বাংলাট্রিবিউন:
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইস্যুকেন্দ্রিক কর্মসূচি দিতে চায় তৃতীয় ধারার রাজনৈতিক দলগুলো। এই দলগুলো হলো বিকল্প ধারা, গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য। সরকার বা বিরোধী পক্ষ, কোনও দিকেই না হেলে নিজেদের শক্তিসঞ্চয় করে গুরুত্ব বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে আগ্রহী দলগুলোর নীতি-নির্ধারকরা। এ কারণে তারা এখনই আনুষ্ঠানিক জোট ঘোষণায় না গিয়ে কর্মসূচি দিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে চান। তৃতীয় ধারার দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত নেতারা জানান, গত ৫ বছর ধরেই রাজনৈতিকভাবে পরিচিত সিনিয়র রাজনীতিকরা ঐক্যের কথা বলে আসছেন। কিন্তু বার বারই এসব উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে গত ১৩ জুলাই ও ২ আগস্ট চারটি দলের মধ্যে বৈঠক ও আলোচনার পর একটি ইতিবাচক অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সমন্বয়ক করে একটি লিয়াজোঁ কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও জোটের ফাইনাল সিদ্ধান্ত হয়নি। লিয়াজোঁ কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা নিজেরা নিজেরা আলাপ করবেন, কমন কী প্রোগ্রাম করা যায়, প্রথমে সেটিই ঠিক করা হবে।’
প্রক্রিয়ার সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমাদের গন্তব্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আমরা এই বিষয়গুলোয় একমত হয়েছি। এখন কর্মসূচি দেওয়া হবে। এরপর জোটের প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে।’
তবে প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এক নেতা বলেন, ‘বিগত সময়ের অনেক উদাহরণ টানলে এক ধরনের শঙ্কা তো থেকেই যায়। বি চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন একাধিকবার হাত তুলে ঐক্যের কথা জানান দিলেও প্রক্রিয়াগুলো আলোর মুখ দেখেনি।’
এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বি চৌধুরী বা ড. কামাল হোসেন বা কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে অন্ততপক্ষে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। এটাই রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অনেক বড় শক্তি।’ তিনি বলেন, ‘আমি শো অফ করতে চাই না। সবাইকে নিয়েই কাজ করব।’ কর্মসূচির বিষয়ে তিনি জানান, প্রথমে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ধর্ষণ ইত্যাদি এবং ষোড়শ সংশোধনীর বিষয় নিয়ে সেমিনার করা যেতে পারে। আগে আলোচনা করে এগুলো ঠিক করা হবে।’
এই প্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টিকেও যুক্ত করার একটি চেষ্টা আছে বি চৌধুরীর। গত ২ আগস্ট রাতে এ কারণে তার বাসায় ডেকেছিলেন জাপার কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে।
ওই বৈঠকে বি চৌধুরীর প্রস্তাবের জবাবে জিএম কাদের জানান, তার দলের চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত দেবেন। যদিও শুক্রবার সন্ধ্যায় আলাপকালে বাংলা ট্রিবিউনকে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ বলে দেন, নতুন কোনও জোটে যাওয়ার এক পার্সেন্টও সম্ভাবনা নেই। বি চৌধুরী জানান, ‘প্রস্তাব দেওয়া হলেও জিএম কাদের কিছু জানাননি। তিনি জানাবেন বলেছিলেন।’
প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতাদের কথায় স্পষ্ট, জোট করার আগে রাজনৈতিকভাবে ইস্যুকেন্দ্রিক কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলতে চান তারা। ফলে নির্বাচনের আগে সরকারের অনুকূলে থেকে বিরোধী দল বা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনের লিয়াজোঁ করে যুক্তফ্রন্ট জাতীয় ঐক্য করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রক্রিয়ায় যুক্ত নেতারা। যদিও এসব বিষয় এখনও মুখ্য আলোচনায় আসেনি।
প্রক্রিয়ার অন্যতম উদ্যোক্তা বি চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কর্মসূচি দেওয়ার পর অন্যদের ইনভাইট করার ব্যাপার আছে। এরপর দেশের জন্য কী প্রোগ্রাম করব, ঐকমত্যের ভিত্তিতে করব। নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই জোট হবে। আমাদের উদ্দেশ্য, দেশের জন্য সুফল আনা। টার্গেট ভালো বিরোধী দল করা এবং আল্লাহ ইচ্ছা করলে সরকারও গঠন করতে পারি বা সরকার গঠনে সাহায্যও করতে পারি। তবে আগে থেকে কিছু বলা উচিত নয়।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলছেন, ‘দেশের অবস্থা ভালো নেই, আরেকটা ফোরটোয়েন্টি নির্বাচন হলে দেশটা শেষ হয়ে যাবে, ওটা ঠেকাতে হবে। কিন্তু বিএনপির অবস্থান তো পরিষ্কার না। তারা সভা-সমাবেশে বলছে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনও নির্বাচনে যাবে না। তবে পত্র-পত্রিকায় তাদের থিংক ট্যাংক বা নেতাদের নামে নিউজ করা হচ্ছে, যে সংবিধানের ভেতরেই ফ্রেমওয়ার্ক আছে। ফলে, আমাদের কাছে বিষয়গুলো পরিষ্কার হতে হবে।’
বিএনপির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন আছে আরেক উদ্যোক্তার। তার ভাষ্য, ‘খালেদা জিয়া গত কয়েক বছরে কতবার বলেছেন, ঈদের পর আন্দোলন। তিনি ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন, ভিশন তো আন্দোলন হওয়া উচিত। আর তিনি নিজেই তিন বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ফলে, সাংবিধান কাঠামো বা গণতন্ত্রের উন্নয়নে তিনি কী করবেন, সেটি তো পরিষ্কার করতে হবে। আর তার সময়ে হাওয়া ভবন বা ক্রসফায়ার, এ সব ছিল।’
পাল্টা বক্তব্য বিএনপি সূত্রের। সিনিয়র একনেতার ভাষ্য, ‘নতুন এই উদ্যোগ করা হচ্ছে, দুই জোটের বাইরের হিসেবে। তাহলে তৃতীয় কি বিকল্প হবে? রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই জোট বা এই নেতাদের অবস্থান আসলে কোথায়?’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘তাদের সামনে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি, এই দুই রাস্তার বাইরে কিছু নেই। বিএনপির সঙ্গে এলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং এর প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ, দুই উদ্যোগেই তারা সম্পৃক্ত হবেন। আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে গেলে এমপি বা মন্ত্রী হতে চাইবেন।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ উদ্যোগের গন্তব্য নিয়ে এখনই মন্তব্য বলতে নারাজ। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘তাদের উদ্যোগ এখনও জোটে পরিণত হয়নি। একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আগে দেখি, কী হয়। এরপর এ বিষয়ে কথা বলব।’
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতার দাবি, তারা পৃথক জোট করলেও নির্বাচনের দাবিতে একমত হওয়ার সুযোগ আছে। সে অনুযায়ী সর্ব দলীয় যুক্তফ্রন্ট বা সর্বদলীয় ঐক্যজোট হতে পারে। যদিও সবই ‘যদি’র ওপর নির্ভর করছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।