মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্

 

উনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তিত্ত্ব বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। বাংলা সাহিত্য রচনা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেয়ে বিশ্ব কবে হয়েছেন। কিন্তু একটি জাতিকে মুক্তি দিয়ে বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক এবং রাষ্ট্রনায়ক। তিনি রাজনীতির কবি। তাঁর ৭ই মার্চের (১৯৭১) ভাষণ জগত সেরা শ্রেষ্ঠতম ভাষণগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত। এ পৃথিবীতে মহান সব ব্যাক্তির জন্ম হয়েছে যুগে যুগে। তাঁরা স্ব-জাতি ও বিশ্ব মানবতাকে শোষণ-শাসনের নিপীড়ন ও যাঁতাকল হতে মুক্তি দেয়ার জন্য নানাভাবে ও নানা কৌশলে আন্দোলন-সংগ্রাম করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। আর তিনি একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েই হাল ছেড়ে দেন নি, শুভ সূচনা করে দিয়েছেন একটি নবীন ও আধুনিক বাংলাদেশের। তিনি আজীবন সংগ্রামী, জাতির মুক্তিদাতা ও চির তরুণ। তাঁর পুরো জীবনের চিন্তা-ভাবনা এবং অবদানসমূহ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, তিনি আমৃত্যু ছিলেন টগবগে তারুণ্যের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় প্রতীক। তাঁর সম্পর্কে আমরা যা জেনেছি, তা এখনো অসম্পূর্ণ বলা যায়। তাঁকে বুঝতে হলে তাঁর সবকিছু জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু জন্মের পর হতে একটি মুহুর্তও অপচয় করেন নি, প্রতিটি দিন-রাত-মুহুর্ত তিনি বিসর্জন দিয়ে গেছেন আমাদের জন্য ভেবে ভেবে ও কাজ করতে করতে। যাহোক, আজকের নিবন্ধে তরুণদের জন্য বঙ্গবন্ধু কেন অপরিহার্য তা তুলে ধরার প্রয়াস চালাব।

শৈশব ও পড়াশোনা:

শেখ মুজিবুর রহমান ১০২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম  শেখ লুৎফর রহমান ও মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। বঙ্গবন্ধুর বাবা ছিলেন আদালতের সেরেস্তাদার।                                                                                                                                                          চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তাঁর বড় বোন ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী; তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন যখন, তার বয়সছিল সাত বছর। তখন তিনি খোকা নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। নয় বছর বয়সে ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি করানো হয় বঙ্গবন্ধুকে। তিনি ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত এখানে পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন, তিনি। ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনিবিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেন নি, শেখ মুজিব। কারণ তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল এবং এ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল। পরে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। অত:পর তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ হতে এইচএসসি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন আইন বিষয়ে।

রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা হিসেবে শেখ মুজিব:

