কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রেরিত ভাড়া আদায়ের নোটিশ
অাজিজুল হক,উখিয়া:
পাহাড়ী ভূমি ধ্বসের চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উখিয়ার বালুখালীতে গজে উঠা শরণার্থী শিবিরের প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা। বনবিভাগের প্রায় ২শ একর বেলে মাটির পাহাড়, টিলা দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল অনৈতিক ফায়দা লুটার লক্ষ্যে কয়েক মাস পূর্বে এখানে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির গড়ে তুলে। এসব রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত পাহাড়, টিলা ও বনবিভাগের সৃজিত বনায়ন উজাড় করে স্থাপনা তৈরী করছে। এতে বাঁধা দিতে গেলেই স্থানীয় সন্ত্রাসী ও রোহিঙ্গারা মিলে তেঁড়ে আসে বলে বন বিভাগের অভিযোগ।
সরেজমিনে বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তিতে দেখা গেছে, স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী লোকজনের ছত্রছায়ায় প্রায় প্রতিনিয়ত সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করে বালুখালীতে অবস্থান নিচ্ছে। বালুখালী, ধামনখালী, রহমতের বিল, আঞ্জুমানপাড়া, ঘুমধুমের জলপাইতলী, নোয়া পাড়া, পশ্চিমকুল, কোনার পাড়া, তেতুঁল গাছতলা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করে আসা রোহিঙ্গাদের গজেঁ উঠা বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের দূরত্ব প্রায় এক, দেড় কিলোমিটারের ব্যবধানে। গত জুলাই পর্যন্ত এ শিবিরে রোহিঙ্গার সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার পরিবারের ১০ হাজারের মত। এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ মাসে বিচ্ছিন্ন ভাবে এখানে আরো রোহিঙ্গা নতুনভাবে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে যোগ হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রথমে অনুপ্রবেশ করে নারী শিশুদের পূর্বে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের ঘরে রাখে। আর পুরুষরা শিবিরের মসজিদ, মাদরাসা ও স্কুলগুলোতে অবস্থান নেয়।
স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রিত রোহিঙ্গারা জানায়, উক্ত প্রভাবশালী চক্রের লোকজন ঘর করার জন্য পাহাড় ও টিলায় স্থান নির্ধারণ করে দেয়। এসব পাহাড়, টিলা জমি নাকি তাদের। এসব জমিতে সৃজিত ও বাড়ন্ত বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও পাহাড়, টিলা কেটে পলিথিন দিয়ে শুরু হয় ঘর তৈরির কাজ। বিনিময়ে ওদের জায়গার ভাড়া হিসেবে দিতে হচ্ছে ঘরপিছু ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা হারে। সৃজিত সামাজিক বনায়নের অংশীদার স্থানীয় বুজুরুছ মিয়া, সেলিম জাহাঙ্গীর, আবু বকর, জাফর ইকবাল সহ অনেকে জানান, এসব পাহাড়ী টিলা ও সৃজিত বনায়নের মূল মালিক বন বিভাগ আর আমরা অংশীদার। অথচ প্রভাবশালী সন্ত্রাসীরা এগুলো নিজেদের দাবী করে সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েম করে রোহিঙ্গা ও তাদের সহায়তাকারী কতিপয় এনজিও’র কাছ থেকে লুটে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণের টাকা।
উখিয়ার ঘাট বালুখালী বনবিট কর্মকর্তা মোঃ মোবারক আলী বলেন, এখানে কারো কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি নেই। যেখানে শরণার্থী শিবির হয়েছে পুরো জমিই বন বিভাগের রিজার্ভ। প্রায় ২শ একরের মত সৃজিত বনায়ন, পাহাড় ও টিলা জবর দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা রোহিঙ্গা শিবির গড়ে তুলেছে। যা দিন দিন পরিধি বাড়ছে, ক্ষতি হচ্ছে বনায়ন, পাহাড়, টিলা, সর্বোপরি পরিবেশের। যত্রতত্র নির্বিচারে পাহাড়, টিলা ও বনায়ন কেটে উজাড় করার কারণে পাহাড়ের বালি ও মাটি ক্ষয়ে পাশ্ববর্তী ফসলী জমিতে পড়ে চাষাবাদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানান।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সেক্রেটারী ফজলুল কাদের ভুট্টো বলেন, দেশে কোন আইন আছে বলে মনে হয় না। কারণ এলাকাবাসীর বিরোধীতা সত্ত্বেও কতিপয় প্রভাবশালীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এখানে রোহিঙ্গা শিবির গড়ে তোলা হয়েছে। আর স্থানীয় লোকজন অতি প্রয়োজনে পাহাড় ও গাছ কাটলে একের পর এক মামলা হয়। কিন্তু রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত পাহাড়, টিলা ও বনবিভাগের গাছ কেটে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না। উখিয়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, ইতিপূর্বে রোহিঙ্গা শিবিরে পাহাড়, টিলা ও বনভূমি কেটে উজাড় করার ব্যাপারে বনকর্মীরা বাধা প্রদান করতে গেলে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও রোহিঙ্গারা মিলে বনকর্মীদের একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। সুতরাং এখন বনকর্মীরা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, নতুন বস্তি উচ্ছেদ করতে প্রয়োজন যৌথ বাহিনী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।