঁকা। সুন্দরবনের শতকরা ২৫ ভাগ পশ্চিমবঙ্গে ও বাকি ৭৫ ভাগের মতো বাংলাদেশে। উপগ্রহের ছবি অনুযায়ী গত কয়েক বছরে উভয় অংশে সুন্দরী ও গেওয়া গাছের সংখ্যা কমেছে ব্যাপকহারে। এছাড়া বালেশ্বর ও পশুর নদী ছাড়াও স্বাদুপানি সরবারহের অন্যান্য প্রবাহ প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।