শৈশবেই শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্ব দেয়া শুরু করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় তিনি এলাকার মানুষ এবং বিদ্যালয়ের সহপাঠী শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা সমাধানে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দেন। এসময় তিনি আবুল কাশেম ফজলুল হকসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের নিকট স্থানীয় সমস্যা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্যাবলি সমাধানে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে হাজির হতেন। তাঁর আত্নজীবনী পড়ে আমরা তাঁর কলাকাতায় কলেজ ছাত্র জীবনের সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে পারি। বিশেষত: ১৯৪৭ সালে ভারত-পাক্স্তিান বিভক্তির সময় কলকাতার দাঙ্গায় হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য তাঁর স্ব-শরীরে সক্রিয় অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তখনকার নেতৃতবৃন্দ যেমন-শহীদ সেহরাওয়ার্দীসহ অন্যান্যদের সাথে একজন ছাত্র নেতা শেখ মুজিবুর রহমান দাঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন, তা অনেক বড় মাপের নেতারাও তখন গা ভাসিয়ে দিয়ে এড়িয়ে গেছেন। একজন তরুণের মধ্যে এ ধরণের গুণাবলি খুব কমই দেখা যায়। সেই যে শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানে সামনে এগিয়ে যেতে শিখেছেন, তাঁর জীবনে আমৃত্যু অব্যাহত ছিল, তা। তাঁকে মারতে আসা ঘাতকদের মুখোমুখি হয়েই নির্ভীক শেখ মুজিব কুখ্যাত মেজর নূর-হুদাদের হুক্কার দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘তোমাদেরকে স্বাধীন বাংলাদেশের সেনা অফিসার করলাম; আর তোমরা আমাকে খুন করবে?” বিশ্বাস ঘাতকদের বুলেট তাঁকে রক্ষা না করে তাঁর বুক ঝাজরা করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর তারুণ্য ঘাতকের গুলি থামাতে না পারলেও, তিনি নিরস্ত্র অবস্থায় সাহসী তারুণ্যেরই বহি:প্রকাশ ঘটান মৃত্যুরে মুখেও। যাহোক, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাক্স্তিান দু‘টি দেশ আলাদা হয়ে গেল। তিনি ফিরে এলেন, দেশ-মাতৃকার টানে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে। নেমে পড়লেন, বাঙ্গালী জাতির জন্য কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। বৃটিশ রাজের বিরুদ্ধে সেই শৈশবকাল হতে লড়াই করতে করতে তিনি তারুণ্যের প্রথম ভাগে পেলেন পাকিস্তান নামে আরেক দানবীয় রাষ্ট্র। আস্তে আস্তে তরুণ শেখ মুজিব বুঝতে পারলেন, পশ্চিম পাকিস্তনীরা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদেরকে কোনভাবেই তাঁদের মর্যাদা দেবে না। দেবে না মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা, দেবে না ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষার সুযোগ, রাষ্ট্রীয় সমানাধিকার, মৌলিক অধিকারসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কিছুই। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাক স্বাধীনতা, চাকুরিসহ রাস্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানীরা ঝেঁকে বসতে শুরু করেছে। এরিমধ্যে রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম সর্বত্র সুপরিচিত হয়ে পড়ে। প্রথমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারি ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্নতা প্রকাশ করতে গিয়ে শেখ মুজিব সেখান হতে বহিস্কৃত হলেন। অত:পর শুরু হলো ভাষা আন্দোলন, বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। পুরো পূর্ব পাকিস্তান তুলপাড় হয়ে গেল। শুরু হয়ে গেল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। আর ভাষা আন্দোলন পথ দেখিয়ে দিল বাঙ্গালীর স্বাধিকার সংগ্রামের। শেখ মুজিবের নেতৃত্ব সবখানে, সবার মুখে মুখে মুজিব ভাই। তাঁর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ হয়ে দাঁড়াল বাঙ্গালীর প্রাণের সংগঠন। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতৃবৃন্দ যেমন-মাওলানা ভাসানী, শহীদ সোহরা ওয়ার্দী, শামসুল হকসহ অনেকেই ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং তৎপরবর্তী সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা জেনারেলদের দাবার ঘুঁটি চালাচলিতে হারিয়ে যেতে বসেছিলেন, তখন। কিন্তু বাঙ্গালীর আশা-ভরসার প্রতীক ও আধার হয়ে রইলেন; শেখ মুজিবুর রহমান। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ ও বাঙ্গালী জাতির আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়লেন, তিনি। জেনারেল ইস্কান্দর মীর্জা, ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান, জেনারেল ইয়াহিয়া খান প্রমুখ পাকি সামরিক শাসন শেখ মুজিবকে দাবিয়ে রাখার জন্য ষড়যন্ত্রের নানা জাল বুনলেন। শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে খাড়া করা হলো আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। এর মধ্যে তাঁকে কয়বার যে জেলে ঢুকানো হলো, ভয় দেখানো হলো, মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হলো তার কোন ইয়ত্তা নেই। বার বার সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আসছিলেন, শেখ মুজিব। তাঁর দল আওয়ামী লীগ এবং এর নেতা-কর্মীদের কতবার যে ভাঙ্গন এবং দলন-পীড়নের মুখোমুখি হতে হয়েছে, তারও হিসেব বের করা মুশকিল। পাকিস্তানী সেনা শাসকদের সকল বাধা-বিপত্তি, দলন-পীড়ন, নির্যাতন-নিস্পেশন ডিঙ্গিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন করলেন। মোকাবেলা করলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমান গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেন, বাংলায়। তিনি পরিণত হলেন, শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধুতে। অবশেষে পাক সেনা শাসকরা জাতীয় নির্বাচন দিতে বাধ্য হলেন। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সারা পাকিস্তানে ন্যশনাল এসম্বলীর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের তৎকালিন সেনা শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া থান শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করে টালবাহনা শুরু করল। ন্যাশনাল এসেম্বলীর অধিবেশন ডেকেও তা স্থগিত ঘোষণা করা হলো। অবশেষে শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চ/১৯৭১ রেসকোর্সের ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক বজ্রকণ্ঠের ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা দিলেন। ‘–এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে পাক বাহিনী গণহত্যা শুরু করলো। এবার বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। ৯মাস ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলল। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর/১৯৭১ সালে বাঙ্গালী জাতি পেল, স্বাধীন বাংলাদেশ। এবার শুরু হলো চির তরুণ বঙ্গবন্ধুর দেশ গঠনের পালা।

রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু ও আধুনিক বাংলাদেশের শুভ যাত্রা:

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরে এসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখতে পেলেন, বাংলাদেশ নামের ভূখন্ডটিকে পাক হানাদাররা তছনচ করে ফেলেছে, ধ্বংস করে দিয়েছে। খুন করেছে ৩০ লাখ মানুষকে, কেড়ে নিয়েছে হাজার মা-বোনের ইজ্জত-সম্মান। এ করুণ পরিস্থিতি দেখে ও ঘটনার বিবরণ শুনে বঙ্গবন্ধু কেঁদে ফেললেন, কিন্তু ভেঙ্গে পড়লেন না। তিনি দায়িত্ব নিলেন বাংলাদেশ নামক একটি নবজাতক শিশুর। দেশমাতৃকাকে তিনি সোনার বাংলা গড়ার ঘোষণা দিলেন। শুরু করে দিলেন আধুনিক বাংলাদেশ ও পৃথিবীর বুকে বাঙ্গালীকে একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাজ। তিনি অতি দ্রুত যে কাজগুলো সেরে নিলেন, তা অভাবনীয়। এ পর্যন্ত এমন কোন কাজ ।ন্য কেহ করতে সক্ষম হন নি, তাঁর করা জিনিষগুলো নেড়ে-ছেড়ে দেশ চালিয়েছেন। সংক্ষেপে নিন্মে শেখ মুজিবুর রহমান কতৃক একটি নবীণ দেশের জন্য যা যা করেছেন, তা এখানে তুলে ধরা হলো।

-প্রথমেই তিনি  জাতীয় ঐক্য, সংহতি ও শৃংখলা  প্রতিষ্ঠা করলেন দেশে।

-বাংলাদেশকে  জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক  সংস্থার সদস্যভুক্ত করলেন।

-অর্থনীতিকে  সঠিক পথে পরিচালিত করার  জন্য দেশের সেরা ও মেধাবী অর্থনীতিবিদদের দিয়ে পরিকল্পনা দলিল তৈরি করলেন এবং পাঁচশালা পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন।

-পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম  একটি সংবিধান প্রণয়ন  এবং তা দেশ পরিচালনায়  পাথেয়  হিসেবে গণপরিষদে  অনুমোদন করে কার্যকর  করলেন।

-দেশের সকল  শিল্প-কারখানাকে জাতীয়করণ  করলেন।

-সকল প্রাথমিক  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং  এতে কর্মরত সকল শিক্ষককে  জাতীয়করণ করলেন।

-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে  বরেণ্য শিক্ষাবিদগণকে উপাচার্য নিয়োগ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারি করলেন।

-স্বাধীন বাংলাদেশের  সেনাবাহিনী গঠন করেন।

-আইন-শৃংখলা্  বাহিনীকে শক্তিশালী করার  উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

-প্রজাতন্ত্রের  নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ  ও বিচার বিভাগকে সুসংগঠিত  করে রাষ্ট্রের অপরিহার্য অঙ্গগুলোকে সচল ও গতিশীল করার ব্যবস্থা করেন।

-গণ-

পরিষদের নিয়মিত অধিবেশন পরিচালনা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের উপযোগি আইন-প্রণয়ন করলেন।

-আন্তর্জাতিক  ও কূটনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে  মর্যাদাশীল আসনে অধিষ্ঠিত  করেন।

