মো: ছফওয়ানুল করিম :
পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের রূপাই খাল। মগনামা ইউনিয়নের মানচিত্রের বরাবর মাঝখানে এ খালটি অবস্থিত। এটি কাটাফাঁড়ি খাল থেকে ছবুইজ্জাবর বাড়ীর দক্ষিণ পাশ থেকে যুক্ত হয়ে সাপের মতো এঁকে বেঁকে দীর্ঘ ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এ খালটি দরিয়াঘোনা ও মটকাভাঙ্গায় গিয়ে মিশে যায়। দীর্ঘ ৩ কিলোমিটারেরও বেশী এ খালটির দু’পারের মানুষগুলোর জীবন জীবিকা অনেকটা নির্ভর করে এ খালের উপর। তাছাড়া পুরো মগনামা ইউনিয়নের পানি চলাচলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাল। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লবণ ও চিংড়ী পরিবহনের জন্য এ খালটি ব্যবহৃত হয়ে আসছিল যুগ যুগ ধরে। ২০০৫ সালের দিকে খালটি উম্মুক্ত জলাশয় হিসেবে ঘোষণা করে জনগণের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এ খালটি এখন পুরোটাই চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে। তারা খালটি বন্ধ করে সেখানে তৈরী করেছেন চিংড়ী প্রজেক্ট। স্থানীয়দের অভিযোগ খালটি দখলে নিতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ, বিএনপি-জামায়াত নেতা ও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক একাকার হয়ে গেছেন। আর তাই এতদিন কেউ মুখ খোলার সাহস করেনি। কিন্তু জনগণের খাল ‘রূপাই খালের’ কান্না শুনার কি কেউ নেই।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, কয়েকবছর ধরে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র কক্সবাজার ডিসি অফিসের অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করে খালটির কিছু অংশ লীজও নিয়ে নেয়। এতে করে মগনামা ইউনিয়নের পানি চলাচল, স্থানীয়দের লবণ চিংড়ী পরিবহন মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তারা জানান, রূপাই খালের দুই পাশের শত শত পরিবারের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ছিল এ খালটি। এরই প্রেক্ষিতে প্রশাসন ২০০৫ সালে এটিকে একটি উম্মুক্ত জলাশয় ঘোষণা দিয়ে খালটি লীজ দেয়া বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে তথ্য গোপন করে লীজ নিয়ে খালটির মুখ বন্ধ করে দেয়।
এদিকে খালটি অবৈধ দখলদার মুক্ত ও প্রভাবশালীদের লীজ বাতিল করতে গত বুধবার ‘মগনামার সচেতন জনতা’র ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসি। মানববন্ধন থেকে রূপাই খালকে উম্মুক্ত জলাশয় ঘোষণা দেয়ার জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের নিকট দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে যোগ দিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু। স্থানীয়রা জানান, সচেতন মহলের মানববন্ধনের পর টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসনের। মানববন্ধনের পরদিন গত বৃহস্পতিবার পেকুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সালমা ফেরদৌস রূপাইখাল থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। এসময় তিনি দখলদারদের ব্যবহৃত জাল ও চিংড়ী চাষের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মগনামা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াশিম জানান, রূপাই খালটি জনগণের সম্পদ, সেটি গুটিকয়েক মানুষ দখল করে নিয়ে হাজার হাজার লোকজনকে বঞ্চিত করছে। এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সালমা ফেরদৌস বলেন, আমরা রূপাই খালটি পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করেছি। খালটি দখলমুক্ত করতে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল করিম জানান, আমরা সরকারের সম্পত্তি রূপাই খালটি অবৈধ দখলমুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং যারা দখলে আছে তারা কি মূলে দখলে আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা খালটি পুরোপুরি দখলমুক্ত করে সেটিকে জনগণের জন্য উম্মুক্ত করে দিব।
রূপাই খালের কান্না শুনবে কে?
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।