জসিম মাহমুদ, টেকনাফ:
মিয়ানমার থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডরে আসছে বিপুলসংখ্যক পশু। আর সেসব পশু যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হচ্ছে।
টেকনাফ শুল্ক কাস্টমস সুপার একেএম মোশারফ হোসেন বলেন,‘মিয়ানমার থেকে পশু আনতে আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করছি। কিন্তু সমুদ্র উত্তাল থাকলে কিংবা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে পশু আমদানি কমে যাবে।’তিনি আরও বলেন, গত বছর ২৭ হাজার ৭৭৩ টি পশু আমদানি হলেও একবার তার তিনগুণ বেশি (১৯ আগস্ট পর্যন্ত ) ৮২ হাজার ২৯৯টি পশু এসেছে। কোরবানির আগে আরও অনন্ত ১০ হাজারের মতো আসতে পারে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবারের মতো স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশুর জন্য ঝুঁকেছেন মিয়ানমারের দিকে। নৌকা বোঝাই করে মিয়ানমারের পশু আসছে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডরে। এসব পশু নিয়ে টেকনাফ গোদারবিল মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠ, সাবরাং ইউনিয়ন কমপেক্স, শাহপরীর দ্বীপের নাফনদীর বেড়িবাধ ও পুরাতন বাজারের বেশ কয়েকটি স্থানে পশুর হাট জমে উঠেছে।
১৯ আগস্ট শাহপরীর দ্বীপ করিডরে গিয়ে দেখা যায়, বড় ৬টি কাঠের ট্রলারে করে ৭১১টি গরু-মহিষ নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। পরে নাফ নদীর জেটি দিয়ে গরুগুলো করিডরে নামানো হয়। করিডরের খোলা মাঠে দেখা যায় মিয়ানমার থেকে আনা আরও কয়েক শ গরু-মহিষ। ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী পশু কেনার জন্য দরদাম করছেন।
টেকনাফে ব্যবসায়ী মো. শহীদুল ইসলাম জানান, গত সাত দিনে তাঁরা কয়েকজন ব্যবসায়ী মিয়ানমার থেকে ২ হাজার ১৪৮টি গরু ও ২৮৪টি মহিষ আনেন। এসব পশু কিনে ব্যবসায়ীরা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, প্রতিটি গরু ও মহিষের বিপরীতে ৫০০ টাকা করে রাজস্ব পরিশোধ করতে হয়।
শাহপরীর দ্বীপের পশু ব্যবসায়ী মৌলভী নুরুল হক বলেন, করিডরে তিন মণ ওজনের একটি গরুর দাম পড়ছে ৪৮ হাজার টাকা। চার মণ ওজনের গরু ৬৫ হাজার ও পাঁচ মণের বেশি ওজনের গরু ৮৫- ১লাখ ২০ হাজার টাকা। এসব গরু কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকার হাটে বিক্রি হচ্ছে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রয় করা হবে।তিনি বলেন, মিয়ানমারের পশু মোটাতাজা হওয়ায় ব্যবসায়ীরা চড়া দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
গাবতলীর ব্যবসায়ী ফরিদুল আলম প্রায় ৬৫ লাখ টাকায় কিনেছেন ১১০টি গরু। প্রতিটি গরুর ওজন তিন থেকে চার মণ।তিনি বলেন, গড়ে প্রতি গরুর দাম পড়েছে ৫৫ হাজার টাকা। ট্রাক ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করে ঢাকায় পৌঁছাতে প্রতিটি গরুর দাম দাঁড়াবে গড়ে ৬০ হাজার টাকা। প্রতিটি গরু বিক্রি হবে ৬৫-৮০ হাজার টাকারও বেশি দামে।
আরেক ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান বলেন, প্রতিবছর কোরবানির পশুর হাটে তিনি ভারতের গরু বিক্রি করতেন। এবার তিনি টেকনাফে এসেছেন। গত এক সপ্তাহে তাঁরা কয়েকজন ব্যবসায়ী টেকনাফ করিডর থেকে তিন শতাধিক গরু কিনে ঢাকায় পাঠিয়েছেন।
শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানায়, চলতি আগস্ট মাসের ১ থেকে ১৯ তারিখ বিকেল চারটার পর্যন্ত (৮হাজার ৫০৩) ৭ হাজার ৪৬১ গরু ১ হাজার ১৩১ মহিষ ও ১টি ছাগল এসেছে। যার বিপরীতে ৪২ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে।জুলাই মাসে ৬ হাজার ৭৭০ গবাদিপশুর মধ্যে ৪ হাজার ৭৪০ গরু, ২ হাজার ২৯ মহিষ এবং মাত্র ১টি ছাগল আমদানি হয়েছে। যার বিপরীতে ৩৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭০০ টাকা রাজস্ব আমদানি হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৪ হাজার ৪৯৬ গরু, ১২ হাজার ৩৯৫টি মহিষ ও ৪৫টি ছাগল (৬৬ হাজার ৯৩৬টি) আমদানি করে তিন কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। যা গত অর্থবছরের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৯৯০ গরু, ৭ হাজার ৩২০ মহিষ ও ৪৬৩ ছাগল (২৭ হাজার৭৭৩) আমদানিতে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০টাকা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।