-জাতীয় শিক্ষা  নীতি প্রণয়ন করে শিক্ষা  ব্যবস্থাকে একটি সুদূর  প্রসারী এবং উন্নত রূপ  দেয়ার শুভ সূচনা ঘটান।

-ইসলামী ইতিহাস-ঐতিহ্য  এবং নৈতিক ও ধর্মীয়  শিক্ষার প্রসার ও চর্চার  জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা  বোর্ড গঠন এবং ইসলামী  ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।

-মুসলিম দেশগুলোর  সাথে ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্ক  জোরদার করার লক্ষ্যে  উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং  বাংলাদেশকে ইসলামী সম্মেলন  সংস্থা (ওআইসি)-এর সদস্যভুক্ত  করেন।

-বাংলাদেশেকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক কৃষি নীতি বা চাষাবাদ ব্যবস্থা চালু করেন।

-আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান  চর্চা এবং বিকাশের জন্য  বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান  স্থাপন করেন।

-একটি রাষ্ট্রের  জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রতিষ্ঠান  প্রতিষ্ঠা ও প্রাতিষ্ঠানিকতাকে  শক্তিশালী করার উদ্যোগ  গ্রহণ করেন।

-স্বাধীন-সার্বভৌম  রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ  যাতে বিশ্ব দরবারে মাথা  উঁচু করে দাঁড়াতে পারে  এবং জাতি হিসেবে বাঙ্গালীকে আত্ন মর্যাদাশীল করার জন্য জাতির জনক আমৃত্যু লড়ে গেছেন।

রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে সোনার বাংলা এবং এর প্রত্যেক নাগরিককে তিনি সোনার মানুষ বানাতে চেয়েছিলেন। আর রুশ-মার্কিন দুই পরাশক্তির করাল গ্রাস হতে রক্ষা করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে তিনি এশিয়ার সুইজারল্যান্ডে পরিণত করার স্বপ্ন দেখতেন। আর এ দুটি লক্ষ্যার্জনে বঙ্গবন্ধু উপরোক্ত পদক্ষেপসমূসহ একটি নবীন দেশকে ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে তুলে স্বাবলম্বী ও স্বনির্ভর দেশে রূপান্তরিত করতে স্বল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু করেছিলেন। আর স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি প্রেম-ভালবাসা তাঁকে করুণ মৃত্যুর দিকে নিয়ে গেল। দেশি-বিদেশী ষড়যন্তকারি ও বিশ্বাসঘাতকরা  তাঁকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের আঁধারে স্বপরিবারে নির্মম এবং নিষ্ঠুরভাবে খুন করল।

বঙ্গবন্ধু ও আজকের তরুণ সমাজ:

আমরা এমন এক দুর্ভাগা জাতি যে, যে মানুষ আমাদের জন্য সারা জীবন জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করে সংগ্রাম-লড়াই করে একটি স্বাধীন দেশ ও বাঙ্গালীর জাতি পরিচয় এনে দিলেন তাঁকেই আমরা খুন করলাম। ১৯৭৫ সালের পর মিথ্যা, অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা এত বেশি তীব্রভাবে চালানো হয়েছে যে, সুদীর্ঘ ২১ বছর তাঁর নামটা পর্যন্ত রাষ্ট্রযন্ত্র উচ্চারণ করতে দেয় নি। তাঁর সুযোগ্য কন্যা ও জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনিও জীবনবাজি রেখে অনেকবার মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েও, দেশের হাল ধরে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে  সুউচ্চ মর্যাদায় সমাসীন করতে সক্ষম হয়েছেন। জাতির পিতা বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়ে যান। আর এ দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পানে নিয়ে গেলেন, তাঁর সুযোগ্য কন্যা। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে তিনি ২০০৯ সালের প্রথমার্ধে সরকার গঠন করে দেশকে সুখী, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের সোপানে উঠিয়ে দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আর তাঁর সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আজকের তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশকে তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করে সামগ্রিকভাবে উন্নত দেশগুলোর সমান কাতারে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর মধ্যে আমি বঙ্গবন্ধুর তরুণ বয়সের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। আজকের যুগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে দেশের জন্য সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতই অবদান রাখতেন। আমরা চল্লিশ, পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকের প্রথমার্ধে বঙ্গবন্ধুর জীবনটাকে আমরা যেমন দেখতে পাই, সজীব ওয়াজেদ জয়ও সকল বাধা-বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আমাদেরকে। আমরা জয়ের শিক্ষা জীবন এবং যোগ্যতাসমূহের দিকে এক পলক থাকাতে পারি:

