ইমাম খাইর, সিবিএন:
দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বাস্তবায়নাধীন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ২৩ কোটি টাকা দূর্নীতির অভিযোগে কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জাফর আলমকে ফের কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
সোমবার বেলা পৌনে ১ টার দিকে এ আদেশ দেন কক্সবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ তৌফিক আজিজ।
কক্সবাজারে নিয়োজিত দুদকের পিপি অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম কক্সবাজার নিউজ ডট কম (সিবিএন)কে জানান, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিংড়ি খাতের ক্ষতিপূরণ প্রকল্পে ভূঁয়া লোকজনের নামে প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের মামলায় হাইকোর্ট জাফর আলমকে জামিন দিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার জামিন বাতিল করে নিম্ন আদালতে আত্নসমর্পনের আদেশ দেয়।
১০ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ এডিসি জাফর আলমকে নিম্ন আদালতে আত্নসমর্পনের আদেশ দেয়। একই মামলায় সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিনের জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠায়।
উচ্চআদালতের নির্দেশে নিম্নআদালতে আত্নসমর্পন করে জামিন প্রার্থনা করলে আবেদন নামঞ্জুর করে এডিসি জাফরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের ২০ কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগে তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলমসহ ৩৬ জনের নামে মামলা করেন কক্সবাজারের সাবেক ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান। মামলা নং- জিআর-১০৪০/২০১৪। ৩ জুলাই কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন দুদকে তদন্ত কর্মকর্তা ছৈয়দ আহমেদ রাসেল।
স্পেশাল আদালতের এ মামলায় (মামলা নং- স্পেশাল ১২/২০১৭) গত ৮ মে ঢাকার সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে এডিসি জাফর আলমকে গ্রেফতার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ মামলায় উচ্চআদালত থেকে ৬ মাসের জামিন লাভ করেন তিনি। পরে দুদকের আপিলের কারণে ১০ জুলাই জামিন বাতিল করে নিম্নআদালতে আত্নসমর্পনের আদেশ দেয় আদালত।
এ মামলায় গত ৩ এপ্রিল দুদক টিম কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার সাবেক উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, অ্যাডভোকেট নুর মোহাম্মদ সিকদার ও কক্সবাজারের সাবেক সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে।
মামলার নথি সুত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির বিপরীতে ভুয়া মালিকানা তৈরি করে ক্ষতিপূরণের প্রায় ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযেগে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সার্ভেয়ার কানুনগোসহ ১৩ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ২৩ জন স্থানীয় বাসিন্দাসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে দুদক।
মহেশখালীর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় অধিগ্রহণ করা জমির বিপরীতে ২৩৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়। এর মাঝে ২৫টি অস্তিত্বহীন চিংড়ি ঘের দেখিয়ে ৪৬ কোটি ২৪ লাখ ৩ হাজার ৩২০ টাকা ক্ষতিপূরণ নিজেদের করায়ত্তে নেয় কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখার উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদারের নেতৃত্বে ৩৬ জনের একটি সিন্ডিকেট।
এ থেকে কৌশলে তারা ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা তুলে নেয়। বাকি টাকার জন্য ইস্যু করা হয়েছিল আরও পাঁচটি চেক। তবে অভিযোগ উঠার পর পাঁচটি চেকের আওতায় নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা আটকে দেয়া হয়।
সুত্র জানায়, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।
এতে জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকা ২৮ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে ৭ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। বাকি তিন হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড যোগান দেবে।