ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী:
দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে গত আইন শৃংখলার উন্নতি হতে শুরু করেছে।
গত সাত মাসে বিভিন্ন অভিযানে ১১০ আগ্নেয়াস্ত্র, ৩১১ কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার হয় ৩০ অস্ত্রধারী ও কারিগর। আইন শংখলা বাহিনীর তৎপরতায় দ্বীপ ছেড়ে পালিয়েছে দাগী সন্ত্রাসীরা।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ সিবিএনকে জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের দমনে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক জলদস্যু ও সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মহেশখালীর বাকী ৯টির মতো সন্ত্রাসী গ্রুপের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ধরা হবে তাদের আশ্রয় দাতাদেরও।
সুত্র মতে, উপজেলায় জলদস্যু যেমন আছে তেমনি ৩০ হাজার একর বনভূমি জুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে ৯টির বেশী সন্ত্রাসী গ্রুপ। তারমধ্যে উপজেলার কালারমারছড়ার ৫টি ও হোয়ানকের ৪টি সন্ত্রাসী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। জলদস্যুতা, চিংড়ী ঘের ও বনভূমি দখল ও আধিপত্য বিস্তারে খুন খারাবী করে বেড়ায় এসব সন্ত্রাসী বাহিনী। রয়েছে গহীন অরণ্যে অস্ত্র তৈরীর কারখানা। এখান থেকে দেশীয় তৈরী অস্ত্র চালান হতো চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। দীর্ঘদিন থেকে এই সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে জিন্মি হয়ে আছে এখানকার জেলে ও সাধারণ মানুষ।
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ প্রশাসনের একের পর এক অভিযানে এখানকার সন্ত্রাস জগতে এসেছে গত ১৬ বছেরের রেকর্ডযোগ্য আমুল পরিবর্তন। গ্রেপ্তার হয়েছে দীর্ঘ দিন অধরা পালিয়ে থাকা দাগী সন্ত্রাসী চোর ডাকাত ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীসহ পাহাড়ী এলাকায় অস্ত্র তৈরীর কারখানা গেঁড়ে অস্ত্র তৈরীর কারিগররা।
থানার রেকর্ড অনুযায়ী গত ৭ মাস এখানে উদ্ধার হয়েছে ১টি রাইফেলসহ ১১০টি দেশীয় তৈরী আগ্নেয়াস্ত্র, ৩১১ রাউন্ড তাজা কার্তুজসহ বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র। গ্রেপ্তার হয়েছে ৩০ জন দাগী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও অস্ত্র তৈরীর কারিগরসহ শতাধিক দাগী পলাতক চোর ডাকাত জলদস্যু ও মাদক ব্যবসায়ি। ধংস করা হয়েছে ১০টির অধিক মদের মহাল। এখন অনেকটা শঙ্কামুক্ত বলে জানান এখানকার বাসিন্দারা।
সন্ত্রাস অধ্যূষিত এলাকা মহেশখালীতে ক্রমশ দূর্বল হয়ে আসছে অপরাধীদের রাজত্ব। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত অবস্থান ও পর পর অভিযানের কারণে মহেশখালী ছাড়ছে সন্ত্রাসীরা। আর সন্ত্রাসের ভয়ে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকা মানুষেরা ফিরতে শুরু করেছেন এলাকায়। তবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেই অপরাধীরা উচ্চ আদালতে মামলা দিয়ে আইন- শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান বন্ধে নানা পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চলতি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে উদ্ধার হয়েছে ৫টি এলজি,১৪টি বন্দুক,১টি রাইফেল,১৭ কার্তুজ, ফেব্রুয়ারীতে ৭ এলজি,৩৭ বন্দুক,২০০ কার্তুজ, মার্চে ৫টি এলজি,৮টি বন্দুক,২৬টি কার্তুজ, এপ্রিলে ৭টি এলজি,৪টি বন্দুক,৩২টি কার্তুজ, মে জুন ২ মাসে ২০টি এলজি,১টি বন্দুক,৩৩ কার্তুজ ও জুলাইতে
১টি বন্দুক ও ৩ কার্তুজ। যাহা গত ২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত রেকর্ড পর্যালোচনায় অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, সন্ত্রাসীদের জিন্মিদশা থেকে রক্ষায় পুলিশের অভিযানে গত ছয় মাসে মহেশখালীর হোয়ানক ও কালারমারছড়ায় বন্দুক যুদ্ধে মারা গেছে শীর্ষ সন্ত্রাসী বদইল্যা, আব্দুস সাত্তার, খুইল্ল্যা মিয়া ও এনাম। আটক হয়েছে আরো ৪০ জন সন্ত্রাসী। জব্দ করা করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ। পুলিশের এমন সাঁড়াশি অভিযানে মহেশখালীতে দূর্বল হতে শুরু করে সন্ত্রাসীদের অবস্থান। এর ফলে এতোদিন সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে থাকা অনেকেই ফিরতে শুরু করেছেন এলাকায়। স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে এখানকার মানুষের মাঝে।
বড় মহেশখালী ইউপি সদস্য জিল্লুর রহমান মিন্টু জানান, এখনো জিইয়ে থাকা সন্ত্রাসী গ্রুপের বাকী সদস্যদের ধরতে পারলেই মহেশখালীর প্রায় তিন লাখ মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। আমরা এখনও অনেকটা শঙ্কামুক্ত হয়েছি। এখন মানুষ নিরাপদে চলাফেরা ও ব্যবসা বানিজ্য করতে পারছে। বন্ধ হয়ে গেছে সড়কে ছিনতাই ডাকাতি।
অপর দিকে পুলিশ বলছে, কোন সন্ত্রাসী আটক কিংবা বন্দুক যুদ্ধে মারা গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করে আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে বিঘ্ন ঘটার চেষ্টা চালায় সন্ত্রাসী গ্রুপের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতারা কিছু রাঘব বোয়ালরা।
মহেশখালীতে সাত মাসে ১১০ আগ্নেয়াস্ত্র ৩১১ কার্তুজ উদ্ধার: দ্বীপ ছেড়েছে দাগী সন্ত্রাসীরা
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।