‘আমরা আসলে একটা ম্যাজিক রিয়েলিজমের যুগে বাস করছি। ছাগলের মৃত্যুর ওপর নির্ভর করছে মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের সম্মান! ভবিষ্যতে এ মামলা শতাব্দীর সেরা তামাশার যুগ হিসেবে আমাদের যুগকে চিহ্নিত করবে- এই আশঙ্কা করছি।’ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
রবিবার (৩০ জুলাই) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের বিতরণ করা ছাগলের মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হয়। পরে ওই সাংবাদিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন আরিফ জেবতিক। শুধু আরিফ জেবতিক নয়; এমন স্ট্যাটাস দিয়েছেন দেশের আরও অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী। জালাধি রায় নামের অন্য এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মানুষের সম্মান আর ছাগলের প্রাণ, আহা, কী কায়দায় একত্রে মিলিয়া গেল।’
লেখক মইনুল আহসান সাবের এ ব্যাপারে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছাগলটা যদি জানত, ৫৭ ধারা এরকম, ও হয়তো না মরে আত্মহত্যা করত।’
>সাংবাদিক ও লেখক হাসান শান্তনু লেখেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বিতরণ করা ছাগল মারা যাওয়া সংক্রান্ত খবর ফেসবুকে শেয়ারের কারণে এক সাংবাদিককে ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই সাংবাদিকের নাম আব্দুল লতিফ মোড়ল, তিনি খুলনার স্থানীয় দৈনিক প্রবাহ পত্রিকায় কর্মরত। তাকে গ্রেফতারের বিশেষ কারণ, পুলিশ মনে করে- প্রতিমন্ত্রীর ছাগলও অমরণশীল! প্রতিমন্ত্রীর ছবি ছাড়া শুধু ছাগলের ছবি দেওয়ায় এ গোত্রের প্রাণীদের অপমান করা হয়েছে।’
সংস্কৃতি কর্মী নুহু আব্দুলাহ তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘খোদ ভগবানরাও ভুল করেছেন। ভুল করে নিজের সন্তানের মস্তক ছিন্ন করেছেন। এমনকি, সবচেয়ে বড় দেবতাও। অথচ আমরা মানুষরা এখন এমন ভান করি যেন আমরা ভুল করতেই পারি না! তাই কেউ ভুল ধরিয়ে দিতে এলে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করি! আর এ নীতির সবচেয়ে বড় অস্ত্রের নাম ৫৭ ধারা! মানুষরা সাবধান! কারণ, যারা এ অস্ত্র ব্যবহার করছেন, তারা ভুল করেন না। তারা নিশ্চয় দেবতার চেয়েও বড় দেবতা!’
>সাংবাদিক এমদাদুল সুমন লিখেছেন, ‘মরছে ছাগল আর মানহানি হইছে তোর নেতার! তোর নেতা কি ছাগল নাকি।’ এইআর বিপ্লব নামে একজন লিখেছেন, ‘ছাগল, ৫৭ ধারাকে ভয় কর।’
খুলনার স্থানীয় সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম ডালিম লেখেন, ‘এরা সাংবাদিক নামের দালাল। সকলে মিলে প্রতিহত করা উচিত।’ এ ব্যাপারে ফেসবুকে মুহাম্মদ নুরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তির অভিমত, ‘যেসব সাংবাদিক এখনও ৫৭ ধারার পক্ষে আছেন, তাদের পরিপক্কতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, কী বলেন বন্ধুরা।’
শামসুজ্জামান শাহিন নামে একজন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ‘সাংবাদিক আব্দুল লতিফ মোড়লের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলাকারী সুব্রত ফৌজদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে স্পন্দন পত্রিকা কর্তৃপক্ষ।’ এ ব্যাপারে এমএম মাহবুবুর রহমান নামে একজন লেখেন, ‘ওর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
>এদিকে, বিবিসি বাংলাকে প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তার মানহানি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না। তার ভাষ্য, ‘সেটা আমি মনে করি না। আমার কাজ ঠিক থাকলে এতে কিছু আসে যায় না। আমি তো সবগুলি ছাগল দেই নাই। আমি যেটা দিয়েছি সেটা মারা যায় নাই। মারা গেছে অন্য একটা ছাগল।’
>প্রসঙ্গত, শনিবার (২৯ জুলাই) সকালে খুলনার ডুমুরিয়ায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কয়েকটি পরিবারের মধ্যে হাঁস, মুরগি ও ছাগল বিতরণ করা হয়। সেসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। সকালে ছাগল বিতরণের পর রাতে একটি ছাগল মারা যায়। পরের দিন এ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সাংবাদিক লতিফ মোড়ল তার ফেসবুক পেজে ‘প্রতিমন্ত্রীর সকালে বিতরণ করা ছাগলের রাতে মৃত্যু’ লিখে একটি পোস্ট দেন। সেখানে প্রতিমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করায় মন্ত্রীর মানহানি হয়েছে বলে দাবি করে লতিফ মোড়লের বিরুদ্ধে মামলা করেন আরেকজন স্থানীয় সাংবাদিক। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্পন্দন পত্রিকার ডুমুরিয়া প্রতিনিধি সুব্রত ফৌজদার। এরপর আব্দুল লতিফ মোড়লকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালতের নির্দেশে কারাগারেও পাঠানো হয়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।