বিদেশ ডেস্ক:
আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার আগেই আইনি জটিলতায় পড়ে গেলেন পাকিস্তানের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাওয়া শহিদ খাকান আব্বাসি। দেশটির ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (ন্যাব) দেওয়া কয়েকশ কোটি টাকার একটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই মামলার রেফারেন্স টেনে সোমবার তাকে ‘প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালনে অযোগ্য’ ঘোষণার জন্য সংবিধানে ৬২ ও ৬৩ নম্বর অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে পিটিশন দায়ের করা হয়। একই ৬২ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করেই নওয়াজকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়েছিল।
সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী শাহীদ আব্বাসি
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, আব্বাসিকে অযোগ্য ঘোষণা করতে পিটিশনটি দায়ের করা হয়েছে সিন্ধ হাইকোর্টে। জাস্টিন হেল্পলাইন নামে একটি অলাভজনক সংস্থার পক্ষ থেকে পিটিশনটি করা হয়।
২০১৫ সালে এনএবি’র দায়ের করা মামলার নথির ভিত্তিতে ডন গতকাল (৩০.০৭.২০১৭) জানিয়েছিল, আব্বাসি জ্বালানিমন্ত্রী থাকাকালে এনগ্রোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান এলেনজি টার্মিনালের সঙ্গে এলএনজি আমদানি ও বিতরণ সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়। ২০১৩ সালে সই হওয়া ওই চুক্তিকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রেগুলেটরি অথরিটি (পিপিআরএ) এর বিধি এবং এ সংক্রান্ত আইনের এর লঙ্ঘন। আব্বাসি এ মামলার মূল অভিযুক্ত। পিটিশনকারী প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের হস্তক্ষেপে আব্বাসির বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আব্বাসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তিনি কখনোই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালনে যোগ্য হতে পারেন না। পিটিশনে পাকিস্তানি সংবিধানে ৬২ ও ৬৩ নম্বর অনুচ্ছেদকে উদ্ধৃত করে আব্বাসিকে অযোগ্য ঘোষণা করতে বলা হয়। পাশাপাশি ন্যাব কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে তদন্তকাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
পাকিস্তানের ৬২(১)ধারায় বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যদেরকে প্রাজ্ঞ, ন্যায়নিষ্ঠ, চরিত্রবান এবং সৎ হতে হবে। আর ৬৩ (৭) নম্বর অনুচ্ছেদে তার নৈতিকতা সম্পন্ন হওয়ার আবশ্যিকতার বিধান রয়েছে। এই ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলে দায়মুক্ত হওয়ার পাঁচ বছর অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত আব্বাসির পাকিস্তানের সংসদ সদস্য হওয়ারই যোগ্যতা থাকবে না। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রিত্বের অযোগ্য ঘোষিত হবেন।
১৯৭৬ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে, কোনো সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা অথবা অসত্য ঘোষণার মামলা পাকিস্তানের সংবিধানের ৭৮ অনুচ্ছেদের ‘দুর্নীতি চর্চা’র আওতায় পড়ে। তবে সেই ধারা ব্যবহার না করে নওয়াজের ধারাবাহিকতায় আব্বাসির বিরুদ্ধেও ৬২ ধারা প্রয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ক্ষমতা হারানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজকে আরওপিএ-এর ৯৯(এফ) ধারা এবং পাকিস্তানের ১৯৭৩ এর সংবিধানের ৬২(১)(এফ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অসৎ সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর এর জন্য তিনি মজলিশ ই শুরা (পার্লামেন্টের) সদস্য হওয়ার অযোগ্য ঘোষিত হয়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে দলের নেতা নওয়াজ শরিফের প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানো নিয়ে চলমান সংকটের মধ্যেই নতুন এই জটিলতার মুখে পড়ল ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শহীদ খাকান আব্বাসিও নওয়াজের ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছেন কিনা, আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি নির্বাচিত হওয়ার আগে সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।