অনলাইন ডেস্ক :

জাতিসংঘের একটি জরিপে উঠে এসেছে বিশ্বে বর্তমানে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মানুষ খোলা আকাশের নিচে মলমূত্র ত্যাগ করে। তার মধ্যে শুধু ভারতেই রয়েছে ৬০ কোটি মানুষ, যারা খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ সারে। এর অর্থ, ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এখনো খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করে।
এদিকে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ২০১৯ এর অক্টোবর মাসের মধ্যে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ বন্ধ করতে চায়। মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী পালন করার জন্য ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ ঘোষণা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

স্বচ্ছ ভারত অভিযানের বরাত দিয়ে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু জানায়, গ্রামীণ এলাকার অন্তত ৫২.১ শতাংশ মানুষ এখনো খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ সারে। ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস (এনএসএসও) এর জরিপে এর ভীতিকর দিকটি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়, যেখানে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে এটা ভারতের জনস্বাস্থ্যে একটা বড় হুমকি।

উল্লেখ্য, নব্বই দশকে এ অবস্থাটা আরও ভয়াবহ ছিল। ১৯৯৩ সালের পরিসংখ্যানে পাওয়া যায় তখন গ্রামাঞ্চলের ৮৫.৮ শতাংশ ভারতীয় খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করত।টিম স্বচ্ছ ভারত এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও বিষয়টি স্বীকার করা হয়। সেখানে অবশ্য বলা হয় ৫৬.৪ কোটি ভারতীয় খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ করে।

ওয়েবসাইটটিতে আরও বলা হয় গ্রামাঞ্চলে খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ সাড়ে ৬১ শতাংশ মানুষ আর শহরাঞ্চলে ১০ শতাংশ।খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের ফলে ডায়রিয়া, কলেরা ও হেপাটাইটিসের মতো রোগে সহজেই আক্রান্ত হচ্ছে। ভারতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪০০ শিশু প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। ডায়রিয়ায় শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিশ্বে এটা সর্বোচ্চ সংখ্যা।খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের প্রধান কারণটি হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ বাড়িতেই টয়লেট নেই।স্বচ্ছ ভারত টিমের ‘দ্য স্বচ্ছ স্ট্যাটাস রিপোর্ট’ এ উঠে আসে গ্রামাঞ্চলে ৪৫.৩ শতাংশ বাড়িতে টয়লেট রয়েছে। শহরাঞ্চলে এর হার ৮৮.৮ শতাংশ।

এখন সবার ঘরে ঘরে টয়লেট বানিয়ে দিলেই কি খোলা আকাশে মলমূত্র ত্যাগ বন্ধ হয়ে যাবে?এনএসএসও এর জরিপে উঠে আসে খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ সারে এমন ৪৭ শতাংশ মানুষ মনে করে সেখানে প্রাকৃতিক কর্মটি সারার বিষয়টি ‘অনেক আনন্দদায়ক, আরামপ্রদ ও সুবিধাজনক।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ‘টয়লেট আগে, তারপর মন্দির’ কর্মসূচীর ঘোষণা দেন। কিন্তু তারপরও একটা বিশাল সংখ্যক মানুষ খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ সারতে আনন্দ পেয়ে থাকে।

ভারতের গ্রামাঞ্চলের বড় সংখ্যক মানুষকে টয়লেটের উপকারিতা বিশ্বাস করানো কঠিন। অনেকেই খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ সারতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে কারণ তাদের পূর্বপুরুষেরা শত শত বছর ধরে এমনটা করে আসছে। এজন্য দেখা গেছে অনেক গ্রামে সরকার কর্তৃক শাস্তি ঘোষণা, ড্রোন দিয়ে পর্যবেক্ষণের পরও সেটা থামানো যাচ্ছে না।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ান এ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। যেমন হরিয়ানার প্রাদেশিক সরকার ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছে কারা খোলা জায়গায় কাজ সারছে। মধ্যপ্রদেশে আইন পাশ করা হয়েছে যেখানে বিধান রাখা হয়েছে যাদের বাসায় টয়লেট নেই তারা পঞ্চায়েত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

ছত্রিশগড়ের এক গ্রাম প্রধান এক কঠোর বিধানের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে যারা টয়লেট বানাবে না তারা সরকারী দোকানগুলো থেকে স্বল্পমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যাদি পাবে না। ছত্রিশগড়ে এ নিয়ে একটি মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটে। টয়লেট নির্মাণ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে হত্যা করা হয়।টয়লেট ব্যবহারে অনীহা দূর করতে সবদিক দিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে মোদি সরকার।

বলিউডের সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চনকে দিয়ে একটি বিজ্ঞাপন বানিয়েছে তারা। এছাড়া স্বচ্ছ ভারত টিমে ভারতের ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’ শচীন টেন্ডুলকারকে রাখাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে।জনপ্রিয় বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমারকে দিয়ে ‘টয়লেট: এক প্রেমকথা’ নামে সিনেমা বানিয়েছে। অক্ষয় ও ভূমি পেদনেকার অভিনীত ছবিটি বাস্তব এক ঘটনার উপর ভিত্তি করে বানানো। আর সরকারের নেওয়া ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ এর অংশ হিসেবে নির্মিত। ১১ আগস্ট ভারতে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সিনেমাটি। বক্স অফিসে কেমন সাড়া পাবে সেটা নিয়ে ভাবিত নন অক্ষয় কুমার। বলিউডের এই সুপারহিট নায়ক মনে করেন ছবিটি দেখে যদি মানুষ সচেতন হয় তাহলেই স্বার্থক।