-তিনি মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত  হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়  হতে লোক প্রশাসন ও রাষ্ট্র  পরিচালনা বিষয়ে সর্বোচ্চ  ডিগ্রী অর্জন করেন।

-তিনি প্রথমে  ভারতে ও পরে আমেরিকায়  পড়াশোনা করেন।

-তিনি কম্পিউটার  বিজ্ঞান এবং তথ্য-প্রযুক্তি  বিষয়ে উঁচু মাপের একজন  বিশেষজ্ঞ।

-জনাব সজীব  ওয়াজেদ জয় শৈশব কাল  হতেই বঙ্গবন্ধু পরিবারের  সদস্য হিসেবে রাষ্ট্র  পরিচালনা এবং রাজনৈতিক  বিষয়াবলি নিবীড়ভাবে পর্যবেক্ষণ  করে আসছেন।

-তাঁর বাবা  মরহুম আব্দুল ওয়াজেদ  মিয়াও ছিলেন একজন বড়  মাপের পদার্থ বিজ্ঞানী ও পরমাণু বিজ্ঞানী।

-তাঁর নানা  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তাঁর মা বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্র নায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তরুণ বয়সে বঙ্গবন্ধু:

-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে  পড়ার সময় হতে এলাকাবাসী  ও সহপাঠীদের দাবি-দাওয়া  আদায়ে নেতৃত্ব দেন।

-মাধ্যমিক স্তরে  পড়াশোনা করার সময় সক্রিয়  রাজনৈতিক কর্মী এবং রাজনৈতিক  নেতৃত্ব দেন।

-কলেজ জীবনে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন এবং কলকাতার হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা চলাকালে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সরাসরি ভূমিকা পালন।

-পরে বাঙ্গালী  জাতিসত্তার পরিচয় প্রতিষ্ঠা, বাংলা ভাষার মর্যাদা  প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন  বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।

আজকের তরুণদের সামনে দুই প্রজন্মের শেখ মুজিবকে তুলে ধরার প্রয়াস চালালাম, আমি এ নিবন্ধে। একজন পুরো তরণ বয়স কাটিয়েছেন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি ও দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য। আর তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মান্যবর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশকে তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর জীবনের চির তারুণ্যের এবং চূড়ান্ত লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত অবিচল থাকার আদর্শ অনুসরণ করতে পারেন।

উপসংহার: বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী; এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি পুরো জীবন জাতি ও দেশের জন্য শুধু উৎসর্গই করে গেছেন। নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য বলতে গেলে তেমন কিছুই করেন নি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তিনি মানুষের ভালবাসা পেয়েছেন অকাতরে, চিরদিন পেতে থাকবেন তা। পুরো বাঙ্গালী জাতি তাঁর নিকট কৃতজ্ঞ। তাঁর সুযোগ্য কন্যা ও জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী। সীমিত সম্পদ, অথচ ১৭ কোটি মানুষের এ দেশকে এগিয়ে নিতে তিনি রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য পুত্র ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তথ্য-প্রযুক্তি খাতকে সমৃদ্ধ করে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। বলা যায়, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যই বাংলাদেশের জন্য অবদান রেখেছেন এবং রেখে চলেছেন। তাঁদের সবার ত্যাগ-তীতিক্ষায় আজকের বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি। মানুষকে ভালবাসা এবং তাদের জন্য কিছু করাই ছিল জাতির জনকের জীবনের ব্রত। আজকের তারুণ্য তাঁর জীবন হতে এ শিক্ষাটি গ্রহণ করতে পারে। আগস্ট/২০১৭ মাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত দিবসের মাস। এ মাসে আমরা সবাই তাঁর আত্নার মাগফেরাত কামনা করব।

-মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্, সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার, মহেশখালী, কক্সবাজার।