শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট
শাহেদ মিজান, সিবিএন:
কক্সবাজার শহরতলীর শিল্প এলাকা লিংক রোড বিসিকে ‘কুলিয়ারচর সী-ফুডস’ নামে একটি চিংড়ি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরিতে বিনা নোটিশে হঠাৎ করে শ্রমিক ছাটাই করেছে। একই সাথে অবশিষ্ট শ্রমিকদের দৈনিক ৮ ঘন্টার বদলে ১২ ঘন্টা কর্মসময় চাপিয়ে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে ওই ফ্যাক্টরির শ্রমিকেরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সোমবার প্রথমদিন ধর্মঘট পালন করেছে শ্রমিকেরা। এই কারণে পুরো বিসিক এলাকায় তোলপাড় চলছে এবং সবার মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, তারা দীর্ঘ দিন ধরে বিসিকে ‘কুলিয়ারচর সী-ফুডস’ নামে একটি চিংড়ি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক হিসেবে মাসিক ভিত্তিতে কাজ করে আসছিলেন। অধিকাংশ নারীসহ ১৫০ জন শ্রমিক রাত দিন তিন শিফটে কাজ করেন। সবার বেতন ৪৪২০ টাকা। কর্মসময় ছিলো ৮ ঘণ্টা। কিন্ত হঠাৎ করে ২৬ জুলাই ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ নাম ঘোষণা করে জানিয়ে দেয় ৪০জন শ্রমিককে ছাটাই করা হয়েছে। একই সাথে অবশিষ্ট যারা থাকবে তাদেরকে ৮ ঘণ্টার স্থলে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। হঠাৎ এমন অন্যায্য ঘোষণায় অসহায় শ্রমিকদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। একদিকে দীর্ঘদিনের চাকরি হারানো ভয়ে ছাটাই হওয়ারা অন্যদিকে ১২ ঘণ্টার ভয়ে অন্যরাও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শ্রমিকেরা কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুনয়-বিনয় করেছেন। চাকরি হারালে এবং ১২ ঘন্টা কাজ করলে তারা মানতে পারবেন না। তারপরও কর্তৃপক্ষের মন গলেনি। শেষে তারা বাধ্য হয়ে ধর্মঘটের নেমেছেন। শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে ফ্যাক্টরির কাজ বন্ধ রয়েছে। শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি কর্তৃপক্ষ মনগড়াভাবে এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন।
জানা গেছে, ‘কুলিয়ারচর সী-ফুডস’ ফ্যাক্টরিতে কাজ করার অধিকাংশ শ্রমিকই অসহায় শ্রেণির। তার মধ্যে অধিকাংশই নারী। এসব নারীদের অধিকাংশ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা। রয়েছে পিতৃ-মাতৃহীন নারীও। হঠাৎ করে চাকরি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়া তারা সবাই দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন। গতকালও ধর্মঘট পালনকালে অনেকে নারী ডুকরে কেঁদেছেন। তাপরও কর্তৃপক্ষের মন গলেনি।
শ্রমিকেরা এই প্রতিবেদককে জানান, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ে ৪৪২০ টাকা তেমন টাকা না। তারপরও অভাবের তাড়নায় তারা চাকরি করছেন। এই অল্প টাকা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’মুখো অন্ন যোগাচ্ছেন। তারপরও অনেক সময় অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয়। তারপরও পেটের দায়ে এই অল্প বেতনের চাকরি আঁকড়ে রয়েছেন তারা।
শ্রমিক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ধর্মঘটের চাপে কর্মঘন্টা আবার ৮ ঘন্টা করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ বলাবলি করছে। তবে ছাটাই করা কর্মীদের ফিরিয়ে নিবে না সাফ জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমরা তা মানবো না। কারণ আমরা দীর্ঘদিন অতি কষ্ট সহ্য করে কাজ করে এসেছি। ছাটাইটা আমরা মানবো না। কারণ এটা অন্যন্ত অন্যায় এবং জুলুম। ছাটাই হওয়া শ্রমিদের না খেয়ে থাকতে হবে। তাই কাজ করলে সবাই এক সাথে করবো। তা না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘কুলিয়ারচর সী-ফুডস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিছুর রহমান কর্মঘন্টা ১২ ঘন্টা করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। তবে কর্মী ছাটাই করা হয়েছে। ছাটাইয়ে আইন মানা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কোনো জবাব দেননি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।