জসিম মাহমুদ, টেকনাফ:

মিয়ানমার থেকে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ট্রলার বোঝাই করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডর দিয়ে দেশে ঢুকছে গবাদিপশু । আমদানি অব্যাহত থাকলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাজারে এবারের কোরবানে পশুর সংকট হবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বাঁধা সৃষ্টি না করলে কোরবানের আগে ব্যবসায়ী মং মং সেন, মৌলভী বোরহান উদ্দিন, শহীদুল ইসলাম, এমএ হাশেম, আব্দুল্লাহ মনির, মো. সোহেল, কাদের হোসেন, আবু ছৈয়দ, হোসেন আহমদ, আলমগীর হোসেন,মোহাম্মদ কাসিম আবুল হোসেনসহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী আরও অন্তত ৩৫-৪০ হাজার গবাদিপশু মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শুল্ক বিভাগ জানায়, মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে গবাদিপশু আসা রোধে ২০০৩ সালে ২৫ মে শাহপরীর দ্বীপে এ করিডর চালু করা হয়। তখন থেকে প্রতিটি গরু-মহিষের জন্য ৫০০টাকা ও ছাগলের জন্য ২০০টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হয়। বিজিবির সহায়তায় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এ রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। তবে করিডর প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পার হলেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় অবকাঠামোসহ কোন ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠেনি। দেশের মাংস ও গবাদিপশুর চাহিদা পূরণে এটি গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানায়, চলতি আগস্ট মাসের ১ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত (১ হাজার ৭৫৫) ১হাজার ৪৪৮ গরু ৩০৭ মহিষ এসেছে। জুলাই মাসে ৬ হাজার ৭৭০ গবাদিপশুর মধ্যে ৪ হাজার ৭৪০ গরু, ২ হাজার ২৯ মহিষ এবং মাত্র ১টি ছাগল আমদানি হয়েছে। যার বিপরীতে ৩৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭০০ টাকা রাজস্ব আমদানি হয়েছে।

সদ্যসমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৪ হাজার ৪৯৬ গরু, ১২ হাজার ৩৯৫টি মহিষ ও ৪৫টি ছাগল (৬৬ হাজার ৯৩৬টি) আমদানি করে তিন কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। যা গত অর্থবছরের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। সরেজমিনে গতকাল শাহপরীর দ্বীপ করিডরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ী মং মং সেন; আব্দুল্লাহ মনির ; কাদের হোসেন ও আবুল হোসেনের কাছে পাঁচটি ট্রলার যোগে ৪২৬টি গবাদিপশু মিয়ানমার থেকে শাহপরীর দ্বীপ করিডরে এসেছে।

টেকনাফের পশু ব্যবসায়ী এমএ হাসেম বলেন, ভারত থেকে এবার গরু আসবে না বলা হলেও এখন পশু আমদানি অনেকে বেড়েছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের গরু ব্যবসায়ীরা টেকনাফে এখনও আসছেন না। তারপরও দাম ভাল পাওয়া যাচ্ছে।তিনি আরও জানান, প্রতিদিন ট্রলারে করে মিয়ানমার থেকে শাহপরীর দ্বীপ করিডরে পশু আসছে। এতে এখানে আর পশু সংকট নেই। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু আমদানি করা হচ্ছে অনেক বেশি।

টেকনাফ স্থলবন্দরে কাস্টমস শুল্ক কর্মকর্তা একেএম মোশারফ হোসেন বলেন, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে তিন কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পশু ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় প্রচুর পরিমাণ পশু আমদানিতে এটা সম্ভব হয়। যার ফলে দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে। করিডর প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরে এটি সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়। তবে করিডরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও যাতায়তের সু-ব্যবস্থা হলে আগামীতে আরও বেশি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে। তবে পশু আমদানি বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের আরও বেশি উৎসাহিত করা হচ্ছে।

পশু আমদানিকারকদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে এসব গবাদি পশু আসছে। শাহপরীর দ্বীপ করিডরে পৌঁছতে গবাদিপশু বোঝাই ট্রলারগুলোকে বঙ্গোপসাগর ও নাফনদী অতিক্রম করতে ১২ ঘন্টার মতো সময় পাড়ি দিতে হচ্ছে ট্রলারগুলোকে। গাদাগাদিতে অনেক পশু আবার ট্রলারে মারাও পড়ে।

করিডরের পশু ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম জানান, পর্যাপ্ত গবাদি পশু মজুদ ও আমদানি হলেও এখনও বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ট্রাকে ট্রাকে চট্টগ্রাম, ফেণী, সীতাকুন্ডর বিভিন্ন উপজেলায় প্রচুর গবাদিপশু সরবরাহ করা হচ্ছে।

করিডরের পশু ব্যবসায়ী মো. সোহেল জানান, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা প্রায় তিন শতাধিক গরু-মহিষ তার কাছে মজুদ রয়েছে। তার উপর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমারে আরও ৫ হাজারের মতো গরু-মহিষ আমদানির অপেক্ষায় রয়েছি।

ব্যবসায়ী টেকনাফ সদর ইউপির সদস্য আবু ছৈয়দ জানান, শাহপরীর দ্বীপ-টেকনাফ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সরাসরি ট্রাকে করিডর থেকে পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না ফলে খরচ কিছুটা বেশি পড়ে যাচ্ছে।

কুমিল্লার ব্যবসায়ী গরু আবুল মাহজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় দাম একটু বেশি। তারা প্রতিবছর কোরবানির আগে মিয়ানমারের গরু-মহিষ কিনে এলাকায় বিক্রি করে মুনাফা করেন। টেকনাফ থেকে গবাদিপশু কিনে নিয়ে যেতে তাদের তেমন কোন সমস্যা হয় না । পথে কোথাও চাঁদা দিতে হয় না বলেও জানান উক্ত ব্যবসায়ীরা।

টেকনাফ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ স¤পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, যেভাবে আমদানি হচ্ছে তাতে টেকনাফে এবার কোরবানির পশু সংকট হবে না বলে মনে করেন তিনি।

ব্যবসায়ী মোহাম্মদ কাসিম জানান, মাঝেমধ্যে নাফনদী থেকে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী গবাদিপশু ভর্তি ট্রলার ধরে নিয়ে যায়। প্রতিবছর এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও এখনও পর্যন্ত হয়নি। নাফনদীতে বিজিবির টহল বাড়ানো হলে তারা সেই সাহস পাবে না। নাফনদীর তীরবর্তী মিয়ানমার সীমানায় কয়েকটি বিজিপি ক্যা¤প রয়েছে তাদেরকে ট্রলার পিছু চাঁদা দিতে হয়, তা না হলে তারা এধরনের বাঁধার সৃষ্টি করে থাকে।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. মাইন উদ্দিন খান বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা শাহপরীরদ্বীপ করিডরে পশু কিনতে আসবে। এখান থেকে পশু সরবরাহের ক্ষেত্রে পথে যেন কোনো রকম চাঁদাবাজি না হয় তাও নজরে রাখা হচ্ছে।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম বলেন, পশুবাহী ট্রলার নিরাপদে যাতে করিডরে আসতে পারে সে জন্য বিজিবি সহায়তা দিয়ে থাকে। নাফনদীতে টহল জোরদার করা হয়েছে । কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণের পশু আসছে।