কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক খোরশেদ আলমকে এক পৌর কাউন্সিলার কর্তৃক শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে মানবন্ধন করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
সোমবার বিকালে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কের পুরাতন শহীদ মিনার চত্ত্বরে এ কর্মসূচী পালিত হয়।
খোরশেদ আলম কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কয়েক দশক ধরে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর আসর ও গণমুখ থিয়েটারের একজন সক্রিয় সংগঠক।
গত ৮ আগষ্ট কক্সবাজার পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার জাবেদ মো. কায়ছার নোবেলের পৌর ভবনের অফিস কক্ষে দায়িত্ব পালনকারি অফিস সহকারিকে সরিয়ে নিজের পছন্দ মতো নতুন অফিস সহকারিকে দায়িত্ব না দেয়ার জের ধরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোরশেদ আলমকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত এবং মারধর করার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরদিন পৌর কাউন্সিলার নোবেলকে আসামী করে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউন্সিলারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি।
এ ঘটনায় কক্সবাজার পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী এসোসিয়েশন ঘটনার দিন বিকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতী পালন করছে। গত শনিবারও পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী এসোসিয়েশনের কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য নেতাদের উপস্থিতিতে সংগঠনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় নেতা-কর্মীরা কক্সবাজারে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করে। এতে আগামী ১৮ আগষ্টের মধ্যে ঘটনায় অভিযুক্ত কাউন্সিলারকে গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় আনা হলে সংগঠনের পক্ষ থেকে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী নেয়া হবে ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার মানবন্ধন কর্মসূচী পালন করে কক্সবাজারের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, ছাত্র, যুব ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশগ্রহণ করে সংহতি জানান।
কক্সবাজারের অন্যতম সামাজিক সংগঠন ‘কক্সবাজার সোসাইটির’ সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধোত্তর প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কমিউনিস্ট পার্টি কক্সবাজার জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সমীর পাল, জেলা উদীচীর সভাপতি কল্যাণ পাল, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি জেলার সদস্যসচিব করিম উল্লাহ, হেমন্তিকা শিল্পী গোষ্টির পরিচালক অনিল দত্ত, জেলা যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা আক্তার মার্টিন, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শহীদুল্লাহ শহীদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি হিল্লোল দাশ, কবি কালাম আজাদ, আজিজ রিপন, শয়ন কান্তি বিশ্বাস, সংস্কৃতি কর্মী ছোটন দাশ, অর্জন ধর, ওমর ফারুক জয়, ছাত্র ইউনিয়ন জেলা সভাপতি অর্পণ বড়–য়া ও সাধারণ সম্পাদক পাভেল দাশ ও জেলা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি, সংস্কৃতি কর্মী মোহাম্মদ আনোয়ার, তানভিরুল মিরাজ রিপন, জয়নাব রহমান বাবু, সহ অনেকে।
এতে বক্তারা বলেন, খোরশেদ আলম শুধু পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা নয় ; তিনি স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন প্রথমসারির সংগঠক। তার উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী এসোসিয়েশনের অনির্দিষ্টকালে কর্মবিরতীর ফলে পৌরবাসী আজ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অভিযুক্ত পৌর কাউন্সিলার জাবেদ মো. কায়ছার নোবেল জনপ্রতিনিধি হয়েও প্রশাসনিক কর্মকর্তার উপর শারীরিক নির্যাতন করে দেশের আইন-কানুনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। তার উপর এ হামলার ঘটনা সংস্কৃতি কর্মীদের যেমন বেদনাহত করেছে ; তেমনি দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি পৌরসভার ভাবমূর্তিরও ক্ষুন্ন হয়েছে।
বক্তারা ঘটনার সুষ্ট তদন্তপূর্বক অভিযুক্ত কাউন্সিলারকে গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।