‘কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু’ স্মৃতিতর্পনে বক্তারা
# ইনানী বন রেষ্ট হাউজে দালিলিক প্রমাণ রয়েছে
# বঙ্গবন্ধু ইনানীর পার্শ্বের গ্রাম ঘুরে বেড়ান
# বঙ্গবন্ধু স্থানীয় উপজাতিসহ এলাকাবাসীর সাথে সময় কাটান
বিশেষ প্রতিবেদক :
কক্সবাজারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর যে আগমন ছিল তা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা আর স্বনির্ভর জাতি গঠনের উদ্যোগ। তাঁর প্রতিবার আগমন ছিল দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর কক্সবাজার হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর আলোক উজ্জ্বল স্মৃতিধন্য অঞ্চল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত কক্সবাজারে এখনো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সেইভাবে স্মৃতি স্তম্ভ, স্মৃতি যাদুঘর বা স্মৃতি সংরক্ষণ করতে কোন কিছু প্রতিষ্ঠা হয়নি।
স্মৃতি আলোকপাতে তারা বলেন-‘ তদানীন্তন পুর্ব পাকিস্তান আমলে ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু কক্সবাজারের ইনানী এসেছিলেন। সেই ১৯৫৮ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আগমনের দালিলিক প্রমাণ রয়েছে ইনানী রেস্ট হাউসে তাঁর নিজের হাতের লেখা পরিদর্শন বইতে। বক্তারা বলেন, এসময় তিনি ইনানীর পার্শ্বের গ্রাম ঘুরে বেড়ান। উপজাতিসহ স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে তিনি সময় কাটান। তাদের আথিয়েতা গ্রহণ করেন।’
বুধবার ১৬ আগষ্ট সকালে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ সুভাষ হলে ‘ কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক স্মৃতি আলোকপাতে বক্তারা এসব কথা বলেন। কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিতর্পনে অংশগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে থাকা কক্সবাজারের চার রাজনৈতিক নেতা তৎকালিন জাতীয় পরিষদ সদস্য, জেলা গভর্ণর, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, যুদ্ধকালিন জয়বাংলা বাহিনীর কক্সবাজারের প্রধান জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী, ৭০’এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর সাথে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এবং বর্তমান কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও ছাত্র জীবনে বঙ্গবন্ধুর ¯েœহধন্য বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। স্মৃতিচারণ সভা সঞ্চালনা করেন পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম।
এর আগে তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রচারণায় আসেন। ১৯৫৬ সালে বনমন্ত্রণালয়ের সদস্য হিসেবে পরিদর্শনে আসেন কক্সবাজারে । ১৯৬২ সালে গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠনে কক্সবাজার আসেন। ১৯৬৪ সালে আসেন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের জন্য। ১৯৭০ সালে এসে তিনি নির্বাচনি প্রচারণায় নামেন।
এরপর দেশ স্বাধীন হয় । স্বাধীনতার পর তিনি রাষ্ট্রিয় সফরে ১৯৭৩ সালে ও সর্বশেষ ১৯৭৫ সালে ঘাতকের হাতে নিহত হওয়ার ৫ মাস আগে মার্চ মাসে তিনি কক্সবাজারে আসেন। স্বাধীনতার আগের সফরে তাঁর কক্সবাজার আগমন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কর্মতৎপরতা আর স্বাধীনতা পরবর্তি তাঁর সফর ছিল স্বনির্ভর জাতি ও উন্নত রাষ্ট্র গঠনের কর্মতৎপরতা।
কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য তিনি দেশ স্বাধীন করলেও উন্নত রাষ্ট্র গঠণ করতে সুযোগ তাঁকে দেয়া হয়নি। তবে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন তিনি রেখে গেছেন। তিনি শুধু বাংলার মহানায়ক ছিলেননা । তিনি ছিলেন দুনিয়ার সবচেয়ে অকুতোভয় সাহসী বীর।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও স্ংাস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত “ কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু ” শীর্ষক স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবন সংগ্রামের ইতিহাস সবকিছু হয়ত লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি, তাই আজ সম্মানিত অতিথি যাঁরা স্মৃতিচারণ করলেন তাঁরাই এক একটি জীবন্ত ইতিহাস।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, রাজনীতিসহ সে সময়ের চিন্তাধারা ও গুণাবলী যাঁরা খুব কাছ থেকে দেখেছেন আজ তাঁরা নতুন প্রজস্মকে জানাতে পেরেছে। এতে নতুন প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের পরিধি আরও সমৃদ্ধ হবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক নতুন প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের সামনে সরাসরি জাতির মহান নেতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করায় অতিথিবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আয়োজক সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের আয়োজন করার পরামর্শ দেন তিনি। পরে অতিথিদের সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।