সংবাদদাতা:
‘তাকে হারিয়েছি দেড় বছর আগে। এই দীর্ঘ সময়ে তাকে অনেক খোঁজ করেছি। রাজধানীসহ দেশে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেছি। কিন্তু কোথাও পায়নি। এতদিন পর তাঁকে যে ফিরে পাব কল্পনাও করিনি।’
দেড় বছর আগে ভারসাম্যহীন স্ত্রীকে খুঁজে পেয়ে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার চরপরানপুরের বাসিন্দা মনির মিয়া স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে এই কথাটি বলেন। তিনি স্ত্রী লাইজু বেগম (৪০) হারিয়েছিলেন ভারসাম্যহীন অবস্থায়। কিন্তু তাকে ফিরে ফেলেন প্রায় সুস্থ অবস্থায়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করিয়ে লাইজু বেগমকে সুস্থ করে তুলেন।
রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন লাইজু বেগমকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেন। এসময় কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার উপস্থিত ছিলেন।
লাইজু বেগমের স্বামী মনির মিয়া জানান, দেড় বছর আগে লাইজু বেগম নড়াইলের বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ওই সময় তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিলেন। সেই থেকে আর ফিরেনি। আত্মীয়-স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেছেন। কিন্তু কোথাও খোঁজ পাইনি।
লাইজু বেগমকে তিন মাস আগে দুর্ঘটনার শিকার অবস্থায় পায় কক্সবাজার শহরের স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন কক্সবাজার ব্লাড ডোনার সোসাইটি। এই সংগঠনের সদস্যরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেন।
ওই সংগঠনের উদ্যোক্তা আশরাফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত তিন মাস আগে লাইজু বেগমকে রামু বাইবাস এলাকায় আহত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর কয়েক দিন আগে তিনি গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলা হয়। তার পায়ে অস্ত্রোপচারও করা হয়। তারপরও লাইজু বেগম এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। বর্তমানে হুইল চেয়ার নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে তাকে।
তারা আরো জানান, লাইজু বেগমের পরিবারের সন্ধান চেয়ে গত ১৫ আগষ্ট কক্সবাজার ব্লাড ডোনারস সোসাইটির ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেয়া হয়। পোস্টটি সারাদেশের আরো ৮০টি অনলাইন ভিত্তিক সামাজিক সংগঠনের ফেসবুক পেজে ট্যাগ করা হয়। এই পোস্টের সূত্র ধরে ১৮ আগস্ট ঢাকা থেকে এক ব্যক্তি আশরাফুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। পরদিন লাইজু বেগমের স্বামী মনির মিয়াও কক্সবাজার ব্লাড ডোনাসর সোসাইটির সদস্যদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে মনির মিয়াসহ তাঁর আরো কয়েকজন আত্মীয় রোববার সকালে কক্সবাজার পৌঁছেন। সব কিছু নিশ্চিত হয়ে বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে লাইজু বেগমকে স্বামীসহ স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। এসময় আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়।
মনির মিয়া বলেন, স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। দীর্ঘদিন খুঁজে না পেয়ে তাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেই জায়গা তাকে খুঁজে পেলাম- এই অনুভূতি ভাষা প্রকাশ করতে পারছি না। আমাদের সংসারে ছয়টি সন্তান। সবমিলে আমার সংসারটি আবার নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার বলেন, এধরণের মানবিক কাজে একদল যুবক এগিয়ে এসেছে। এটি সত্যিই অনুকরণীয়। সমাজের সবাইকে এভাবে একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসা উচিত।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, কক্সবাজার ব্লাড ডোনাসর সোসাইটি যে কাজটি করেছে তা অতুলনীয়। দেশে এরকম সংগঠন ও লোকজন আছে বলেই দেশটা সুন্দরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
লাইজু বেগমকে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন ব্লাড ডোনার সোসাইটির সদস্য আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মো. আশরাফুল হাসান রিশাদ, জাহাঙ্গীর আলম জ্যাক, তৌহিদুল ইসলাম তোহা, মো. আব্দুল্লাহ, মো. হাফেজ, মো. হোসাইন, আশিকুল ইসলাম আশিক, এ আর রহমান, আশু বড়ুয়া, মিনা আক্তার, ফাহিম, শরিফ, ফয়সাল প্রমুখ।