সংবাদদাতা:

রামুর বহুল আলোচিত হাসান-হোসেন হত্যা মামলার দুই বছরেও কুল কিনারা মেলেনি। আতংকে দিন কাটাচ্ছে নিহতের স্বজনেরা। ঘাতকরা ঘুরছে প্রকাশ্যে। এলাকাবাসীর প্রতিবাদ বিক্ষোভের পরও নেই কোন পুলিশী এ্যাকশন।

২০১৬ সালের ১৭ই মার্চ গর্জনিয়া ইউনিয়ের ১নং ওয়ার্ড়ের মোঃ ফোরকান এর দুই ছেলে হাসান প্রকাশ শাকিল (১১) ও হোসেন প্রকাশ কাজল (৮)কে অপহরণ করে এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনী এবং চার লক্ষ টাকা দাবি করে নিহতের বাবা ফোরকানকে ফোন করে অপহরন কারীরা, অপহরন এর ফোন আসায় স্থানীয় জনসাধারণসহ ছেলেকে খোজতে বেরিয়ে পড়ে এবং বাইশারী পুলিশ ফাঁড়িকে অবহিত করে। দুইদিন হাসান হোসেনকে খোঁজে না পেয়ে ১৯/০৩/২০১৬ তারিখ রামু থানায় ১/ইমাম হোসেন প্রকাশ টুইল্লা (২৪) পিতা মৃত মোঃ নবী, ২/ জাহাঙ্গীর আলম (২০) পিতা আবদুর শুক্কুর ৩/ আলমগীর হোসেন বুইল্লা (২৩) পিতা আমির হোসন, ৪/ আবদুর শুক্কুর (৪৫) পিতা মৃত আবুল হোসেন ৫/ নাজিম উদ্দিন প্রকাশ বুছাইয়া (২৮) পিতা মৃত জাফর আলম, ৬/ মিজানুর রহমান (২০) পিতা আমির হোসন ৭/ শহিদুল্লাহ (২০) পিতা আবদুল মাবুদ ৮/ আবদুল মজিদ প্রকাশ বদাইয়া (৪৫) পিতা হাজী জাকের আহমদ সওদাগর সর্বসাং বড়বিল গর্জনিয়া তাদের আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ১৬/ ২০ এরই প্রেক্ষিতে রামু থানা তৎকালিন পুলিশ কর্মকর্তা এজাহার টি আমলে নিয়ে হাসান হোসেনকে উদ্ধার অভিযান চালায়। ঐদিন রাত আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে দুই সহোদর হাসান হোসাইনকে মৃত উদ্ধার করে রামু থানা পুলিশ। এই হত্যা মামলার তদন্তে চলে আসে আরো বেশ কয়েকজনের নাম। পরবর্তীতে জি.আর মামলা-১৬/২০ কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন কোর্টে চলে আসে এই মামলায় মোট পনের জনকে আসামী করে মামলা করা হয়।

এজাহার এর বাইরে মামলা তদন্তে প্রকাশ পাওয়া যায়- মোঃ ইউনুস (৩২) পিতা মৃত আঃ নবী, নোমান উদ্দিন(২৩) পিতা মৃত জাফর আহমদ, লায়লা বেগম (৩৫) স্বামী আব্দু শুক্কুর, রাশেদা বেগম (৪০) স্বামী আমীর হোসন ফাতেমা খাতুন (৫০) স্বামী মৃত মোঃ নবী, জয়নাল আবরদীন (৩২) পিতা মোজাফ্ফর আহমদ ছকিনা বেগম (২৫) স্বামী জয়নাল আবেদীন ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল বলে জানান।

এদিকে মামলার দুই বছর হয়ে গেলেও কোন ধরনের আইনী সহায়তা ও মামলার নিস্পত্তি না হওয়ায় ভয়ে দিন কাটাচ্ছে বাদি ফোরকান তিনি প্রতিবেদক কে জানান অনেক দিন হয়ে গেল মামলার কোন কোল কিনারা হলো না আসামীরা জামিনে বের হয়ে এসেছে আসমীর ও তাদের আত্নীয়রা মিলে আমাকে ও আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করবে বলে হুমকী দিচ্ছে এমন অবস্থায় আমি নিজ বাড়িতে না থেকে অন্যত্র ভাড়া বাসা নিয়ে দিন যাপন করছি ফোরকান জানান জামিনে আসা আটজন আসামী, মোবারেকা সুলতানা পুতু (১৪) পিতা নুর হোসেন রাশেদা বেগম (৪০) স্বামী আমির হোসেন লায়লা বেগম (৩৫) স্বামী আব্দুর শুক্কর, ফাতেমা বেগম (৫০) মৃত মোঃ নবী সখিনা বেগম (২৫) স্বামী জয়নাল আবেদীন মোঃ ইউনুস (৩২) পিতা আবদুল নবী নোমান উদ্দিন (২৩) পিতা মৃত জাফর আলম, জয়নাল আবেদীন (৩২) পিতা মোজাফ্ফর আহমদ সহ বাকি পলাতক যারা আছে সবাই মিলে আমাকে গ্রাম ছাড়া করেছে এলাকায় থাকলে আমাকে প্রানে মেরে ফেলবে এমন হুমকি প্রতিদিন দিয়ে আসছিল। আমি কোন উপায় না পেয়ে পার্শবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় অবস্হান করছি।

নিহত হাসান হোসেন এর বাবা ফোরকান জানান এই মামলার যারা চার্জশীটভুক্ত আসামী তারা অনেকেই পলাতক এবং মাঝে মধ্যে এলাকায় আসে বলে খবর শুনা যায়। আর যারা জামিনে এসেছে তারা আমার জীবনকে দুর্বীসহ করে তুলেছে। তারা আমার দুই সন্তানকে মেরে এখন আমাকেও মেরে ফেলার হুমকী দিচ্ছে। এমন অবস্থায় যদি বাকি আসামী যারা কারাগারে আছে তাদের যদি জামিন দেয় তা হলে তারা আমাকে ও আমার পরিবার কে শেষ করে দিবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত গত ১৯ জানুয়ারি দিবাগত রাত দেড়টার দিকে পুলিশ-জনতার উদ্ধার অভিযান চলাকালে অপহরণকারিরা রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফোরকানের বড় ছেলে মোহাম্মদ হাসান শাকিল (১০) ও মোহাম্মদ হোছাইন কাজল (৮)কে নির্মমভাবে হত্যা করে। নিহত হাসান বাইশারী শাহ নুরুদ্দিন মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণির এবং হোছাইন নারিজবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। অপহরণের পর দুই শিশুকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার ঘটনায় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ফুসে উঠেছিল গর্জনিয়াবাসী। এখনো শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কোমলমতি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিরা। সহোদর দুই শিশু হত্যাকারিদের ফাঁসি এবং শিশুদের নিরাপত্তার দাবিতে গত ২৪ জানুয়ারি গর্জনিয়ায় মানবন্ধন-সমাবেশ করেছে শত শত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এর আগে ২১ জানুয়ারি বেলা ১২টার দিকে গর্জনিয়ার বড়বিলে হাসান-হোছাইন হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে লাঠি হাতে বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী। এসময় আটককৃত ও পলাতক সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তারা।