– ইসমাইল সাজ্জাদ
বিমানবন্দরের পাশে হেড কোয়ার্টার স্কোয়াটন অফিসে একত্রিত হলেন কয়েকজন সেনা অফিসার। মেজর ফারুক রহমান চূড়ান্ত পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিলেন সহযোগীদের। অবশ্য এরও মাস খানেক আগে থেকেই মেজার ফারুকের ট্যাংক রেজিমেন্ট নাইট এক্সারসাইজ শুরু করে। এর আগে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে রক্ষীবাহিনীর ডিজি নুরুজ্জামানকে লন্ডনে একটি মিলিটারি কোর্সে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ফারুকের ট্যাংক গুলো বিমানবন্দর এলাকা থেকে সরাসরি গিয়ে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, সোবাহানবাগ মিরপুর রোড ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর কে ঘিরে একটি রোড ব্লক তৈরি করে। ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার ছাড়াও ধানমন্ডিতে শেখ মনি’র বাসায় এবং মিন্টো রোডে শেরনিয়াবতের বাসায় আলাদাভাবে আক্রমন করার জন্য উপস্থিত সেনাদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়। শাহবাগের রেডিও স্টেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউ মার্কেট এলাকা দিয়ে পিলখানা থেকে যাতে কোনো প্রতিরোধ না আসে সেজন্য এই এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। তবুও প্রধান প্রতিরোধের আশংকা থেকে যায় রক্ষীবাহিনীর কাছ থেকে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের অদূরে শেরে বাংলা নগরে রক্ষীবাহিনীর হেড কোয়ার্টার। রক্ষীবাহিনীকে নিরস্ত্র করতে মেজর ফারুক নিজেই অপারেশনের দায়িত্ব নেন। আর সঙ্গে নেন ২৮ টি টি-৫৪ ট্যাংক। মেজর ফারুক ট্যাংক বহর নিয়ে রক্ষীবাহিনীর হেড কোয়ার্টার ঘিরে রেখে নিজেই ট্যাংক চালিয়ে সাভারে রক্ষীবাহিনীর মূল ক্যাম্পের দিকে। কোনো প্রতিরোধ না আসায় ফারুক আবার শেরে বাংলা নগরে রক্ষীবাহিনীর হেড কোয়ার্টারে ফিরে আসেন। কমান্ডবিহীন রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা ফারুকের ট্যাংক বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়েনি। যদিও ফারুকের কোনো ট্যাংকেই তখন কোনো গোলাবারুদ ছিল না।
ততক্ষণে তিনটি টার্গেট পয়েন্টেই একসঙ্গে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। তৎকালীন ঢাকা স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ হামিদ তার ‘তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা’ বইয়ে লেখেন যে, ‘… ১৯৭২ সাল। বিজয় ছিনিয়ে এনেছে বাঙালি। সবাই বিজয়ের অংশীদার। ভারতীয় বাহিনী বলে বিজয় আমাদের। মুক্তিবাহিনী বলে আমাদের। মুজিববাহিনী ভাবে আমাদের। দেশের আনাচে কানাচে ছিটিয়ে পড়া নাম না জানা গেরিলারা বলে আমাদের।” তিনি তাঁর বইয়ে আরো লেখেন, ‘… শুরু হয়ে গেল চাওয়া পাওয়ার ইঁদুর দৌড়। চাই, চাই, চাই। গাড়ি চাই, বাড়ি চাই, টাকা চাই, চাকুরি চাই। চাকুরিওয়ালাদের প্রমোশন চাই। নবগঠিত সেনাবাহিনীতেও একই আওয়াজ। অনেক ত্যাগ হয়েছে এবার চাই প্রমোশন। … জাতীয় জীবনে সর্বত্র নেমে আসে হাতাশা, নৈরাজ্য। চারদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম রাষ্ট্রপতি।” এ বিষয়ে প্রফেসর মুনতাশির মামুন বলেন, তৎকালীন নেতৃবৃন্দ হয়তো একটি ভুল করেছিলেন। সেটি হল প্রতিক্রিয়ার উপাদানগুলো তারা বিনাশ করেননি। সাবেক ডিজিএফআই কর্মকর্তা মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পরে যে একটা অভাব অনটন, কিছুটা ভোগান্তি, এটা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তিগুলো খুব সফলভাবেই এটাকে লুফে নিয়েছিল। এই বিরোধীশক্তি আত্মগোপনে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কিছু প্রোপাগান্ডা চালালো যে, ভারত সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান ফেরত সেনা অফিসাররাও এই একই মোটিভেশান দ্বারা প্ররোচিত হল, যে যুদ্ধের বিনিময়ে ভারত এখন সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে..
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।